পেট্রাপোলে সিন্ডিকেটে আটকা পণ্যবোঝাই ৬ হাজার ট্রাক

প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০১৯, ০৮:৫৩

মহসিন মিলন বেনাপোল

দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় পণ্যবোঝাই ৬ হাজার ট্রাক আটকে আছে। ফলে এই বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বড় ধরনের ধস নামতে শুরু করেছে রাজস্ব আদায়ে।

জানা গেছে, ওপারে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট সিরিয়ালের অজুহাত দেখিয়ে উচ্চ শুল্কের পণ্যের চালান কৌশলে আটকে রাখে। শূন্য শুল্কের পণ্যচালানগুলো রপ্তানি করা হচ্ছে বাংলাদেশে। উচ্চ শুল্কের বাণিজ্যিক চালানগুলো দিনের পর দিন আটকে থাকায় ট্রাকপ্রতি দিনে ২ হাজার টাকা করে ড্যামারেজ আদায় করা হচ্ছে বাংলাদেশি আমদানিকারকদের কাছ থেকে।

এই চক্রের কারণে মোটা অঙ্কের লোকসানের ভয়ে অনেকেই এই পথে আমদানি কমিয়ে দিয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।

বন্দর সূত্র জানায়, প্রতি বছর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৩০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়ে থাকে। বেনাপোল কাস্টমস হাউস প্রতি অর্থবছরে ৭ হাজার কোটি টাকার রাজ¯ব আয় করে থাকে এই বন্দর থেকে। ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে এ ধরনের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত ৫৬০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় কম হয়েছে বলে কাস্টমস সূত্র জানায়।

সূত্রমতে, বেনাপোল চেকপোস্টে নানা ধরনের বাড়তি নিয়মকানুন চালু করায় ভারত থেকে পণ্যবোঝাই ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করতে বিলম্ব হচ্ছে। বেনাপোল চেকপোস্টে ভারতীয় এক-একটি ট্রাক এন্ট্র্রি করতে ২০ মিনিট করে সময় লাগায় সারা দিনে ট্রাক আসা কমে গেছে। ইতিপূর্বে প্রতিদিন বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৫০০ ট্রাক পণ্য আমদানি হতো ভারত থেকে। সময়ক্ষেপণের কারণে বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৫০টিতে।

চেকপোস্টে বিজিবি, কাস্টমস ও বন্দর আলাদাভাবে রেজিস্টার্ড খাতায় ট্রাক এন্ট্রি করায় এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। অন্যদিকে ভারত থেকে আমদানি পণ্যে চট্টগ্রামে যে মূল্যে শুল্কায়ন করা হয়, বেনাপোলে তার চেয়ে বেশি মূল্যে শুল্কায়ন করায় আমদানিকারকরা চট্টগ্রামের দিকে ঝুঁকছেন।

আবার বন্দরে নানা জটিলতার কারণে অনেক আমদানিকারক বৈধ পথে আমদানি কমিয়ে চোরাই পথে পণ্য আমদানি করছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য দ্রুতকরণ, রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা ও দিনের রাজস্ব দিনে আদায়ের জন্য বিশ্বব্যাংকের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধিদল গত বুধবার বেনাপোল কাস্টমস কমিশনারের দপ্তরে কাস্টমস ও বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় করে। বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের কানসালটেন্ট ইভার পিটারসন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ফার্স্ট সেক্রেটারি গিয়াস কামাল, বিশ্বব্যাংকের কো-অরডিনেটর নুসরাদ নাহিদ, কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার জাকির হোসেন, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোশিয়েশনের সাবেক সভাপতি শামসুর রহমান, খাইরুজ্জামান মধু, মহসিন মিলন, মতিয়ার রহমান।    

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুইয়ার নিদের্শে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসেন দুই দেশের ব্যবসায়ী ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেও আমদানি-বাণিজ্য বাড়াতে পারছেন না।

বেনাপোল  ও  পেট্রাপোল বন্দরে অবিলম্বে যৌথ টাস্ক ফোর্স গঠন করলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে বলে মত দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

বেনাপোল কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, বেনাপোল চেকপোস্টে আমদানিকৃত পণ্যবোঝাই ট্রাক এন্ট্রির নামে অহেতুক সময় নষ্ট করায় সারা দিনে ট্রাক ঢোকা কমে গেছে। এতে রাজস্ব আদায়ে ধস নামতে শুরু করেছে।

কাস্টমস চেকপোস্টের একটি পয়েন্টে ট্রাক এন্ট্রি করলে সময় যেমন বাঁচবে তেমনি আমদানি-রপ্তানি বাড়বে বলে মত দেন ব্যবসায়ীরা।

সভায় জরুরি ভিওিতে দুই দেশের কাস্টমস ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে যৌথ সভা করে বিরাজমান সমস্যা নিরসন করার সিদ্ধান্ত হয়।

অন্যদিকে ভারতীয় বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেন একই দিনে। তারা দুই দেশের মধ্যে কীভাবে আমদানি-রপ্তানি বাড়ানো যায়, সে ব্যাপারে বিভিন্ন পয়েন্ট তুলে ধরেন কমিশনারের কাছে। তারাও যৌথ টাস্কফোর্স গঠনের ওপর জোর দেন।

বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরী জানান, ভারতের কাস্টমসের সঙ্গে  দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে পেট্রাপোল বন্দরের সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/ ৮মার্চ/মোআ)