বৈধভাবে অ্যামেচার রেডিও কিনবেন যেভাবে

প্রকাশ | ১৭ মার্চ ২০১৯, ১২:৩৫ | আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৯, ১৩:৩০

এ.বি.এম. তানভীর হাসান
অতিথি লেখক
ঢাকা টাইমস

অ্যামেচার রেডিও বা হ্যাম রেডিও পরিচালনার জন্য দেশে লাইসেন্স দেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এজন্য বিটিআরসি একটি পরীক্ষায় আয়োজন করে।পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের চাহিদার প্রেক্ষিতে কল সাইন ইস্যু করা হয়। এর পরের ধাপে কল সাইন প্রাপ্ত অ্যামেচার রেডিও অপারেটরগণ বিটিআরসির কাছ থেকে অ্যামেচার ব্যান্ডের রেডিও সেটের জন্য ছাড়পত্র সংগ্রহ করেন। এই ছাড়পত্র দিয়ে ভেন্ডরের মাধ্যমে রেডিও সেট আমদানি করতে হয়।

আমি বিটিআরসির লাইসেন্স প্রাপ্ত অ্যামেচার রেডিও অপারেটর। আমার কল সাইন সিয়েরা টোয়েন্টি ওয়ান ভিক্টর ইউনিফর্ম(S21VU)। আজ আমি ২০১৮ সালের অ্যামেচার রেডিও পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের জানাবে কীভাবে বিটিআরসি থেকে এনওসি সংগ্রহ করে ভেন্ডরের মাধ্যমে বৈধভাবে রেডিও সেট আমদানি করতে হয়।

আগেই বলে নেই, অ্যামেচার রেডিও সেট ব্যবহার করার জন্য আপনার কল সাইন থাকতে হবে। এই কল সাইন ইস্যু করে বিটিআরসি। এজন্য তারা বছরে একবার পরীক্ষায় নেয়। সর্বশেষ অ্যামেচার রেডিও পরীক্ষা হয়েছিল ২০১৮ সালে।

এই লেখাটা তাদের জন্য তারা বিটিআরসি থেকে ইতোমধ্যে কল সাইন পেয়েছেন কিংবা কল সাইনের জন্য আবেদন করেছেন। এছাড়াও যারা আগামীতে অ্যামেচার রেডিও অপারেটর হতে চান তারাও জানতে পারবেন কীভাবে রেডিও সেট সংগ্রহ করতে হয়।

একজন অ্যামেচার রেডিও অপারেটরকে বিটিআরসি তিন ধরনের রেডিও সেট ব্যবহারের অনুমতি দেয়। এগুলো হলো- ৫ ওয়াটের ভিএইচএফ, ইউএইচএফ রেডিও। যেটাকে অন্যরা বলেন ওয়াকিটকি। হ্যামরা বলেন হ্যান্ডি।

এছাড়াও আছে ২৫ ওয়াটের ভিএইচএফ, ইউএইচএফ রেডিও। যেটাকে হ্যামরা বলেন বেজ রেডিও। হ্যান্ডির মত এর মোবিলিটি থাকলেও এটা মূলত অ্যামেচার রেডিও স্টেশনের ব্যবহারের জন্য। তবে  দূর্যোগের সময় এই বেজ রেডিও গাড়ি ও নৌ-যানে ব্যবহারের অনুমতি দেয় বিটিআরসি।

সর্বশেষ রেডিও হলো ১০০ ওয়াটের এইচএফ রেডিও। এটিও একটি এই বেজ রেডিও। এই রেডিও দিয়ে অ্যামেচার রেডিও অপারেটরা বর্হিঃবিশ্বের অ্যামেচার রেডিও অপারেটরদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। হ্যামদের এই আন্তঃযোগাযোগ নিছক শখের। এখানে কোনো বাণিজ্যিক স্বার্থ নেই। বরং হ্যামরা নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে দুর্যোগের সময় রেডিও যোগাযোগ স্থাপন করে উদ্ধারকাজে অংশ নেন।     

কল সাইন পাওয়ার পর অ্যামেচার রেডিও অপারেটরকে রেডিও সেটের সন্ধান করতে হবে। যে সে রেডিও হলে চলবে না। তাকে অ্যামেচার ফ্রিকোয়েন্সির রেডিও সংগ্রহ করে ব্যবহার করতে হবে।

আমার পরামর্শ হলো-আপনি যদি নতুন অ্যামেচার রেডিও অপারেটর হোন তবে রেডিওতে আপনার হাতেখড়ি হোক ৫ ওয়াট দিয়ে। এজন্য আপনি বিটিআরসিতে ৫ ওয়াটের একটি ভিএইচএফ ও ইউএইচএফ ডুয়েল ব্যান্ডের রেডিও সেটের এনওসি-এর(ছাড়পত্র) আবেদন করুন।

আপনার কাঙ্খিত সেটটি যদি অ্যামেচার ব্র্যান্ডের হয় তবে আপনাকে বিটিআরসি ছাড়পত্র দেবে। এর পরের ধাপে আপনাকে এই সেট আমদানির জন্য ভেন্ডর খুঁজতে হবে। ভালো হয় যদি আপনি বিটিআরসির কাছ থেকে সেটের এনওসি নেবার আগেই বিটিআরসির তালিকাভূক্ত ভেন্ডরের কাছে গিয়ে আপনার কাঙ্খিত রেডিও সেটের মডেল বলুন। তিনি এই সেট আপনার জন্য আমদানি করে দিতে পারবেন কি না সেটা জানুন। দাম-দর নিয়ে আলোচনাটা সেরে ফেলুন।

ভেন্ডর যদি আপনাকে সেট আমদানি করিয়ে দেবার সম্মতি দেয় তবে এবার ওই সেটের এনওসির জন্য বিটিআরসির বরাবর আবেদন করুন। আবেদন পত্রে সেটের ব্রশিয়ার দিতে ভুল করবেন না। বিটিআরসি যাচাই-বাছাই শেষে যদি দেখে এটি হ্যাম ফ্রিকোয়েন্সির এবং তাদের নীতিমালার সঙ্গে যায় তবে আপনাকে এনওসি দেবে। এই এনওসিতে একটা মেয়াদ থাকবে। এই মেয়াদের মধ্যেই সেট আমদানি করতে হবে।

এবার এনওসি নিয়ে ভেন্ডরের কাছে যান। আপনি চাইলে ভেন্ডরের সহায়তা ছাড়াও সেট আমদানি করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে একটু বেশি ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হবে।

আপনি যে ভেন্ডরের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি বিটিআরসির এনলিস্টেট ভেন্ডর কি না সেটা যাচাই করতে একদম ভুলবেন না। প্রয়োজনে ভেন্ডরের কাছে তার লাইসেন্স দেখতে চান। তার লাইসেন্সের মেয়াদ কতদিন আগে সেটা পরখ করুন।

ভেন্ডরের লাইসেন্স বৈধ কিনা তা যাচাইয়ের জন্য বিটিআরসির সাহায্য নিতে পারেন ।

যদি দেখেন ভেন্ডর লাইসেন্স সঠিক এবং হালনাগাদ আছে তখন আপনি যে সেটের জন্য বিটিআরসি থেকে এনওসি পেয়েছেন সেই সেটের দাম জানতে চেয়ে আপনার কল সাইন উল্লেখপূর্বক ‘কোটেশন’ চাইবেন। ভেন্ডর তার অফিসিয়াল প্যাডে দাম-দর জানিয়ে বিলের ‘কোটেশন’ দেবে।

দাম-দর যদি আপনার সাধ্যের মধ্যে থাকে তবে আপনি তাকে সেট আমদানির জন্য ওয়ার্ক অর্ডার দেবেন। ওয়ার্ক অর্ডারে অবশ্যই ‘কোটেশন লেটারে’ র রেফারেন্স নম্বর থাকবে। এতে করে পরবর্তীতে কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আপনি ঝামেলামুক্ত থাকবেন।

এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো, ভেন্ডরকে দেয়া ওয়ার্ক অর্ডারে আপনি তাকে সেটে আমদানির জন্য অগ্রিম টাকা দিচ্ছেন কি না, দিলে তার পরিমান কত? এবং বাদবাকি টাকা কখন, কীভাবে পরিশোধ করবেন তার বিস্তারিত লিখে দেবেন। এছাড়াও রেডিও সেট আমদানির সময়সীমাও তাকে লিখে দেবেন। এসব তথ্য সম্বলিত ওয়াক অর্ডারটি ভেন্ডরের স্বাক্ষর ও সীল মোহর দিয়ে রিসিভ করিয়ে নিজের কাছে রাখবেন। 

রেডিও সেট বিমান বন্দরে আসার পর ভেন্ডর আপনাকে এয়ারওয়েজ বিল, কমার্সিয়াল ইনভয়েজ, প্যাকিং লিস্টের কাগজ দেবেন। এবার এসব কাগজের সঙ্গে আপনার এনওসি, অ্যামেচার রেডিও লাইসেন্স, ওয়ার্ক অর্ডার এবং ভেন্ডরের লাইসেন্সের কপিসহ বিটিআরসির কাছে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের জন্য এনওসির জন্য আবেদন করবেন।

বিটিআরসির কাছ থেকে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের এনওসি পাওয়ার পর সেটি ভেন্ডরকে সরবরাহ করবেন। ভেন্ডর সেটি দিয়ে বিমান বন্দর থেকে আপনার রেডিও সেট খালাস করবেন। এবার আপনার রেডিও সেট বুঝে নেবার পালা। ভেন্ডরের অর্থ পরিশোধ করে তার কাছ থেকে ডেলিভারি চালান নিয়ে নিন। এখানেই আপনার কাজ শেষ নয়। আপনার আরো একটি কাজ বাকি রয়েছে। সেটি হলো-আপনাকে রেডিও সেটের মডেল, সিরিয়াল নম্বর এবং এনওসি’সহ বিটিআরসিতে আবেদন করতে হবে।

এই আবেদনটি হবে আপনার লাইসেন্সে রেডিও সেটের তথ্য লিখে দেবার জন্য। পরিশেষে বিটিআরসি আপনার  অ্যামেচার রেডিও অপারেটরের প্রভিশনাল লাইসেন্সটি ফেরত নিয়ে আপনাকে ‘অ্যামেচার রেডিও অপারেটর লাইসেন্স’ দেবে। যেটাতে আপনার রেডিও সেটের তথ্য উল্লেখ থাকবে।

 (ঢাকাটাইমস/১৭মার্চ/এজেড)