শেষ হলো ডাকসু নির্বাচনের প্রচারণা

প্রকাশ | ১০ মার্চ ২০১৯, ০০:০৯

ঢাবি প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

দেশের দি¦তীয় পার্লামেন্ট খ্যাত ডাকসু (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শেষ হয়েছে। নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী শনিবার রাত ১২টায় ছিল প্রচারণার শেষ সময়।

সোমবার সকাল আটটা থেকে দুপুর দুইটা পর‌্যন্ত ভোট নেওয়া হবে ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচনের। আজ রবিবার কেউ কোনো ধরনের প্রচারণা চালাতে পারবে না। নির্বাচন ঘিরে আজ সন্ধ্যা থেকে ক্যম্পাসে প্রবেশে আরোপ করা হচ্ছে কড়াকড়ি।

আনুষ্ঠানিক প্রচারণার শেষ দিনে শনিবার ক্যাম্পাসে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, বাম ছাত্রসংগঠন, কোটা সংস্কার ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ছুটেছেন হলে হলে। ক্যাম্পাসের নানা প্রান্তে শিক্ষার্থীদের কাছে ভোট চেয়ে বিলি করেছেন লিফলেট। ছাত্রদলসহ কয়েকটি ছাত্রসংগঠন তাদের ইশতেহার ঘোষণা এবং হলে হলে প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠান করেছে।

ছাত্রলীগ হলগুলোতে প্যানেল পরিচিতি সভা করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করে ভোট প্রার্থনা করেছে।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল করেছে প্যানেল পরিচিতি সভা ও মিছিল। বাম ছাত্র সংগঠনের মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্য ব্যান্ড পার্টির তালে তালে মিছিলের মাধ্যমে ভোট চেয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা করেছেন মেয়েদের হলগুলোতে প্যানেল পরিচিতি সভা। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা গিয়েছেন হলগুলোর প্রতিটি কক্ষে।

ইতোমধ্যে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন। ভোট গ্রহণ করা হবে হলগুলোতে।

ডাকসুর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী মোট ভোটার ৪৩ হাজার ২৫৬ জন। কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে প্রার্থীসংখ্যা ৭৩৮। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫ পদের বিপরীতে ২২৯ জন এবং ১৮টি হল সংসদে ১৩টি করে ২৩৪ পদের বিপরীতে ৫০৯ জন প্রার্থী।

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে একজন শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫টি এবং হল সংসদে ১৩টি পদে একটি করে  মোট ৩৮টি ভোট দিতে পারবেন। এ জন্য সময় পাবেন ৩ মিনিট। ভোট গ্রহণ চলবে সোমবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত।

এবার ডাকসুতে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, কোটা আন্দোলন, প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্যসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নয়টি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্রভাবেও জিএসসহ বিভিন্ন পদে প্রার্থী হয়েছেন অনেকে।

নির্বাচন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে সাধারণ মানুষ ও যান চলাচলে ২৪ ঘণ্টার কড়াকড়ি আরোপ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

শনিবার ডিএমপির কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের জানান, রবিবার (১০ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টা থেকে নির্বাচনের দিন সোমবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া কেউ ঢাবি এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না। আর যান চলাচলের ক্ষেত্রে শুধু অনুমোদিত স্টিকারযুক্ত গাড়ি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, রবিবার (১০ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের সাতটি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করবে পুলিশ। স্থানগুলো হলো শাহবাগ, নীলক্ষেত, শহীদুল্লাহ হল ক্রসিং, রোমানা ক্রসিং, পলাশী, দোয়েল চত্বর ও জগন্নাথ হল ক্রসিং। ঢাবির শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের প্রবেশের জন্য আগে থেকে পাস সংগ্রহের অনুরোধ জানান ডিএমপি কমিশনার।

শেষ দিনে ছাত্রদলের ইশতেহার

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ঘোষণার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা প্রতিষ্ঠা, মেধার ভিত্তিতে আসন বণ্টন, পরিবহন সংকট নিরসনসহ ১৫ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। শনিবার সকালে বিশ^বিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইশতেহার তুলে ধরেন ছাত্রদল প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক। এ সময় ডাকসুর ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানহসহ বিশ^বিদ্যালয় শাখার নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পরে কেয়ক শ নেতাকর্মীকে নিয়ে মিছিল বের করে সংগঠনটি।

ছাত্রদলের ইশতেহারের অন্যতম অঙ্গীকারগুলোর মধ্যে রয়েছে তাদের মূলভিত্তি হবে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা, আধিপত্য ও সন্ত্রাসবাদমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস, সচল করা হবে পরিবেশ পরিষদ, নতুন হল নির্মাণ ও পুরাতন হল সংস্কারের উদ্যোগ, ১ম বর্ষ থেকে মেধাভিত্তিক আসন বণ্টন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার সম্পূর্ণরূপে আধুনিক ও বিশ্বমানের গ্রন্থাগারে রূপান্তর ও ডিজিটালাইজড করা। শিক্ষার্থীর চাহিদা পূরণে সর্বান্তক উদ্যোগ গ্রহণ। হল গ্রন্থাগার সমূহকে সমৃদ্ধি করণ। পরিবহন সংকট নিরসনে বাসের সংখ্যা ও রুট বৃদ্ধি করা ইত্যাদি।

স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদের ইশতেহার

হল ব্যবস্থাপনা, গণরুম, গেস্টরুম, শিক্ষক নিয়োগ, সিট সংকট, খাবার ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা, প্রকাশনা, খেলাধুলা, ছাত্রসংগঠন, পরিবহন সমস্যার সমাধানের রূপরেখা তুলে ধরে ইশতেহার ঘোষণা করেছে স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ। শনিবার দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে ইশতেহার তুলে ধরেন ডাকসুর স্বতন্ত্র সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এ এম আর আসিফুর রহমান।

আসিফুর রহমানের ১৬ দফা ইশতেহারে রয়েছে- চিন্তা, কথা বলা ও কাজের স্বাধীনতা; সব ক্যান্টিনে খাবারের কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ; বাধ্যতামূলক ত্রৈমাসিক নিরীক্ষণ; অনলাইনে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের সব কার্যক্রম; স্থায়ী নিয়োগের আগে শিক্ষার্থীদের দ্বারা মূল্যায়ন; উন্নত আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ; মেয়েদের হলে সার্বক্ষণিক ডাক্তার নিশ্চিতকরণ ও ডিসপেন্সারি স্থাপন; সবগুলো ছাত্রী হল রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা রাখা; প্রকাশনা সংস্থার নিয়মিত মনিটরিং; তদন্ত কমিটিতে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি; শিক্ষার্থী অনুপাতে হল নির্মাণ; ইত্যাদি। 

 

ছাত্রসমাজকে ধাওয়া প্রগতিশীল জোটের

ক্যাম্পাসে মিছিল করতে গিয়ে ধাওয়া খেয়েছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দল জাতীয় পার্টির অঙ্গসংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজের নেতাকর্মীরা। শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে এই ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ছয়জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্র সমাজের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী (জিএস) মামুন ফকির।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকি বলেন, ‘ছাত্র সমাজ পরিবেশ সংসদ কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়েও ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বারবার বলার পরও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়নি।’

গত ১১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে তফসিল ঘোষণা করেন ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমান। তফসিল অনুযায়ী ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র  বিতরণ এবং  ২৬ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি। যাচাই-বাছাইয়ের পর ৩ মার্চ প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়। ৫ মার্চ ছিল চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা।

তিন দশক পর আদালতের নির্দেশে ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে। তারপর আর নির্বাচনের মুখ দেখেনি ডাকসু।

(ঢাকাটাইমস/১০মার্চ/মোআ)