বই বিলানো থেমে নেই

পলান সরকারের কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন সন্তানরা

রিমন রহমান, রাজশাহী
| আপডেট : ০৬ মার্চ ২০১৯, ১২:০২ | প্রকাশিত : ০৬ মার্চ ২০১৯, ১০:৫৮
পলান সরকারের পাঠাগার

নিজের পাঠাগার, অসংখ্য বই আর বইপ্রেমীদের মাঝে বই বিলানো ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন সাদামনের মানুষ পলান সরকার। তাই বলে তার সেই জ্ঞান বিলানোর পথচলা থেমে থাকছে না। সে দায়িত্ব নিয়েছেন তার নয় সন্তান এবং শুভানুধ্যায়ীরা।

কখনো হেঁটে আবার কখনো নিজের পুরনো সাইকেলে চেপে বইয়ের ঝোলা নিয়ে গ্রামে বেরিয়ে পড়তেন পলান সরকার। কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই নিজের টাকায় কেনা বই পৌঁছে দিতেন মানুষের বাড়ি বাড়ি। গ্রামের সহজ-সরল লোকগুলোকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করাই ছিল তার ধ্যান।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা গ্রামের সদ্যপ্রয়াত ‘বইপ্রেমী’ একুশে পদকপ্রাপ্ত পলান সরকারের ছেলে হায়দার আলী সবাইকে সংগঠিত করে ইতোমধ্যেই বাবার স্বপ্নকে এগিয়ে নিতে শুরু করেছেন।

তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেছেন, ‘দূরের পাঠকদের যেন পড়তে সমস্যা না হয়, সেজন্য বেশ কয়েকটি পয়েন্টে বই দিয়েছি। মানুষের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়ানো বাবার এ মহতী উদ্যোগ ধরে রাখতে এলাকার আরও ৩০-৪০টি বাজারে একটি করে দোকানে ‘পলান সরকার স্মৃতি পয়েন্ট’ গড়ে তুলব।’

হায়দার বলেন, ‘বাবা চলে গেছেন। কিন্তু রেখে গেছেন অনেক স্মৃতি। মনে পড়ছে, খেয়ে না খেয়ে যখন-তখন বই নিয়ে তার বেরিয়ে পড়ার দৃশ্য! চা খাওয়ার টাকা নিয়ে সেই টাকায় কলম কিনে গ্রামের স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের তা উপহার দেওয়ার দৃশ্য চোখে ভাসছে। জেলার ২০ গ্রামে বাবা বই পড়া ও শিক্ষার অভিনব যে আন্দোলন গড়ে তুলেছেন, আমরা নয় ভাই-বোন তা ধরে রাখব।’

হায়দার আলী খাগড়বাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং পলান সরকার পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

বাবার মতোই বইপাগল হায়দার বলেন, ‘বার্ধক্যের কারণে চলতে না পারায় শেষদিকে বাবার পাঠাগার দেখাশোনার দায়িত্ব আমার ওপরই পড়ে। সেখানে বাবা অসংখ্য বই রেখে গেছেন। নিত্য-নতুন বইয়ের সমারোহে পাঠাগারটিকে আমি আরও বেশি আধুনিকায়ন করতে চাই।’

‘বাবা ছিলেন একজন সাদামনের মানুষ। তিনি কখনো অন্যের দয়া-দাক্ষিণ্য পছন্দ করতেন না। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জ্ঞানের আলো ছড়াতে বাবার গড়া শিক্ষা আন্দোলন চলমান রাখতে ও নীতি-আদর্শ ধরে রাখতে আমরা সন্তানেরা আন্তরিক।’

‘আমাদের বাবা ছিলেন একজন বইপাগল মানুষ। জন্মের মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় তিনি পিতৃহারা হন। আর্থিক অনটনে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময়ই লেখাপড়ায় ইতি টানতে হয় তাকে। নিজের পড়ালেখা বেশি দূর চালিয়ে নিতে না পারলেও মানুষকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করতে তিনি নিজের জীবন-যৌবন ত্যাগ করেছিলেন’- বলেন হায়দার আলী।

আলোকিত এ মানুষটির স্মৃতি ধরে রাখতে তার প্রতিষ্ঠিত হারুনুর রশিদ শাহ উচ্চ বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদের। গত শনিবার পলান সরকারের নামাজে জানাজায় অংশ নিয়ে এ প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

সেখানে স্মৃতিচারণকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বাবা শামসুদ্দীন আলম বাউসায় ‘পলান স্মৃতি পাঠাগার’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। পলান সরকারের অভিনব এ বই পড়ানোর আন্দোলন ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহিন রেজাও।

১৯২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নাটোরের বাগাতিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন পলান সরকার। তার আসল নাম হারেজ উদ্দিন সরকার। সামাজিকভাবে জ্ঞানবৃদ্ধিতে অবদান রাখায় ২০১১ সালে তিনি পান ‘একুশে পদক’। গত ১ মার্চ বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন তিনি। তার প্রতিষ্ঠিত পাঠাগারের অদূরে স্ত্রীর কবরের পাশে আলোকিত মানুষটিকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/০৬মার্চ/প্রতিবেদক/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :