তারুণ্যের ভাবনায় সাতই মার্চ

প্রকাশ | ০৭ মার্চ ২০১৯, ১৩:২৪

সামশাদ নওরীন

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ ২০১৭ সালে দি ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে বিশ্ব ঐতিহ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। হাজার বছরের দলিত বাংলাদেশের এটিই ছিল প্রকৃত পক্ষে স্বাধীনতার প্রথম ডাক। বঙ্গবন্ধুর এক আঙ্গুলের নির্দেশে  পুরো বাংলাদেশের মানুষ সেদিন স্বতঃস্ফূর্তভাবে এক হয়েছিল, সেদিন বাঙ্গালি একদিকে  পশ্চীম পাকিস্তানের নিষ্পেষণ, অন্যদিকে নিজেদের অধিকার আদায়ের এক প্রগাড় চেতনা লাভ করেছিল এই ভাষণের মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধুর এই কালজয়ী ভাষণ ছিল উদ্দিপনাময় মাত্র ১৮ মিনিতের এই ভাষণ পুরটাই ছিল অন্তর থেকে উতসিত  বিশ্বাসের কথকমাল। কোন লেখা ও পাণ্ডুলিপির উন্মোচন সেদিন  রেসকোর্স ময়দানে হইনি বরং তিনি বাস্তবে যা দেখেছেন সেটিই বাঙ্গালির সামনে তুলে ধরেছেন, তাদেরই কাতারে বসে আর অর্জন করেছে কোটি বাঙ্গালির হৃদয়।  এ কারনে ৭ মার্চের পর বঙ্গবন্ধুর উচ্চারিত ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের  সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ভাষণের যে বিষয়গুলো স্বাধীনতার পথকে প্রশস্ত করেছে সেগুলো নিচে তুলে ধরছি।

উদ্দীপনা:

বাংলাদেশের মানুষকে একত্রিত করা, তার বাচনভঙ্গি এবং জনগনকে আপন করে নেয়ার যে শক্তিশালী ক্ষমতা ছিল তা সে সময় বিরল ।

দিকনির্দেশনা:

তাছাড়া ৭ মার্চের ভাষণ ছিল একরকম দিক নির্দেশনা, যা থেকে মানুষ তার অধিকার ও দেশ সম্পর্কে সচেতন হয় । এমনকি নতুন প্রজন্মের কাছে একটা অনুপ্রেরণা। আমার মনে আছে ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময় ৭ মার্চের ভাষণ পাড়ায় পাড়ায় বাজত কিন্তু বার বার বাজলে ও কখনো খারাপ বা এক ঘেয়েমি লাগত না। ভাষণটি যতবার শুনতাম ততবার শিহরিত হতাম । এ ভাষণে অন্যরকম একটা ভাললাগা কাজ করে, আমার মনে হয় প্রায় সব বাঙ্গালি একই কথা বলবে।

সাহস:

বাঙ্গালি জাতি একটা আশ্রয় ও ঠিকানা পেয়েছিল যার উপর ভরসা করা যায়। ‘ তোমাদের যা কিছু আছে তা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়’ এটা বাঙ্গালি জাতির জন্য এটাই যথেষ্ট  ছিল। 

স্বাধীনতার ক্ষুধা:

বাঙ্গালী জাতি নির্যাতনের শিকার হতো, বঞ্চিত হতো ন্যায্য অধিকার থেকে তা ছিল প্রতিনিয়ত ।  স্বাধীনতার ক্ষুধা ছিল প্রবল । আমি যখন পরিবার থেকে মা-বাবা, ভাই-বোনের কাছে বঙ্গবন্ধুর কথা শুনি  তখন বঙ্গবন্ধুকে দেশ ও দেশের স্বাধীনতা নিয়ে বেশি আবেগ প্রবণ ও দিঢ় প্রত্যায়ী মনে হয়েছে। 

নতন প্রজন্মের কাছে ৭ মার্চের ভাষণের মুধুরতা  ও প্রগাড়তা চির অক্ষয় । এটি একটি মহাকাব্য, এটি একটি স্মারক, এটি একটি জাতির স্বাধীনতার আলোকবর্তিকা। যে কারণে মনে হয়েছে:

১। এটি মুক্তির প্রথম ডাক। বাঙ্গালদেশিদের হাজার বছরের বঞ্ছনার থেকে মুক্তির অবিস্মরণীয় ডাক এই ৭ মার্চের ভাষণ।

২। বঙ্গবন্ধুর দ্রিওতা কারণে এটি সম্ভব হয়েছে, তিনি হয়ত জানতেই না যে তার ভাষণের মাধ্যমে গোটা জাতি একত্রিত হবে এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়বে।

৩। তিনি এততাই সাহসী ছিলেন যে অনেক রক্তক্ষয় হবে এবং তিনি সহ সমগ্র বাঙ্গালি জাতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত জেনেও তিনি ছিলেন নির্ভীক ও অবিচল।

৪। তিনি কারোর উপর মিথ্যা দোষারোপ করেননি এমনকি তার প্রত্যেকটি পদক্ষেপ জনগনের সামনে উপস্থাপন করেছেন। পাকিস্তানী সরকারের অন্যায় ও অবিচার তিনি জনগণকে বঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন।

৫। এটা ছিল স্বতঃস্ফূর্ত বক্তব্য । ১৮ মিনিতে ১১০৫ টি শব্দের চয়নের  মাধ্যমে বাজ্ঞালি জাতির অধিকার ও বঞ্ছনার কথা অনর্গলভাবে বলে যাচ্ছিলেন । প্রতিটি কোথায় ছিল গভীর ভালোবাসা কিন্তু শক্তিশালী ও দ্রিওতা।

৬। তিনি বার বার বলছিলেন গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কথা । সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও তার মধ্যে যদি কেউ একজন ন্যায্য কথা বলত তবে তার কোথাই প্রাধান্য পেত, যা তৎকালীন বিশ্ব রাজনীতিতে  ছিল নজিরবিহীন ।

৭। বঙ্গবন্ধুর জ্ঞান চর্চা ছিল ক্লান্তিহীন । আমাদের প্রজন্মের হয়ত তাকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি কিন্তু তার বক্তব্য ও লেখা বইয়ে Cause and Effect Analysis যে ভাবে করতেন তাতে বোঝা যায় তার জ্ঞান চর্চার গভীরতা।

৮। তার বক্তব্যে ছিল ধর্ম নিরপেক্ষতা, বক্তব্যে  তিনি বলেছেন, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুল বলে তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। তিনি অসাম্প্রদিয়িক স্বাধীন বাংলা গড়ার কারিগর ছিলেন।

একটি ভাষণ একটি জাতিকে একত্রিত করেছে,

একটি ভাষণ একটি জাতিকে দিক - নির্দেশনা দিয়েছে,

একটি ভাষণ একটি জাতিকে স্বাধীনতা দিয়েছে।

আর এ ভাষণ আজ ও তারুণ্যকে উজ্জবিত করে, ৭ মার্চ ভাষণ আজ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের দলিল হিসেবে স্থান পেয়েছে । এ ভাষণ বাঙ্গালি জাতির অহংকার ও সম্পদ তা আজ প্রতীয়মান হয়।

পরিশেষে বলি, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ভীত এই ৭ মার্চ ভাষণের মাধ্যমে তৈরি করেছিলেন। কোন দেশ বা জাতি কোন মহামানবের দ্বারা পরিচিত হয় যেমনটা আমেরিকা- জর্জ ওয়াশিংটন, ভারত- মহাত্মা গান্ধী, দক্ষিন আফ্রিকা- নেলসন মেন্ডেলা, তেমনি বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু ছাড়া অপরিপূর্ণ।

সামশাদ নওরীন: সহকারী অধ্যাপক, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।