নিজেদের পরিচয় জানেন না দত্তক পাওয়া শ্রীলঙ্কান শিশুরা

প্রকাশ | ১৪ মার্চ ২০১৯, ১৪:১৮

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস

বছর তিরিশের ওলিভিয়া রাম্য ট্যানার শ্রীলঙ্কায় যান জন্মদাত্রী মায়ের খোঁজে৷ কিন্তু সেখানে পৌঁছে জানতে পারেন, এতদিন নিজের পরিচয় সম্পর্কে তিনি যা যা জানতেন তার সবটাই মিথ্যা৷

শুধু ট্যানারই নন, এমন মিথ্যার শিকার হয়েছেন কয়েকশ’ মানুষ৷ ১৯৭০ থেকে ১৯৯০ এর দশক পর্যন্ত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি, বিশেষ করে শ্রীলঙ্কা থেকে আনুমানিক ১১ হাজার শিশু দত্তক নেন আমেরিকা, কানাডা ও ইউরোপের মানুষ৷ কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই বাবা-মায়েরা জানতেন না যে এই দত্তক নেওয়া সম্পূর্ণভাবে অবৈধ৷ ট্যানারের সুইস বাবা-মা তাদের অন্যতম৷

সম্প্রতি এক ডাচ টেলিভিশন অনুষ্ঠানে জানা যায়, ১৯৭০ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে যে ৭৫০টি শিশুকে শ্রীলঙ্কা থেকে সুইস বাবা-মায়েরা দত্তক নিয়েছিলেন, তার মোট ৭০ শতাংশ শিশুর দত্তকই ছিল বেআইনি৷ খবর ডয়চে ভেলের।

সত্তরের দশকে রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে শ্রীলঙ্কা থেকে শিশু দত্তক নেওয়া এক ধরনের ‘ট্রেন্ড’ হয়ে ওঠে৷ ফলে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠে ‘শিশু রপ্তানি’ ব্যবসা৷ নানা অনাথ আশ্রম, এনজিও ও হাসপাতালে চলতে থাকে এই কাজ৷ শুধু তাই নয়, যে সমস্ত মায়েরা নবজাতকের পরিচর্যা করতে অক্ষম, তাদের কেন্দ্র করেও বাড়তে থাকে এই ব্যবসা৷

বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের সঙ্গে জড়িত সামাজিক লজ্জা বা অর্থনৈতিক দুর্বলতার মতো কারণ থাকায় বেআইনিভাবে দত্তক নেওয়া বা তার জন্য শিশু পাওয়া খুব একটা কঠিন বিষয় ছিল না তখন৷ তাই সহজেই এই চক্রের ফাঁদে পড়েন ট্যানারের বাবা-মায়ের মতো আরও অনেকে৷

ডাচ টেলিভিশন প্রতিবেদন প্রকাশ হবার পর অবশ্য সুইস সরকারের পক্ষ থেকে শুরু হয়েছে অনুসন্ধান পর্ব৷ আশা করা যাচ্ছে, আগামী বছরের মধ্যেই এই বিষয়ে আরো তথ্য জানা যাবে৷ ট্যানার জানান, এই বেআইনি দত্তক প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন শ্রীলঙ্কার বেশ কিছু ক্ষমতাশালী ব্যক্তিও৷

তৎকালীন সুইজারল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার বৃহত্তম দত্তক পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত অ্যালিস হোনেগারের এই বেআইনি কার্যকলাপে সম্পৃক্ততা এক সময় সুইস সরকার জানতে পারলে তার লাইসেন্স বাতিল করা হয়৷

সেন্ট গালেনের পরিবার পরিষেবা দপ্তরের পক্ষে প্রকাশিত সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, অনেকক্ষেত্রেই কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে অবগত ছিলেন৷ কিন্তু এতে কোনো ফল হয়নি৷

সেই সময় এই দত্তকপ্রক্রিয়াকে দেখা হত এক ধরনের সমাজসেবা হিসাবে৷ সাধারণত যেসব শিশুরা হয়ত স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে বঞ্চিত হত, তাদের উন্নত ভবিষ্যতের সুযোগ করে দিয়েছে এই প্রক্রিয়া৷ এমনটাই মনে করেন ট্যানারের অবৈধ দত্তকের সঙ্গে জড়িত ডন ডা সিলভা, একথা জানিয়েছেন ট্যানার নিজেই৷

সেন্ট গালেনের পরিবার পরিষেবা দপ্তরের কর্মী এলিজাবেথ ফ্রোলিচ বলেন, ‘সেই সময় সরকারের পক্ষ থেকে কোনো দৃঢ় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি৷ তাই সবাই দায়িত্ব এড়িয়ে গেছে৷’

বর্তমান ইউরোপে ট্যানারের মতো এমন অনেক মানুষ রয়েছেন, যারা এখনও খুঁজছেন তাদের পরিচয়৷ শুধু তাই নয়, ট্যানারের মতে, এমন অনেক মায়েরাও রয়েছেন শ্রীলঙ্কায়, যারা ক্রমাগত খুঁজে চলেছেন তাদের হারিয়ে যাওয়া শিশুদের৷

ঢাকা টাইমস/১৪মার্চ/একে