চিকিৎসা হচ্ছে না অর্থাভাবে

প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চান আ.লীগ ‘পাগল’ রইছের অসুস্থ স্ত্রী

প্রকাশ | ০৬ মার্চ ২০১৯, ০৮:২৩

ময়মনসিংহ প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা থেকে আওয়ামী লীগ করতেন রইচ উদ্দিন। দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন তিনি। ধ্যানে-জ্ঞানে তার ছিল বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা আর আওয়ামী লীগ। দলের পিছনে ছুটতে ছুটতে সংসারের দিকে ছিলেন চরম উদাসীন। নিজের জমি বিক্রি করেও দলের জন্য খরচ করেন।

আট বছর আগে মারা যান রইচ উদ্দিন। তার মৃত্যুতে পরিবারটি পড়ে মহাবিপদে। অভাব-অনটনের পাশাপাশি অসুস্থ হয়ে পড়েন তার স্ত্রী ফাতেমা। দায়-দেনা ভারি হওয়ায় এক সময় ভিটেমাটি পর্যন্ত বিক্রি করে দিতে হয়। মাথা  গোঁজার ঠাই হারিয়ে অন্যের বাড়িতে কিছুদিন রাতযাপন করেন তারা। মায়ের চিকিৎসার জন্য দুই সন্তান মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও প্রতিকার মেলেনি।

নিরুপায় হয়ে অসুস্থ ফাতেমা খাতুন দুই ছেলে ফরিদ ও সোহাগকে নিয়ে চলে যান ঢাকায়। সেখানে ছেলেরা দিনমজুরি করে কোনোমতে সংসার চালাতে থাকেন। এখন ফরিদ ও সোহাগ পোশাক কারখানায় চাকরি করলেও অর্থকষ্টে গুরুতর অসুস্থ বৃদ্ধা মা ফাতেমার চিকিৎসা করাতে পারছেন না।

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার তারুন্দিয়া ইউনিয়নের পদুর বাহেরা গ্রামের মরহুম রইচ উদ্দিনের অসহায় পরিবারটি তাই তাকিয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে। তাদের আশা, বঙ্গবন্ধু কন্যার দৃষ্টিতে পড়লে আওয়ামী লীগের প্রতি রইচের ত্যাগের প্রতিদান তারা পাবেনই।

এর ওপরে ছেলেরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েও মায়ের জন্য মেলাতে পারেননি বয়স্কভাতার কার্ড।  পাঁচ হাজার টাকা না দিতে পারায় বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন রইছ উদ্দিনের ছেলে ফরিদ।

ফরিদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘চেয়ারম্যান কার্ড করে দেবেন বলে অন্য লোকের মাধ্যমে আমার কাছে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দিতে পারায় কার্ডও হয়নি। এখন মায়ের চিকিৎসা করাতে পারছি না। হয়তো টাকার অভাবে মায়ের মৃত্যুও দেখতে হবে চোখেরই সামনে।’

‘এ অবস্থায় একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য না পেলে আমাদের মাকে বাঁচাতে পারব না। আর তখন আমাদের আত্মহত্যা ছাড়া কোনো পথ খোলা থাকবে না।’

অসুস্থ ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য পাগল ছিলেন। বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনার নামে   স্লোগান শুনলে খাওয়া-দাওয়া ফেলে চলে যেতেন। দল করতে করতে সংসারের প্রতি কোনো খেয়াল দেননি। তাই আমাদের আজ করুণদশা। মরে যাচ্ছি, টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। সরকারের একটু সহযোগিতা পেলে আত্মতৃপ্তি নিয়ে মরতে পারতাম।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হাসান শহিদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ২০ বছর তারুন্দিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনের সময় দেখেছি, রইছ উদ্দিন খেটে খুটে যদি এক কেজি চালও জোগাড় করতে পারতেন, সেটাও দলের জন্য ব্যয় করতেন। আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ এই কর্মী সারাদিনই দলীয় কার্যালয়ে এসে বসে থাকতেন। জয় বাংলা স্লোগান শুনলে পাগলের মতো ছুটে আসতেন। ভিটে-মাটি ছাড়া কিছুই ছিল না তার। ঘর-সংসারের কথাও তার মাথায় আসত না। দলের প্রতি ভালোবাসায় আসক্ত থাকায় সংসারের দিকে তেমন দেখভালই ছিল না তার।’

স্থানীয়রা বাসিন্দা হাবিকুল বলেন, ‘রইছ উদ্দিন ছিলেন আপাদমস্তক একজন আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। দলের জন্য ছুটতে ছুটতে সংসারের তেমন দেখভাল করতে পারেননি। যার কারণে তার স্ত্রী অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। দুই ছেলে তাদের মাকে নিয়ে খুব সমস্যায় রয়েছে।’

তারুন্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম বলেন, ‘বয়স্কভাতার কার্ডের জন্য আমি কিংবা আমার পরিষদের লোকজন কারো কাছে টাকা চাইনি। কার্ড তুলনামূলক খুব কম, তাই সবাইকে দেওয়া যায় না। তবে কোনো গ্রাম পুলিশ যদি কারো কাছে টাকা চেয়ে থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে রুমানা তোয়া বলেন, ‘বয়স্কভাতার কার্ডের জন্য কারো কাছ থেকে টাকা নেওয়া কিংবা চাওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে আমি অবগত নই। আমার কাছে এলে সাধ্যমতো তাদের সমস্যা সমাধান ও সহযোগিতার চেষ্টা করব।’

(ঢাকাটাইমস/০৬মার্চ/প্রতিবেদক/এআর)