নারী-শিশুকে রক্ষার ‘জয়’

কাজী রফিক
 | প্রকাশিত : ০৮ মার্চ ২০১৯, ১১:৩১
প্রতীকী ছবি

ভীতিকর কোনো পরিবেশে ভয় পাচ্ছেন? হাতে মোবাইল ফোন আছে? কিন্তু কল করার মতো পরিস্থিতিও নেই? বিপাকে পড়া আপনি যদি নারী হন, তাহলেও সংকেত পাঠাতে পারবেন উদ্ধারের আশায়। আর যে বা যারা আপনার বিপদের কারণ হতে যাচ্ছে, তিনি বুঝতেও পারবেন না আপনার এই সহায়তা চাওয়ার বিষয়টি।

এই সুযোগ এনে দিয়েছে বিশেষ একটি মোবাইল অ্যাপ যার নাম ‘জয়’। চালু হয়েছে ২০১৮ সালের ২৯ জুন।

গুগল প্লে স্টোর থেকে বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যায় এই অ্যাপ। জরুরি প্রয়োজনে মুঠোফোনের পাওয়ার বাটনটি একটানা চার বার চাপার পর পঞ্চমবার পাওয়ার বাটন চাপলে ভুক্তভোগীর অবস্থানের একটি নির্দেশনা চলে যাবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে। সেখানে ১০৯ এর সেবা কাজে থাকা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ওই মুঠোফোনের অবস্থান জানার পাশাপাশি, মোবাইলের ক্যামেরা থেকে দেখতে পাবেন ওই জায়গার ছবি। একইসঙ্গে শোনা যাবে সেখানকার কথাবার্তাও।

ভুক্তভোগীর সমস্যা নিশ্চিত হওয়ার পর তা ১০৯ থেকে জানানো হবে নিকটস্থ থানায়। সেখান থেকেই নেয়া হবে ব্যবস্থা। আবার অ্যাপস ব্যবহারকারী তার পরিচিত তিনটি নম্বরের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করে নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে মুঠোফোনের পাওয়ার বাটন চাপার সঙ্গে সঙ্গে ভুক্তভোগীর অবস্থান ও তার সাহায্য বার্তা পৌঁছে যাবে তিনজনের মুঠোফোনে।

দেশে ব্যাপকভাবে নারী নির্যাতন হলেও এই অ্যাপের ব্যবহার কিন্তু তেমন নেই। এর কারণ, প্রচারের অভাব। যে কারণে অতীব প্রয়োজনীয় এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে জীবন রক্ষার হাতিয়ার হলেও অ্যাপটি এখনো সেভাবে ব্যবহারের প্রমাণ নেই।

তথ্য তালিকা বলছে, আট মাস আগে অ্যাপটি চালু করা হলেও এর গ্রাহক সংখ্যা এখনো নামমাত্র। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার হাজার ৮৪১ জন অ্যাপটি ডাউনলোড করেছেন। আর এর মাধ্যমে সহায়তা চেয়েছেন মাত্র ২৩৪ জন।

নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় বলছে, মুঠোফোনের মাধ্যমে নারীদের নিরাপত্তা দেওয়ার এই পদ্ধতি দেশে প্রথম। আর এই বিষয়টি মানুষের মধ্যে প্রচার চালাতে বেশ কিছু পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে।

অ্যাপ ডাউনলোড যেভাবে

যেকোনো এন্ড্রয়েড ফোন থেকে গুগল প্লে স্টোরে ‘জয় ১০৯’ লিখে অ্যাপটি ইন্সটল করা যায়। ইন্সটল করার পর নাম, ই-মেইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে পরবর্তী অপশনে গিয়ে চার ডিজিটের একটি পিন নম্বর সেট করতে হবে। নিরাপত্তা প্রশ্নগুলো থেকে যেকোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ইনস্টলেশন সম্পন্ন করতে হবে। এফএনএফ সেট করা অ্যাপস এর এফএনএফ অপশনে গিয়ে ফোন এর কনটাক্ট থেকে সেভ করা নম্বরের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ তিনটি এফএনএফ সেট করা যাবে। এফএনএফ নাম্বার এ জিপিএস লোকেশন এর লিঙ্কসহ মেসেজ যাবে।

যেভাবে করা যাবে অভিযোগ

# অ্যাপসটিতে দুই ধরনের অভিযোগ প্রেরণের অপশন রয়েছে। ‘জরুরি অবস্থা’ ও ‘লিখিত অভিযোগ’।

# সরাসরি মেনু থেকে জরুরি অবস্থা আইকন প্রেসের মাধ্যমে লিখিত অভিযোগ অংশ থেকে অভিযোগ পাঠানো যায়।

# অ্যাপ থেকে অভিযোগকারীর অবস্থা শনাক্তকরণ এবং অডিওর জন্য ইন্টারনেট সংযোগ প্রয়োজন।

# ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলে মেসেজ আসবে। সে ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের আওতাভুক্ত থাকা সর্বশেষ লোকেশন পাওয়া যাবে।

# সংকটাপন্ন অবস্থায় অ্যাপটির জরুরি অবস্থা মেনু আইকন প্রেস করে অথবা মেনুতে ক্লিক করার পরিস্থিতি না থাকলে ফোনের পাওয়ার বাটন এ পাঁচ বার চেপে অভিযোগ করা যাবে।

# পরপর চারবার প্রেস করার পর ফোনে ভাইব্রেশন হবে। পঞ্চম বার প্রেসের মাধ্যমে অভিযোগটি জয় মোবাইল অ্যাপস সেন্টারের সার্ভারে এসে জমা হবে।

# লিখিত অভিযোগ পাঠানোর জন্য অভিযোগের ধরন বাছাই করে বিবরণসহ অভিযোগ করা যাবে। এছাড়াও সংযুক্ত করণ অপশনে ছবি ও অডিও সংযুক্ত করে পাঠানো যাবে।

যেভাবে কাজ করবে সংকেত

# এই অ্যাপের জরুরি অবস্থা বাটনে চাপ দিলে তাৎক্ষণিকভাবে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ন্যাশনাল হেল্পলাইন ১০৯ জেলা পর্যায়ের পুলিশ সুপার ও মেট্রোপলিটন এলাকায় উপ-পুলিশ কমিশনার এবং এফএনএফ নাম্বারে ম্যাসেজ যাবে।

# একইসঙ্গে প্রমাণ হিসেবে জিপিএস লোকেশন অডিও এবং ছবি সংরক্ষণ করা হবে।

# ব্যবহারকারী অনলাইনে থাকলে তাহলে প্রমাণ হিসেবে সংরক্ষিত তথ্যসমূহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাপের নির্ধারিত সার্ভারে প্রেরিত হবে।

# অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযোগকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে মোবাইল অ্যাপ সেন্টার থেকে সরাসরি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

# অ্যাপ থেকে ধারণকৃত ছবি, অডিও শুধুমাত্র বাস্তবায়নকারী সংস্থা অর্থাৎ জয় মোবাইল সেন্টার থেকে দেখা যাবে। সে ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ তথ্য গোপন রাখা হবে।

চালু হেল্পলাইন ১০৯ও

জয় অ্যাপের পাশাপাশি জরুরি হেল্পলাইন ১০৯ও আছে। ২০১২ সালের ১৯ জুন চালু হওয়া এই হেল্পলাইনটি অবশ্য বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় হাজার কল আসছে এই নম্বরে। অভিযোগের বেশিরভাগ জুড়েই রয়েছে বাল্যবিবাহ, পারিবারিক নির্যাতন ও যৌন নিপীড়ন।

হেল্পলাইনটি জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রথম থেকেই টোল ফ্রি রাখা হয়েছে ১০৯। ফলে যেকোনো কেউ বিনামূল্যে এ সেবা নিতে পারবেন। একইসঙ্গে ২৮ কোটি পাঠ্যপুস্তকে ১০৯ জরুরি হেল্পলাইয়ের বিষয়টি বইয়ের শেষে যুক্ত করা হয়েছে। এতে করে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিষয়টি জনপ্রিয় হয় এবং ভুক্তভোগীরা জরুরি প্রয়োজনে সরকারের এই সহায়তা সংস্থা থেকে সাহায্য-সহযোগিতা নিতে পারছেন।

২০১২ সাল থেকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ১৪ লক্ষ ২০ হাজার নারী ও শিশুকে এ হেল্পলাইনের মাধ্যমে সহায়তা দেয়া হয়েছে বলে জানান মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল পোগ্রামের প্রকল্প কর্মকর্তা রাইসুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘যদি কেউ আমাদের সহযোগিতার জন্য ফোন করে তাহলে আমরা তাকে প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা দিয়ে থাকি। তবে কোনো কারণে কেউ যদি কাঙিক্ষত সেবা না পান, তাহলে আমাদের পুনরায় জানালে সে বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব। এখন পর্যন্ত সেবা প্রত্যাশীরা সেবা পাননি, এমন অভিযোগ নেই।’

সম্প্রতি ১০৯ ও সরকারি জরুরি হেল্পলাইন ৯৯৯ এর মধ্যে একটি সমঝোতা হতে যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে ৯৯৯ এর অফিসে ১০৯ এর একজন প্রতিনিধি থাকবেন। যে সকল ক্ষেত্রে নারী ও শিশুদের সহযোগিতার জন্য দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপ প্রয়োজন হবে, সেক্ষেত্রে ৯৯৯ কর্তৃপক্ষ সেখানে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। একই সঙ্গে নারী ও শিশু বিষয়ক সে সকল সেবা প্রত্যাশী ৯৯৯ এ কল করবে, তাদের সহায়তা দেবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ১০৯। এ প্রক্রিয়া শুরু করতে বর্তমানে প্যানেল তৈরির কাজ চলছে।

(ঢাকাটাইমস/৮মার্চ/কারই/ডব্লিউবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :