মহাবিপর্যয়ে বোয়িং ম্যাক্স এইট: ৮৬০০ ফ্লাইট থেকে শূন্য

প্রকাশ | ১৪ মার্চ ২০১৯, ১০:১৯ | আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৯, ১০:২৮

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
বিশ্বজুড়ে বন্ধ রয়েছে ম্যাক্স এইটের ফ্লাইট, ইনসেটে ইথিওপিয়ায় বিধ্বস্তের পর বিমানের ধ্বংসাবশেষ

বিশ্বব্যাপী মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে বোয়িং সেভেন হান্ড্রেড থার্টি সেভেন ম্যাক্স এইট বিমান। পাঁচ মাসের ব্যবধানে দু’বার বিধ্বস্তের ঘটনায় বিমানটির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই মডেলের বিমানের উড্ডয়ন নিষিদ্ধ করেছে। বিশ্বব্যাপী সপ্তাহে ম্যাক্স এইটের ৮ হাজার ৬০০ ফ্লাইট পরিচালনার কথা থাকলেও তার সবই বন্ধ করে দিয়েছে বিভিন্ন দেশ ও কোম্পানি।

মঙ্গলবার এই মডেলের বিমানকে নিরাপদ হিসেবে ঘোষণা করার একদিন পর বুধবার এর উড্ডয়ন নিষিদ্ধ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে বুধবার সকালে ম্যাক্স এইট না ওড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় কানাডা।

গত অক্টোবরে ইন্দোনেশিয়ায় বোয়িং সেভেন হান্ড্রেড থার্টি সেভেন ম্যাক্স এইট বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে আরোহী ১৮৯ জনের সবাই নিহত হন। ব্লাকবক্স উদ্ধারের পর পরীক্ষা করে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানানো হয়। গত রবিবার ইথিওপিয়ায় একই মডেলের বিমান বিধ্বস্ত হয়ে তাতে থাকা ১৫৭ জনের সকলে নিহত হন। এটি বিধ্বস্তের এখনো কোনো কারণ জানা যায়নি। তবে বিমান বিধ্বস্তের আগে পাইলট বিপদ সংকেত দিয়েছিলেন এবং ফিরে আসার চেষ্টা করেছিলেন বলে জানিয়েছে ইথিওপিয়া কর্তৃপক্ষ। এ কারণে মনে করা হচ্ছে ইথিওপিয়ার বিমানটিও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিধ্বস্ত হয়ে থাকতে পারে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, ইন্দোনেশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ তাদের বিমান বহর থেকে বোয়িং সেভেন হান্ড্রেড থার্টি সেভেন ম্যাক্স এইট বাদ দিয়েছে। বিশ্বের ৪৭টিরও বেশি এয়ারলাইন্স কোম্পানি ম্যাক্স এইটের ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে।

বিশ্বব্যাপী ম্যাক্স এইট নিয়ে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নিলেও ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) এবং বোয়িং এটিকে নিরাপদ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র এটির উড্ডয়ন অব্যাহত রেখেছিল। কিন্তু বুধবার ইথিওপিয়ায় বিধ্বস্ত বিমানের নতুন প্রমাণ হাতে আসার পর সিদ্ধান্ত বদল করে এফএএ।

২০১৭ সালে প্রথম আকাশে ওড়ে ‘বোয়িং সেভেন হান্ড্রেড থার্টি সেভেন ম্যাক্স এইট’ মডেলের বিমান৷ কম জ্বালানি ব্যবহার করতে পারা এই বিমানের ইঞ্জিন অন্যান্য বিমানের চেয়ে বেশ বড়৷ বোয়িং বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটির কথা জানতেন বোয়িংয়ের কর্মকর্তারা৷ কিন্তু এই ত্রুটি কাটিয়ে উঠতে যে পরিমাণ অর্থলগ্নির প্রয়োজন ছিল, তা না করে, কোম্পানি সিদ্ধান্ত নেয় নতুন আরেকটি বিমান ‘বোয়িং সেভেন হান্ড্রেড এইটটি সেভেন’ এর উন্নয়নে মনোনিবেশ করার৷ ফলে, সেভেন হান্ড্রেড থার্টি সেভেন ম্যাক্সে ত্রুটি থেকেই যায়।

বিশ্বব্যাপী সাড়ে তিনশটি সেভেন হান্ড্রেড থার্টি সেভেন ম্যাক্স এইট বিমান উড্ডয়ন করছিল৷ এই মডেলের সবচেয়ে বেশি বিমান আছে যুক্তরাষ্ট্রের সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের কাছে৷ এছাড়া আরও ৫ হাজার ১১০টি বিমান কেনার জন্য অর্ডার দিয়েছে বিশ্বের প্রায় ৬০টি এয়ারলাইন্স৷ ইউরোপে এই মডেলের বিমানের বড় ক্রেতা নরওয়েজিয়ান এয়ারলাইন্স, টিইউআই, টার্কিশ এয়ারলাইন্স ও রায়ানএয়ার৷

জরিপ সংস্থা ফ্লাইটরাডার টোয়েন্টি ফোরের হিসেব মতে, প্রতি সপ্তাহে আট হাজার ৬০০ ফ্লাইটে বোয়িং সেভেন হান্ড্রেড থার্টি সেভেন ম্যাক্স এইট ব্যবহার করা হয়। এর সবচেয়ে জনপ্রিয় রুট হলো উত্তর আমেরিকা ও চীন। সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস ও ডয়চে ভেলে

ঢাকা টাইমস/১৪মার্চ/একে