জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক পাচ্ছেন তারাগঞ্জের সেই ইউএনও

রফিকুল ইসলাম রফিক, রংপুর
 | প্রকাশিত : ০৮ মার্চ ২০১৯, ১৭:০৮

প্রাথমিক শিক্ষায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক -২০১৮’ পাচ্ছেন রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা জিলুফা সুলতানা। বর্তমানে তিনি কুড়িগ্রাম অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করছেন।

১৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই পদক বিতরণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদক গ্রহণ করতে মন্ত্রণালয় থেকে তাকে অনুরোধ করা হয়েছে। ৫ মার্চ স্বাক্ষরিক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এক চিঠিতে তাকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।

এর আগে ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর রংপুরের তারাগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালে জিলুফা সুলতানা ‘সবুজ তারাগঞ্জ গড়ি’ স্লোগানে এক ঘণ্টায় আড়াই লাখ বৃক্ষ রোপন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। তার নিরলস চেষ্টায় তারাগঞ্জের মানুষ এক ঘণ্টায় আড়াই লাখ চারা রোপণ করেন উপজেলার ১৫৩টি রাস্তায়। বাংলাদেশে নির্দিষ্ট সময়ে গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে এটি একটি রেকর্ড।

আড়াই লাখ গাছ লাগানোর কারণ হিসেবে ওইদিন ইউএনও জিলুফা সুলতানা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এক ঘণ্টায় দুই লাখ ২৩ হাজার ৩৯০টি গাছ লাগিয়ে গিনেস রেকর্ড করেছে ফিলিপাইন। তিনি এই সংখ্যাটা ছাড়িয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নেন, যার নাম ‘সবুজ তারাগঞ্জ গড়ি’। স্থানীয়দের সহযোগিতায় সফলও হয়েছেন তিনি।’

পরিকল্পনা অনুযায়ী ৩০ হাজারের বেশি মানুষ অংশ নিয়েছিলেন এই বৃক্ষরোপণে। মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ কোদাল, খুন্তি হাতে গাছের চারা রোপণের উৎসবে মেতে ওঠেছিলেন।

উপজেলার ১৫৩টি রাস্তায় ৪৬০ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে তারা চারা রোপণ করেন।

ওই বছর ‘জিলুফা মডেল’ অনুসরণ করে দেশের সব উপজেলায় গাছ লাগানোর নির্দেশ দেয় সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এখন তারাগঞ্জের পথে পথে সুবজ গাছে ভরে গেছে। তারাগঞ্জে প্রবেশ করলেই এক অনন্য দৃশ্যে চোখ জুড়িয়ে যাবে।

এরপর ২০১৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। তাতেও স্থানীয়দের ব্যাপক সাড়া মেলে। দীর্ঘ চেষ্টায় তিনি প্রথমে ১৬৪টি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় গিয়ে স্বল্প খরচে প্রায় ২২ হাজার শিক্ষার্থীর রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করে দেন। পরে উপজেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করতে সক্ষম হন। এভাবে তিন মাসে প্রায় ৭০ হাজার মানুষের রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করা হয়।

ফলে প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানতে পারে তার রক্তের গ্রুপের সাথে তার স্কুলের কোন বন্ধু বা শিক্ষার্থীর রক্তের গ্রুপের মিল রয়েছে। এমনকি পুরো উপজেলায় এক নজরে সেই ব্যবস্থাও করেছেন তিনি।

এদিকে পদন্নোতি পেয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে কাজ করছেন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে। সেখানেও শুরু হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের কাজ। এরই মধ্যে জেলার রাজারহাট উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর রক্তের গ্রুপ নির্ণয় শেষ হয়েছে, ব্লাড ক্লাব তৈরি হয়েছে। দাসিয়ার ছড়া সিটমহলে ওষুধি গাছ বাসক চারা লাগানো হয়েছে। এছাড়াও কুড়িগ্রাম অঞ্চলে হারিয়ে যাওয়া বিয়ের গীত সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।

এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন জানান, ‘খুবই ভালো লাগছে। আমি তাকে বলি তিনি সত্যিই স্টার অফিসার। সুদূর প্রসারী চিন্তা করেন সব সময়। একজন ব্যতিক্রমধর্মী অফিসার, কী করলে কী কাজ করলে উন্নয়ন হবে, চিত্র বদলে যাবে এমন সব চিন্তা সব সময় করেন। তিনি এখন কুড়িগ্রামে আমার সাথে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কাজ করছেন। আমি খুব হ্যাপি।’

জিলুফা সুলতানা বলেন, ‘আমি বিভাগীয় কমিশনার স্যার, রংপুর ও কুড়িগ্রাম ডিসি স্যারকে কৃতজ্ঞতা জানাই। সেই সাথে বলি, অনেক দূর যেতে হবে। তাই মনে মনে বলি, ‘মা তোর বদনখানি মলিন হলে আমি নয়ন জ্বলে ভাসি, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’।

(ঢাকাটাইমস/৮মার্চ/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :