অভিজিৎ হত্যার চার্জশিট

আসামি মেজর জিয়াসহ ৬, অব্যাহতি ১৫

প্রকাশ | ১৪ মার্চ ২০১৯, ১৯:২৫ | আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৯, ১৯:৪০

আদালত প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় চার্জশিট দাখিল করেছে তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এতে চার্জশিটে আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়াসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে ১৫ জনের।

গতকাল বুধবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পুলিশ ইন্সপেক্টর মুহাম্মাদ মনিরুল ইসলাম ঢাকা সিএমএম আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন।

চার্জশিটভুক্ত অপর আসামিরা হলেন, আকরাম হোসেন ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে হাসিবুল ওরফে আব্দুল্লাহ, আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম ওরফে শামস ওরফে সাজ্জাদ, মোজাম্মেল হোসেন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার ও মো. আবু সিদ্দিক ওরফে সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে সাহাব। তাদের মধ্যে জিয়া ও আকরাম পলাতক।

অপর আসামিদের মধ্যে সায়মন, সোহেল ও আরাফাত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
চার্জশিটে অব্যাহতি চাওয়া ১৫ জন হলেন, সাদেক আলী ওরফে মিঠু, মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান গামা, আমিনুল মল্লিক, জাফরান হাসান, জুলহাস বিশ্বাস, আব্দুর সবুর ওরফে রাজু সাদ, মাইনুল হাসান শামীম, মান্না ইয়াহিয়া ওরফে মান্নান রাহি, আবুল বাশার, মকুল রানা, সেলিম, হাসান, আলী ওরফে খলিল, অনিক ও অন্তু। তাদের মধ্যে প্রথম ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া, মান্না ইয়াহিয়া ও আবুল বাশার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ায়, মকুল রানা বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়ায় এবং অপর পাঁচ আসামির নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতি চান তদন্তকারী কর্মকর্তা।

চার্জশিটে ৩৪ জনকে সাক্ষী করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। আগামী ২৫ মার্চ ধার্য তারিখে মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
আসামিদের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের (সংশোধনী ২০১৩) ৬ (১)(ক)(অ)/৬(২)/৮/৯/১০/১২/১৩ ধারায় চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।

তবে মামলার বাদী অভিজেতের বাবা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অজয় রায় দ-বিধির ৩০২/৩২৬/৩২৪/৩০৭/৩৪ ধারায় মামলাটি করেছিলেন।
চার্জশিটে বলা হয়, ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করে অপপ্রচার ও মহানবী (সা.)কে নিয়ে কট’ক্তি করার অভিযোগে মেজর জিয়ার নির্দেশ ও পরিকল্পনা এবং শারীরিক প্রশিক্ষক সেলিমের উপস্থিতিতে আনসার আল ইসলামের সদস্যরা অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করে।
হত্যাকাণ্ডের দুই দিন আগে থেকে জঙ্গি সায়মন, সোহেল, আকরাম ও হাসান অভিজিৎ রায়ের গতিবিধি অনুসরণ করেন। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে আরাফাত, খলিল ওরফে আলী, অন্তু ও অনিক হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়। হত্যাকাণ্ডের সময় মেজর জিয়া, শরীরচর্চা প্রশিক্ষক সেলিমসহ কয়েকজন ঘটনাস্থল ঘিরে রাখেন, যাতে তাদের সহযোগীদের কেউ আটক করতে না পারে। হত্যাকাণ্ডের পর তারা ঘটনাস্থলে হত্যায় ব্যবহৃত চাপাতি ফেলে যান।

চার্জশিটে অভিজিৎ হত্যায় ফেসবুকে উস্কানিদানকারী হিসেবে আসামি ফারাবিকে আসামি করা হয়েছে। তিনি অভিজিতকে হত্যার বিষয়ে ফেসবুকে ও অন্যান্য জায়গায় বিভিন্ন উসকানিমূলক পোস্ট দিয়েছে। সেজন্য ফারাবিকে প্ররোচনাকারী দেখানো হয়েছে।

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে একুশে বইমেলা থেকে বের হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির কাছে দুর্বৃত্তরা অভিজিৎ রায়কে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা এবং তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ ওরফে বন্যাকে গুরুতর আহত করে। উভয়ই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ছিলেন। অভিজিৎ যুক্তরাষ্ট্রে সফটওয়্যার প্রকৌশলী ছিলেন। আর বন্যা চিকিৎসক।

পরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি অভিজিতের বাবা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অজয় রায় শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। পরে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম বিভাগকে (সিটি) মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়।

(ঢাকাটাইমস/১৪মার্চ/মোআ)