‘ঋণের টাকা শোধ করবে কে?’

প্রকাশ | ১৯ মার্চ ২০১৯, ২১:৫১

ফরহাদ খান, নড়াইল

স্বামী সংসারে অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হয়ে প্রায় পাঁচ বছর আগে শিশু সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন আন্না বেগম। কৃষক পরিবারে বাবার বাড়িতে মাথা গোঁজার ঠাঁই হলেও দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করা কঠিন ছিল তাদের। এ পরিস্থিতিতে আন্না বেগম ঋণের টাকায় ১১ বছরের শিশু সন্তানকে কিনে দেন ব্যাটারিচালিত ভ্যান। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার পাশাপাশি শিশু সন্তান সাব্বির ভ্যান চালিয়ে সংসারের চাকা সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছিল। এরই মধ্যে নিষ্ঠুর ও নির্মমতার শিকার হলো সাব্বির।

গত ১৫ মার্চ বাড়ি থেকে ভ্যান নিয়ে বেরিয়ে সাব্বির তিন দিন পর বাড়িতে ফিরল ঠিকই, তবে জীবন্ত নয়; লাশ হয়ে। ছেলের এই ফেরাকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না মা আন্না বেগম। তাই বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি।

সোমবার দুপুরে ছেলের মরদেহের সামনে মায়ের এ আর্তনাদ কাঁদিয়েছে উপস্থিত সবাইকে। মর্মস্পর্শী এ ঘটনা নড়াইল পৌর এলাকার বিজয়পুরের।

সাব্বিরের মা আন্না বেগম জানান, ‘১৫ মার্চ বিকালে ব্যাটারিচালিত ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় সাব্বির। পরে আর বাড়িতে ফিরে আসেনি সে। গত রবিবার (১৭ মার্চ) সন্ধ্যায় নড়াইল-গোবরা সড়কের কাড়ারবিল এলাকা থেকে সাব্বিরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে তার ভ্যানের সন্ধান পাওয়া যায়নি।’

তিনি আরো জানান, ‘সাব্বিরের বাবা তাদের কোনো খোঁজ-খবর নেন না। এ কারণে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই সংসারের দায়িত্ব নিতে হয়েছে সাবিবরকে। প্রায় দুই মাস আগে রাস্তা থেকে সাব্বিরের ভ্যানটি চুরি হয়ে গেলে সংসারের চাকা সচল রাখতে দুটি সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ছেলেকে নতুন একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান কিনে দেন তিনি। সাব্বিরকে হত্যা করে এই ভ্যানটিও দুর্বৃত্তরা ছিনিয়ে নিয়েছে বলে ধারণা করছে আন্না বেগমসহ পরিবারের লোকজন।’

আন্না বেগম আর্তনাদ করে বলেন, ‘সংসারের একমাত্র অবলম্বন আমার শিশু সন্তানকে হত্যা করল কে? ভ্যানটি নিয়ে গেলেও সাব্বিরকে হত্যা করল কেন? কী দোষ ছিল তার। এখন কে আয় করবে, কীভাবে ঋণের টাকা শোধ করব?’

বিজয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সহ-সভাপতি মাহবুব আলম ফকির বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সাব্বির খুব বিনয়ী ছিল। ক্লাসে ওর রোল ছিল ১৯। সংসারে অনেক অভাব-অনটনের মধ্যেও ভ্যান চালিয়ে পড়ালেখা করছিল। ভ্যানের প্যাডেল পায়ে ঠিকমত ঘুরাতে না পারলেও ভ্যানটি ব্যাটারিচালিত হওয়ায় হ্যান্ডেল ধরে চালকের আসনে বসে থাকত সাব্বির। এভাবেই ভ্যান চালিয়ে আয় করছিল সে।’

সদর থানার এসআই হাবিবুর রহমান জানান, ‘নড়াইল সদর হাসপাতাল সাব্বিরের মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। হত্যা না অন্য কোনো কারণে সাব্বিরের মৃত্যু হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

সাব্বির কালিয়া উপজেলার খড়রিয়া গ্রামের শাহাদাত হোসেনের ছেলে। তবে মায়ের সঙ্গে নড়াইল পৌর এলাকার বিজয়পুরে নানা বাড়িতে থাকত সে।

(ঢাকাটাইমস/১৯মার্চ/এলএ)