আদালতের নিষেধাজ্ঞা: আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে ভবন নির্মাণের অভিযোগ

প্রকাশ | ০৪ মার্চ ২০১৯, ১৮:৫৬

ভোলা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে বহুতল ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি পৌরসভা থেকে ভবন নির্মাণের জন্য কোনো নকশা ও অনুমোদন নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

বহুতল ভবনটি নির্মাণ হচ্ছে চরফ্যাশন পৌরসভার প্রাণকেন্দ্র চরফ্যাশন বাজারে।

এই জমি নিয়ে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি দেলোয়ার হোসেনসহ ২৮ জন জমির প্রকৃত মালিক মহব্বত আলী বেপারীর ওয়ারিশ (নাতি-নাতনি) আদালতে মামলা করেন। মামলার আলোকে আদালত জমির ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

চরফ্যাশন পৌরসভার মেয়র বাদল কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, ‘ভবনটি নির্মাণের জন্য আবেদন করেছেন চরফ্যাশন উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম নান্নু। কিন্তু ভবনের নকশার এখনও অনুমোদন হয়নি। অনুমোদন ছাড়াই কেনো ভবন নির্মাণ করছেন- তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

মামলার এজাহার, জমির দলিল ও মৌখিক অভিযোগে জানা গেছে, ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার জিন্নাগড় মৌজার (চরফ্যাশন বাজার) ৫৫১ নম্বর খতিয়ানের ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ জমি ১৯৪৮-৫৯ সালে ভূমি অফিস উপজেলার উত্তর মাদ্রাজ গ্রামের বাসিন্দা মোহাব্বত আলী বেপারীকে বন্দোবস্ত দেয়। জমিটি চরফ্যাশন বাজারের চান্দিনা ভিটা। বর্তমান মূল্য কমপক্ষে দেড় কোটি টাকা। ওই জমিতে ঘর তুলে মোহাব্বত আলী বেপারী চুক্তিপত্র ছাড়াই মতিউর রহমান দফাদারকে ভাড়া দেন। হঠাৎ ১৯৫৪ সালে মোহাব্বাত আলী বেপারী মারা যান। পরবর্তীতে স্বাধীনতাযুদ্ধে রাজাকার হিসাবে চিহ্নিত মতিউর রহমান দফাদার মারা গেলে দোকান পরিচালনা করেন তার ছেলে আবু তাহের। আবু তাহেরের কাছ থেকে দোকানের মালিকানা পরিবর্তন হয়ে মালিক হন বর্তমান চরফ্যাশন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম। এরপর থেকে মোহাব্বত আলী বেপারীর ওয়ারিশরা দোকানের জায়গা দাবি করলে তাদের কিছুদিন ভাড়া দিয়ে আসলেও এক সময় ভাড়া দেয়া বন্ধ করে দেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিবাদ চলমান ছিল। সম্প্রতি ওই জমিতে নুরুল ইসলাম আশপাশের দোকান মালিকদের নিয়ে বহুতল পাকা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এ ঘটনায় বাদীপক্ষ চরফ্যাশন সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে নির্মাণ কাজের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করেন। আদালত গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ওই জমির উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা করে। কিন্তু নুরুল ইসলাম আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নির্মাণ কাজ  চালিয়ে যাচ্ছেন।

বাদীপক্ষ আরও বলেন, ‘আদালতের নিষেধাজ্ঞার কাগজ চরফ্যাশন থানা পুলিশকে দেখালে পুলিশ গত বৃহস্পতিবার নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। কিন্তু পরের দিন নুরুল ইসলাম নান্নু ক্ষমতার প্রভাবে আবারও কাজ চালু করেন।’

চরফ্যাশন উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম নান্নু মিয়া বলেন, ‘৫০ বছর ধরে এ জমি আমার দখলে। হঠাৎ করে আমাকে অযথা ভোগান্তির মধ্যে ফেলার জন্য ফারুক বেপারী আদালতে মামলা করেছে। রবিবার আদালতে শুনানি হয়েছে। আদালত স্থিতাদেশ দিয়েছে কিনা জানি না। আমি ১৯৭৫ সাল থেকে এ জমির দখলে আছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘জমিটি আমি ১০-১২ দিন আগে কাজ শুরু করেছি। জমির মালিক মহব্বত আলী বেপারী জনৈক আবু তাহের পক্ষের নিকট ১৯৫৫ সালে বিক্রি করেছেন। আমি আবু তাহেরের ছেলে জাকির হোসেন ও স্ত্রী বিবি তহুরা বেগমের নিকট সাড়ে ৮৪ সহস্রাংশ জমি কিনেছি। এ দাগে আরও ৭২ সহস্রাংশ জমি বাকি আছে। সে জমি যাদের দখলে আছে, তাদের নামে কোনো মামলা হয়নি বা তাদের বিবাদী করেনি। এসময় তিনি মোহব্বত আলী বেপারী আবু তাহেরের নিকট এ জমি বিক্রি করছে বলে একটি দলিলের ডুপ্লিকেট কপি দেখায়। কিন্তু কিনেছেন এরকম কোনো দলিল দেখাতে পারেননি।’

আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করিনি। এ ভবনের কাজ শুরু হয়েছে গত ২১ ফেব্রুয়ারি। এ জমিতে আমরা এক সঙ্গে পাঁচজন ভবন তুলছি। তবে আমি ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালতের একটি কাগজ পেয়েছি।’

(ঢাকাটাইমস/৪মার্চ/এলএ)