পেঁয়াজের বীজে ভাগ্যবদল

বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও
 | প্রকাশিত : ০৫ মার্চ ২০১৯, ০৮:৪২

নিজের সামান্য জমিতে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করে ভাগ্য ফিরিয়েছেন প্রান্তিক চাষি দবিরুল ইসলাম। পরিবারের সবাই মিলে কাজ করে দারিদ্র্য ঠেলে স্বচ্ছলতার পথে হাঁটছেন তিনি।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের ঠুমনিয়া গ্রামের প্রয়াত আব্দুলের ছেলে দবিরুল ইসলাম বলেন, ‘জায়গা-জমি বেশি না থাকায় সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত। চার বছর আগে পেঁয়াজের বীজ সরবরাহকারী রাজশাহীর একটি প্রতিষ্ঠান বীজ উৎপাদনের প্রস্তাব দেয়। কিভাবে পেঁয়াজের চাষ করে বীজ পেতে পারি, সে পরামর্শও পাই তাদের কাছ থেকে। এরপর সামান্য পুঁজি নিয়ে বাড়ির পাশে নিজের ৪২ শতক জমিতে চাষাবাদ ও পেঁয়াজের বীজ সংগ্রহ শুরু করি। প্রথম বছরেই উৎপাদিত বীজ বিক্রি করে খরচের প্রায় তিনগুণ লাভবান হই। এরপর থেকে প্রতিবারই একই পরিমাণে লাভের মুখ দেখায় এখন আর অভাব-অনটন নেই।’

রাজশাহীর ওই কোম্পানির সঙ্গেই চুক্তি রয়েছে দবিরুল ইসলামের। তারাই বীজ সরবরাহ করে এবং উৎপাদিত পেঁয়াজের বীজ কিনে নেয়। প্রথম বছরে প্রতি মণ বীজের মূল্য এক হাজার টাকা দিলেও গত দুই বছর ধরে দিচ্ছে ৮০০ টাকা হারে।

দবিরুল বলেন, ‘আমি ও আমার স্ত্রী-দুই সন্তান মিলে ক্ষেতে পরিশ্রম করি। জমিতে চাষাবাদ করে চার প্রয়োগের পর অগ্রহায়ণ মাসের শেষের দিকে শুরু করে পৌষ মাসের এক সপ্তাহের মধ্যে জমিতে কোম্পানির দেওয়া বীজ রোপন করি। বীজ থেকে পেঁয়াজের গাছ বের হলে শুরু হয় পরিচর্যা। শীতে তেমন কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই। সাড়ে তিন মাসের মধ্যে পেঁয়াজের ফুল বের হওয়া শুরু করে। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এ ফুলে হাত বুলিয়ে হলুদ রঙের ফুল ঝরিয়ে দিলে ফলন ১০ শতাংশ বেড়ে যায়।’

সফল এই চাষি জানান, ৪২ শতক জমিতে পেঁয়াজ ও বীজ উৎপাদনে খরচ হয় ২৫-৩০ হাজার টাকা। বৈরী আবহাওয়ায় কোনো ক্ষতি না হলে বিক্রি হয় ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। যা খরচের চেয়ে তিনগুণ।’

দবিরুলের স্ত্রী মরিয়ম বেগম জানান, চার বছরের মধ্যে স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তর থেকে কোনো সহায়তা পাননি তারা। সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা পেলে বাণিজ্যিকভাবে বৃহৎ পরিসরে পেঁয়াজ ও বীজ উৎপাদন সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।

দবিরুলের সফলতা দেখে এ বীজ আবাদে এগিয়ে আসতে চান ওই এলাকার অন্য কৃষকরাও। তারাও আশাবাদী, স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তর পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও সহায়তা করলে এই এলাকায় পেঁয়াজ ও বীজ উৎপাদন বাড়বে, দেশের কৃষি উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ধনতলা ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হেনরী বলেন, কৃষক দবিরুল পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে কোনো সহযোগিতা চাননি।

পাড়িয়া ইউয়িনের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আতাউর রহমান জানান, তার ইউনিয়নের এক কিলোমিটার পশ্চিমে এক একর জমিতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় প্রথমবারের মতো বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ এবং বাজারজাতকরণে প্রদর্শনী করা হয়েছে। এই প্রদর্শনীর দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন কৃষক সফিকুল ইসলাম ও সিরাজুল ইসলাম।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাফিয়ার রহমান জানান, দবিরুল ইসলাম চাইলে কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করতে পারেন। এজন্য উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ থেকে বাজারজাত করা পর্যন্ত পরামর্শের পাশাপাশি সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

(ঢাকাটাইমস/০৫মার্চ/প্রতিবেদক/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :