সংগ্রামী রোকেয়া, সফল রোকেয়া

প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০১৯, ২০:১৭

শিউলি জামান

রোকেয়া আপা। সাত বছর আগে তার সঙ্গে পরিচয়। ১৬ বছর বয়সে অন্য মেয়েদের মত সেও স্বামীর সংসারে গিয়েছিল বুক ভরা আশা এবং চোখে রঙিন স্বপ্ন নিয়ে। আশা ছিল মন দিয়ে স্বামীর সংসার করবে। কিন্তু সংসার জীবনের তৃতীয় দিনেই স্বামী তাকে জানিয়ে দেন, তিনি অন্য কাউকে ভালোবাসেন। পরিবারের চাপে রোকেয়াকে তিনি বিয়ে করেছেন। কখনোই তাকে ভালোবাসা সম্ভব নয়।

স্বামীর ছুঁড়ে দেয়া নিষ্ঠুর শব্দগুলো শুনে রোকেয়া সেদিন কেঁদেছিল। খুব কেঁদেছিল। তবে সে কান্না অশ্রু হয়ে ঝরেনি। বিয়ে যখন হয়েই গেছে ধৈর্য ধরে থেকে যাই। এক সঙ্গে থাকতে থাকতে একদিন না একদিন স্বামী আমাকে ভালোবাসবেই। এমন ভাবনা রোকেয়ার কখনোই ছিল না। সে শুধুই ভাবতো, যার মনে আমার স্থান হয়নি, তার সংসারেও আমার জায়গা করতে চাই না।

এক সময় রোকেয়া তার বাবার বাড়িতে ব্যাপারটা জানালো। ঘটনা শুনে অভিভাবকরা তাকে ধের্য ধরে সংসার করার পরামর্শ দিয়েছিলেন সেদিন। কিন্তু রোকেয়া মানেনি তার অভিভাবকদের কথা। একবারের জন্যও ভাবেনি তার ভবিষ্যত কী হবে। বেরিয়ে পড়ে স্বামী সংসার ও মা-বাবা, ভাই বোনের স্নেহ-মমতা ত্যাগ করে। সেদিন তার চিন্তায় শুধু ছিল- নতুন করে বাঁচার জন্য একটা কাজ তার খুবই দরকার। কাজের সন্ধানে কুমিল্লার প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোকেয়া নামের ১৬ বছরের মেয়েটি সেদিন রওনা দেয় ঢাকার উদ্দেশে।

রাজধানী শহরে এসে সাতশ টাকার সামান্য বেতনে গার্মেন্টেসে কাজ শুরু করে রোকেয়া। সেদিনের সেই সাতশ টাকা বেতনের কাজটা পাওয়া রোকেয়ার কাছে ছিল সোনার হরিণের মত। শুরু হয় তার নতুন জীবনের সংগ্রামী পথচলা। জীবনে একা থাকার সংগ্রাম। অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয় তাকে সে সময়। সমাজের মানুষরূপী হিংস্র কিছু পুরুষের লালসার হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে বার বার একটা চাকরি ছেড়ে আরেকটা চাকরি খুঁজতে হয় তাকে। তবু জীবন যুদ্ধে পরাজয় স্বীকার করেনি দুখিনী রোকেয়া।

সেই ১৬ বছরের তরুণী রোকেয়া এখন ৪৭-এ। দীর্ঘ ৩১ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাতশ টাকা বেতনের গার্মেন্টস শ্রমিক রোকেয়া আজ একটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির প্রোডাকশন ম্যানেজার। বেতন ৫০ হাজারের কাছাকাছি। ছুটে চলছে দুর্বার গতিতে।

একদিন বলেছিলাম, রোকেয়া আপা বিয়ে করবে না? আমি তোমাকে আবার বিয়ে দিতে চাই। পাত্র দেখছি..।  আপা বলল, ‘ওই আমারে বিয়া করবো ক্যাডা? ভূতের মত দ্যাখতে একটা মাইয়া, সে আবার হইয়া গ্যাছে বুড়ি। এখন যদি কেউ বিয়া করতে চায় সে আমার টাকার লোভে বিয়া করতে চাইবো, ভালোবাইসা চাইবো না। আমি জানি আমারে কেউ ভালবাসবো না, ওইডা সবার ভাগ্যে জোটে না। এইডা সবাই ম্যাইন্না নেতে পারে না। যদি পারে তাইলে আমার মতো সুখি হইবো।’

আজও ভাবি, আপা কি সেদিন সত্যি বলেছিল। আসলেই কি সে সুখী?????

ঢাকাটাইমস/০৮মার্চ/এএইচ