চাঁদেও চাষাবাদ সম্ভব!

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ০৫ মার্চ ২০১৯, ১৫:১৬

মহাকাশে অথবা চাঁদ ও মঙ্গলগ্রহে যাতে মানুষ বসবাস করতে পারে তা নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা এবং সেখানে মানুষের বসবাস সম্ভব হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তারা। এক্ষেত্রে সেখানে দীর্ঘকাল থাকতে হলে খাদ্যের জোগান একটা সমস্যা হতে পারে৷ কিন্তু বিশেষ ধরনের এক কৃষি পদ্ধতি কঠিন পরিস্থিতিতেও তাজা ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যের ব্যবস্থা করা সম্ভব।

হাইড্রোপনিক্স সম্পর্কে মহাকাশ গবেষকদের আগ্রহের একটা বিশেষ কারণ রয়েছে৷ অত্যন্ত কম উপাদান ব্যবহার করে কৃষিকাজের এরকম বাস্তবসম্মত পদ্ধতির জুড়ি মেলা ভার৷ এক্ষেত্রে গাছের শিকড় শূন্যে ঝোলে৷ শুধু চারাগাছগুলিকে ধরে রাখতে গবেষকদের এক কাঠামো সৃষ্টি করতে হয়েছে৷

গবেষণাগারে সবকিছু গাছের আদর্শ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে৷ এমনকি আলোর রংও চারাগাছের বৃদ্ধির জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত৷ শিকড় মাটি থেকে পুষ্টি ও পানি গ্রহণ করতে পারে না৷ তার বদলে প্রতি মিনিটে একবার করে পানি স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্প্রে করা হয়৷ ফলে প্রচলিত কৃষিপদ্ধতির তুলনায় ৯০ শতাংশেরও বেশি পানি ও সারের সাশ্রয় ঘটে৷

কোনোকিছুই অব্যবহৃত হিসেবে মাটির নীচে তলিয়ে যায় না৷ জার্মান এয়ারোস্পেস এজেন্সির ডানিয়েল শুবার্ট বলেন, ‘গাছ যে পুষ্টি পান করে না, তা আবার ফিরে আসে৷ সেটি আবার নতুন করে সাজিয়ে গাছকে দেওয়া হয়৷ এমনকি গাছের গা থেকে যে পানি বেরিয়ে আসে, সেসবও সংগ্রহ করে গাছকে পান করতে দেওয়া হয়৷ অর্থাৎ যেটুকু পানি এই প্রণালী ত্যাগ করে, তা শুধু তাজা খাদ্য হিসেবে কাজে লাগে৷ বাকি সবকিছু প্রণালীর মধ্যে থেকে যায়৷’

বাস্তবে এই প্রণালী পরীক্ষা করতে গবেষকরা এক হাইড্রোপনিক্স কনটেনার নির্মাণ করেছেন৷ সেটি এমনকি চাঁদের বুকেও বসানো যাবে৷ গবেষকরা সাফল্যের সঙ্গে তার মধ্যে চারাগাছ চাষ করতে পেরেছেন৷ কন্টেনারের মধ্যে লেটুস পাতা, মুলা, টমেটো, শসা বেড়ে ওঠে৷

সেই শাকসবজির স্বাদও বেশ ভালো বলে গবেষকরা দাবি করেন৷ তাছাড়া খেতের তুলনায় গাছ অনেক দ্রুত বেড়ে ওঠে৷ কয়েক সপ্তাহ পরেই তারা প্রথমবার খাদ্য সংগ্রহ করতে পেরেছেন৷ গাছপালা শুধু ভালোভাবে বেড়ে ওঠেনি, সেগুলির মধ্যে অনেক কম রোগ দেখা গেছে৷ তাছাড়া কীটপতঙ্গের মোকাবিলার কোনো প্রয়োজনই পড়েনি৷

ডানিয়েল শুবার্ট বলেন, ‘পৃথিবীর বুকে সব সময়ে নানা বায়োলজিকাল প্রক্রিয়া চলতে থাকে৷ ব্যাকটেরিয়া রয়েছে, ছত্রাক রয়েছে৷ গাছপালাকে সবসময়ে এ সব হামলার মোকাবিলা করতে হয়৷ এ ক্ষেত্রে শিকড় মুক্তভাবে ঝুলে থাকায় অনেক নির্মল পরিবেশ পাচ্ছে৷ ফলে গাছের বৃদ্ধিও অনেক ভালোভাবে হচ্ছে৷’

এর ইতিবাচক প্রভাব হলো, গাছপালার সুরক্ষার জন্য গবেষকদের কিছুই করতে হচ্ছে না৷ এই প্রক্রিয়ার আওতায় নীতিগতভাবে মহাকাশচারীরা তাজা ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য পেতে পারেন৷ কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ছাড়াই সে সব উৎপাদন করা হচ্ছে৷ তাছাড়া এই প্রণালীর নিজস্ব চাহিদা অত্যন্ত কম৷

আরও ছোট আকারেও এই প্রণালী গড়ে তোলা সম্ভব৷ ডানিয়েল শুবার্ট সাধারণ মানুষের জন্যও হাইড্রোপনিক্সের একটি সেট নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করছেন৷ মাত্র ৬০ ইউরো দিয়ে সেটি কেনা যায়৷ তাতে পানির মধ্যেই সব পুষ্টিকর উপাদান ভরে দেওয়া হয়েছে, সবকিছু প্যাকেটেই পাওয়া যায়৷

এলইডি বাতি গাছপালার জন্য আদর্শ আলো নিক্ষেপ করে৷ সূক্ষ্ম নুড়িপাথর গাছকে স্থিতিশীলতা দেয়৷ যেকোনো রান্নাঘরে এমন এক স্বয়ংসম্পূর্ণ ট্রের মধ্যে লতাগুল্ম রাখা যাবে৷

শুবার্ট বলেন, ‘বর্তমানে কৃষিক্ষেত্রে প্রায় ৩০ শতাংশ অপচয় ঘটে৷ শুধু গ্রিনহাউস থেকে গ্রাহকের কাছে পরিবহণের সময়ই এমনটা ঘটে৷ আমাদের এই গ্রিনহাউস প্রণালীর মাধ্যমে সেই অপচয় যতটা সম্ভব কম রাখতে সাহায্য করতে পারি৷’

ডানিয়েল শুবার্ট ও তার সহকর্মীরা এর মধ্যে অ্যান্টার্কটিকার চরম শীতল পরিবেশে এক বছরের বেশি সময় ধরে তাদের গবেষণাগারে পরীক্ষা চালিয়েছেন৷ সেখানে ২০০ কিলোগ্রামেরও বেশি লেটুস পাতা, শসা ও টমেটো উৎপাদিত হয়েছে৷ অ্যান্টার্কটিকায় যা সম্ভব, তা মহাকাশেও প্রয়োগ করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন গবেষকরা। সূত্র: ডয়চে ভেলে

ঢাকা টাইমস/০৫মার্চ/একে

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা