লিনউড মসজিদে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে যুবক ‘হিরো’

প্রকাশ | ১৫ মার্চ ২০১৯, ১৮:৩৪ | আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৯, ২০:২০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টার্চে আল নূর মসজিদ ও লিনউড মসজিদে খ্রিস্টান বন্দুকধারীদের হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জনের নিহতের তথ্য দিয়েছে দেশটি। গুলিবর্ষণের সময় যখন মুসল্লিরা লুটিয়ে পড়ছিল তখন অসীম সাহসের পরিচয় দিয়ে তিন ব্যক্তি হামলাকারীকে ঠেকাতে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। লিনউড মসজিদে বন্দুকধারীর অস্ত্র কেড়ে নিতে সক্ষম হন এক যুবক। ফলে সেখানে হতাহত কম হয়, বেঁচে যায় অনেক প্রাণ।  কিন্তু আল নূর মসজিদে বন্দুকধারীকে ঠেকানো যায়নি।

হামলায় বেঁচে যাওয়া দুজন প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে এসব তথ্য জানিয়েছে নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড অনলাইন। লিনউড মসজিদে বন্দুকধারীর অস্ত্র কেড়ে নেওয়া যুবককে ‘হিরো’ বলছে সংবাদমাধ্যমটি।

লিনউড মসজিদে হামলার সময় সেখানে ছিলেন সৈয়দ মাজহারউদ্দিন। তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন ঘটনা। বেঁচে যাওয়া মাজহারউদ্দিন বর্ণনা করেন তার বন্ধু কীভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বন্দুকধারীকে নিবৃত্ত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।

মাজহারউদ্দিনের ভাষায়, "চারপাশে মানুষ ভীত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। আমি গুলি থেকে নিজেকে আড়াল করতে চেষ্টা করলাম। আমি যখন আড়াল নিই তখন বন্দুকধারী লোকটি প্রধান প্রবেশদ্বারের দরজা দিয়ে ভেতরে আসে। মসজিদে তখন ৬০-৭০ জন লোক ছিল। মসজিদের মূল দরজার পাশে বৃদ্ধ লোকেরা বসে প্রার্থনা করছিলেন। বন্দুকধারী তাদের ওপর গুলি শুরু করে।’

মাজহারউদ্দীন বলেন, বন্দুকধারী এলোপাতাড়ি গুলি চালাচ্ছিল। এ সময় মসজিদ থেকে একজন লোক বন্দুকধারীকে মোকাবেলা করার চেষ্টা করে। সে ছিল তরুণ। সে মসজিদটির দেখাশোনা করত। সে একটি সুযোগ দেখেছিল এবং বন্দুকধারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিছু সময় ধস্তাধস্তির পর সে অস্ত্রটি কেড়ে নিতে সক্ষম হয়।

ওই যুবককে নায়ক আখ্যায়িত করে মাজহারউদ্দিন বলেন, যুবকটি বন্দুক কেড়ে নিলেও ওই শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তে ঠিকমতো ট্রিগার খুঁজে পায়নি। এর মাঝে বন্দুকধারী সরে পড়তে থাকলে যুবকটি তার পিছু দৌড়ে যায়। কিন্তু লোকটি একটি গাড়িতে উঠে পালিয়ে যায়, যেটিতে তার সঙ্গীরা অপেক্ষা করছিল।

মাজহগারউদ্দিন বলেন, তার চারপাশে বন্ধুরা গুলিবিদ্ধ হয়েছে। কারও বুকে, কারও মাথায়। তার এক বন্ধু ঘটনাস্থলে মারা যায়। আর এক বন্ধুর প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তিনি জরুরি সাহায্যের জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করছিলেন।

এরপর মাজহারউদ্দিন দৌড়ে বাইরে আসেন। ততক্ষণে পুলিশ আসে। কিন্তু তাকে মসজিদের ভেতরে ফিরে যেতে দেয়নি পুলিশ। তিনি তার আহত বন্ধুকে বাঁচাতে ভেতরে যেতে চেয়েছিলেন, যার রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।

প্রায় আধা ঘণ্টা পর অ্যাম্বুলেন্স আসে। কিন্তু ততক্ষণে তার বন্ধুটি মরে গেছে বলে আশঙ্কা মাজহারউদ্দিনের।

এদিকে ডিনস এভিয়ায় আল নূর মসজিদে বন্দুক হামলার ঘটনায় একজন বেঁচে থাকা ব্যক্তি ক্রাইস্টচার্চ হাসপাতালের বাইরে নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বর্ণনা দেন মসজিদের ভেতরের রক্তাক্ত দৃশ্যের। খালেদ আল-নোবানি নামের ওই ব্যক্তি এবং আরেকজন যুবক চেষ্টা করেছিলেন বন্দুকধারীর কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার।

আল নোবানি জানান, তার এক বন্ধু মারা যান বন্দুকধারীর গুলিতে, তবে তার তিনটি শিশুসন্তান পালাতে সক্ষম হয় সন্ত্রাসীর গুলি থেকে। বন্দুকধারীটি দুটি রাইফেল নিয়ে ঢুকে মসজিদে। এরপর সবাইকে সবাইকে- যুবক, বৃদ্ধ নারী সবাইকে গুলি করছিল।

এর আগে বন্দুকধারী গেট থেকে করিডোর বরাবর প্রথমে গুলি করে। বলেন নোবানি, ‘তখন করিডোরে দুজন মানুষ ছিল। এরপর সে ভেতরে ঢুকে নির্বিচারে গুলি করতে থাকে। আমি একটি দরজা দিয়ে গেটের দিকে চলে যাই, গেট ভেঙে প্রথমে বাচ্চাদের নিতে শুরু করি। আমার বন্ধুরা তখন সাহায্য করে।’ 

                                                     আল নোবানী (ডানে)  

‘একজন লোক বন্দুকধারীর দিকে ঝাঁপ দিয়েছিল রাইফেলটি ধরার জন্য। কিন্তু বন্দুকধারী তার দিকে সরাসরি গুলি করে।’ আল নোবানি বলেন, ‘আমিও তাকে অনুসরণের চেষ্টা করি।’ কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি করতে পারেননি তিনি।

আল-নোবানি বলেন, ‘বন্দুকধারীটি মসজিদের ভেতর গুলি চালানোর সময় বাজে বকছিল আর গান গাইছিল।

এরপর বন্দুকধারী মসজিদের বাইরে এসে প্রধান সড়ক আর মসজিদ ও পার্কের মাঝের রাস্তায় পলায়নরত মানুষের ওপর গুলি ছুড়তে থাকে। তিন সন্তান নিয়ে পালাচ্ছিলেন এক বাবা। বন্দুকধারীর গুলিতে প্রাণ হারান তিনি। তবে কয়েকজন কিউইর সহায়তায় বাচ্চাদের সরিয়ে নিতে পেরেছেন আল-নোবানি।

তখন পর‌্যন্ত ঘটনাস্থলে কোনো পুলিশ পৌঁছায়নি। পুলিশের পৌঁছুতে দেরি হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে নোবানি বলেন, ‘পুলিশ পৌঁছতে ২০ মিনিট সময় নেয়। আমরা শহরের মাঝখানেই আছি। কোনো ট্রাফিক ছিল না। সর্বোচ্চ দুই মিনিটের মধ্যে পৌঁছানো যেত।’

(ঢাকাটাইমস/১৫মার্চ/ইএস/মোআ)