আসল-নকল আর দামের মায়াজালে প্রসাধন ক্রেতারা

প্রকাশ | ০৬ মার্চ ২০১৯, ০৮:২৬ | আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৯, ১৫:২১

কাজী রফিক

নিউমার্কেটে ১০০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে লেকমি ব্র্যান্ডের কাজল (লেকমি)। দোকানির ভাষ্য, পণ্যটি সরাসরি ভারত থেকে আমদানি করা। অথচ এর গায়ে দাম লেখা ১৮০ রুপি (ভারতীয় মুদ্রা)। আবার বিপরীত চিত্রও আছে। গায়ের মূল্যের দ্বিগুণের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে আসল বলে চালানো জিনিসটি কিংবা নকল পণ্য। 

নিউমার্কেটসহ রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রচলিত এমন দেশি-বিদেশি নামি ব্র্যান্ডের নকল প্রসাধনীতে সয়লাব। প্রতিনিয়ত ঠকছে ক্রেতারা। ঠাকাটা অর্থের ওপর দিয়ে যাচ্ছে বটে, কিন্তু এর ব্যবহারে ক্ষতিটা হচ্ছে স্বাস্থ্যের।

কোথাও আসল প্রসাধনীর সঙ্গে মিলিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে নামি প্রতিষ্ঠানের মোড়ক ও ডিজাইন নকল করে বানানো রূপচর্চা সামগ্রী। আবার কোথাও ভারতীয় পণ্যের নামে বিক্রি করা হচ্ছে পুরান ঢাকা ও কেরানীগঞ্জে বানানো নকল পণ্য। ক্রেতাদের সঙ্গে চলছে প্রতারণা। নানা বিদেশি প্রসাধনীর প্রতি বিশেষ করে নারী ক্রেতাদের বাড়তি আকর্ষণের সুযোগ নিচ্ছে দোকানিরা।

দোকানিরা বিদেশি পণ্য বলে বিক্রি করলেও ক্রেতারা একটু সচেতন হলে প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতে পারেন। বিশেষ করে দামের দিকে খেয়াল করলে আসল-নকলের বিষয়টি অনেক সময় বোঝা সম্ভব।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে রয়েছে প্রসাধন সামগ্রীর বেশ কিছু দোকান। তাদের পণ্যগুলো ভারত, পাকিস্তান ও চীন থেকে আমদানি বলে দাবি করেন বিক্রেতারা। কিন্তু পণ্যের গায়ে লেখা দামের সঙ্গে তাদের বিক্রিমূল্যের তফাত বেশ। কৌটার গায়ে ভারতের ৩০০ রুপি লেখা এমন একটি ক্রিমের দাম চাওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা। একই চিত্র সুগন্ধি, সাবান, লোশনসহ প্রায় পণ্যের বেলায়।

মুদ্রা বাজারে এখন বাংলাদেশের ১০০ টাকার মূল্যমান ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৮০ রুপি। প্রসাধন সামগ্রীর কৌটার গায়ে লেখা রুপির সঙ্গে টাকার মান মেলাতে গেলে বিক্রেতার সঙ্গে কুলিয়ে ওঠা যাবে না।

হাতে গোনা যে কয়টি দোকানে প্রকৃতই বিদেশি প্রসাধনী পাওয়া যায়, সেখানে এই রুপি-টাকার মূল্যমানের বিপদ। নকল পণ্যের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে বাড়তি দামে আসল পণ্য কেনার চেষ্টা করেন ক্রেতারা। সে ক্ষেত্রে দ্বিগুণের বেশি টাকা খরচ করতে হয়।

ক্রেতা জেরিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘অধিকাংশ মার্কেটে ভুয়া জিনিস বিক্রি করে অনেকে। এখন ডাবল দাম দিয়ে হলেও ভালো জিনিসটা নেয়ার চেষ্টা করি। বিভিন্ন সময় ফেসবুকে দেখি ভুয়া কসমেটিকসে কী কী সব বাজে ক্যামিকেল ব্যবহার করা হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই ভয়ে থাকি।’

একই ব্র্যান্ডের দেশভেদে উৎপাদনেও মূল্যের তারতম্য আছে। সেই সুযোগও নেয় দোকানিরা। দেশে বেশ চাহিদা আছে এমন বিদেশি নামি ব্র্যান্ডের কয়েকটি পণ্য উৎপাদন হয় বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে। দেশভেদে পণ্যের গণগত মানের পার্থক্য রয়েছে- এমন যুক্তিতে ক্রেতাদের বাড়তি আকর্ষণ দেখা যাচ্ছে অন্য দেশের পণ্যের প্রতি। তার সুযোগ নিচ্ছেন বিক্রেতারা।

বাংলাদেশে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি বিক্রি করছে ইউনিলিভার। একই প্রতিষ্ঠান একই পণ্য বিক্রি করছে পাশের দেশ ভারতে। ৯৫ টাকায় দেশে বিক্রি হওয়া ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি ভারতে বিক্রি হচ্ছে ৯৫ রুপিতে। কিন্তু ভারতে উৎপাদিত পণ্যটি বাংলাদেশে বিক্রি হচ্ছে ১৭০-২১০ টাকায়।

কোথাও ভারতীয় পণ্যের কথা বলে ক্রেতাদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে একই রকম দেখতে ভুয়া পণ্য। নামী ব্র্যান্ডের মোড়ক হুবহু তৈরি করে বিক্রি করা হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত দামে।

তবে দাম দিয়ে কিনলেও দেশিটার চেয়ে বিদেশি পণ্য বেশি কার্যকর বলে জানান ইশিতা ইয়াসমিন নামের একজন ক্রেতা। তাই বাড়তি দাম গুনতে কষ্ট হলেও কিছু করার নেই। তিনি বলেন, ‘৯৫ টাকার ১০টা যে কাজ করে, ইন্ডিয়ানটা ২০০ টাকা দিয়ে একটা কিনলে সেই একই কাজ করে।’

তবে তার ভয় আসল-নকলের ফাঁদে পড়ে বিভ্রান্ত হওয়া। বলেন, ‘সবাই বলে তারটা আসল। সবাই নাকি ইমপোর্টার। কাকে বিশ্বাস করব, কাকে করব না বুঝি না।’

তার ভয়ের কারণ, নকলের পাল্লায় পড়ে তার বোনকে কী মূল্য দিতে হয়েছে, সেটি তিনি দেখেছেন। সেই বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বোন একটা ক্রিম নিয়েছিল নিউমার্কেট থেকে। গৌরী নাইট ক্রিম। ক্রিমটা পাকিস্তানের বলে ওর কাছে বিক্রি করে দোকানি। চার-পাঁচ দিন ব্যবহার করার পর দেখা গেল ওর চেহারা পুড়ে পুড়ে যাচ্ছে। জায়গায় জায়গায় পুড়ে গেলে যেমন হয় তেমন সাদা হয়ে গেছে। অথচ ও এর আগেও এই ক্রিম ব্যবহার করেছে, তখন এমন কিছু হয়নি।’ তারা বুঝতে পারেন তাদের কিনে আনা ক্রিমটি ছিল নকল। 

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার প্রসাধনীর দোকান ঘুরে পাওয়া যায় ইশিতার বলা গৌরী ক্রিম। ক্রিমটি ভারত ও পাকিস্তান থেকে আসে বলে জানান দোকানিরা।

পণ্যটির গায়ে দাম লেখা ৩০০ রুপি। স্থানভেদে এটি বিক্রি হচ্ছে ২৪০-৩৫০ টাকা পর্যন্ত।

(ঢাকাটাইমস/৬মার্চ/মোআ)