স্বপ্নের পায়রা সেতুর ৮৪০ মিটার দৃশ্যমান

প্রকাশ | ১৫ মার্চ ২০১৯, ০৮:৪৯

ব্যুরো প্রধান, বরিশাল

বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের লেবুখালীর পায়রা সেতুর কাজ দ্রুত গতিয়ে এগিয়ে চলছে। এরই মধ্যে ৫০ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ করেছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে ৮৪০ মিটার সেতু। ২০২০ সালের মাঝামাঝি সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হতে পারে বলে আশাবাদী সড়ক জনপদ ও সেতু বিভাগ।

লেবুখালীর পায়রা নদীতে পায়রা সেতু বাস্তবায়ন হলে ঢাকার সঙ্গে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। বরিশাল থেকে পটুয়াখালী, বরগুনা ও সাগরকন্যা কুয়াকাটার যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সহজ হবে। ঢাকা থেকে কক্সবাজারের চেয়ে অর্ধেক সময়ে কুয়াকাটায় যাওয়া সম্ভব হবে।

বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের একমাত্র ফেরি লেবুখালী পয়েন্টের নির্মণাধীন এই সেতু ঘিরে অর্থনৈতিক ও জীবনমান উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় অধিবাসীরা। পায়রা সেতু, পায়রা বন্দর, সমুদ্রবন্দর ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘিরে এ অঞ্চলে গড়ে উঠছে বিভিন্ন স্থাপনা।

বরিশাল সড়ক জনপদ ও সেতু বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার পর্যটন এলাকা কুয়াকাটাকে ঘিরে এই অঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরসংলগ্ন আন্ধারমানিক নদীতে শেখ কামাল, হাজীপুর সোনাতলী নদীতে শেখ জামাল ও শিববাড়িয়া নদীর ওপর শেখ রাসেল সেতু নির্মাণ করে।

যোগাযোগব্যবস্থা আরো সহজ করতে বরিশাল কীর্তনখোলা ও খয়রাবাদ নদীতে নির্মাণ করা হয় শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত নামের দুটি সেতু। আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ১০ বছরে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে বরিশাল ও ঢাকাসহ সারা দেশের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। কিন্তু এর পরও দুর্ভোগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায় বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার সীমান্তবর্তী পায়রা নদী।

প্রতিদিন ঢাকা-বরিশালসহ বিভিন্ন রুটের সহস্রাধিক যানবাহন ফেরি পারাপারের মাধ্যমে চলতে হচ্ছে। দিনরাত দুটি করে ফেরি চললেও সকাল-বিকাল ২৪ ঘণ্টাই যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে থাকে নদীর দুই প্রান্তে। লেবুখালী ফেরিতে এই দুর্ভোগ যাত্রীদের নিত্যদিনের সঙ্গী।

এ জনদুর্ভোগ লাঘবে ২০১২ সালের এপ্রিলে চট্টগ্রামের কর্ণফুলি সেতুর আদলে চার লেনবিশিষ্ট পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্প প্রণয়ন করে সরকার। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ হাজার ২২ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়সাপেক্ষে এক হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ ও ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্ত পায়রা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

কুয়েত ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়ন এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধানে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বরাদ্দসংক্রান্ত জটিলতায় পিছিয়ে যায় পায়রা সেতু নির্মাণকাজ। ২০১৬ সালের ২৪ জুন নির্মাণকাজ শুরু করে চীনের প্রকৌশল সংস্থা লং জিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। তৃতীয় কর্ণফুলি সেতুর আদলে এক্সট্রা ডোজ কাবল স্টেট পদ্ধতিতে নির্মাণাধীন সেতুটির কিছু অংশ এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে।

সড়ক জনপদ ও সেতু বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আহমেদ শরীফ সজিব জানান, দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম ও নান্দনিক এই সেতুটি ৩৫০টি পাইলের ওপর ভর করে দাঁড়াবে। এ পাইলগুলো চীন-ভারতসহ বিভিন্ন দেশের প্রকৌশলী ও কারিগর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।

সেতুর দুই দিকে অ্যাপ্রোচ সড়কের দৈর্ঘ্য হবে এক হাজার ২৬৮ মিটার এবং প্রস্থ ২২ দশমিক ৮০ মিটার। সেতুর মাঝখানে থাকবে ১ মিটার প্রস্থের ফুটপাত। মূল সেতুতে স্প্যান থাকবে ৪টি। এর মধ্যে মাঝ নদীর দুটি স্প্যান ২০০ মিটার ও বাকি দুটি ১৫৫ মিটার করে। প্রতি স্প্যানের দূরত্ব ৬৩০ মিটার। আর নদী থেকে সেতুর উচ্চতা হবে ১৮ দশমিক ৩ মিটার।

আহমেদ শরীফ সজিব বলেন, সেতুর বরিশাল প্রান্তে ৩০ মিটার করে ১২টি ও পটুয়াখালী প্রান্তের ১৬টি পিলারসহ মোট ৩১টি পিলার স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। নদীর মধ্যে যে চারটি পিলার হবে তার মধ্যে বরিশাল প্রান্তের পিলার নির্মাণ শেষ হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে পটুয়াখালী প্রান্তের পাইল ও পিলারের কাজ শেষ হবে।

সড়ক জনপদ ও সেতু বিভাগের পায়রা সেতু প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নূর-ই-আলম বলেন, ‘পাইল ও পিলার স্থাপন কাজ শেষ বললেই চলে। এমনকি বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ প্রান্তে ৮৪০ মিটার সেতু এখন দৃশ্যমান। আগামী ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে আমরা আশাবাদী।’

পায়রা সেতুর প্রকল্প ব্যয় ১০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক। সেতু রক্ষায় নদী শাসনকাজের জন্য ওই টাকা বেড়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় নদীর তীর সংরক্ষণ, ব্লক ও জিও ব্যাগ ফেলা হবে। তবে এখনো বরাদ্দ অনুমোদন হয়নি। ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময় সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করেন এই কর্মকর্তা।

(ঢাকাটাইমস/১৫মার্চ/মোআ)