বস্তিবাসীর বাধা উপেক্ষা করে রাজশাহীতে উচ্ছেদ

প্রকাশ | ২০ মার্চ ২০১৯, ১৬:০৪

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী

বস্তিবাসীর বিক্ষোভ আর বাধা উপেক্ষা করেই রাজশাহীতে দ্বিতীয় দিনের মতো উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বুধবার নগরীর কোর্ট স্টেশন এলাকায় এই উচ্ছেদ চলে। নগরীর এই এলাকাটিতে রেললাইন রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়কের মাঝের অংশ দখল করে বহু বছর আগে থেকেই গড়ে উঠেছিল বসতি। কাঁচা বাড়ির পাশাপাশি ছিল পাকা দালান এবং দোকানপাট। মঙ্গলবার থেকে চারখুটা মোড় থেকে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করে রেল কর্তৃপক্ষ।

প্রথম দিনও বাধার মুখে পড়েন উচ্ছেদ কর্মীরা। তারপরেও স্কেভেটর দিয়ে দোকানপাট এবং আধাপাকা ও কাঁচা ঘরবাড়ি গুড়িয়ে দেয়া হয়। ভেঙে ফেলা হয় একটি দোতলা দালান। দ্বিতীয় দিনেও বাধার মুখে পড়েন উচ্ছেদকারীরা। এ সময় বস্তিবাসী রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ও ইট ফেলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এতে কিছু সময়ের জন্য সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিলে যান চলাচল শুরু হয়। আবার শুরু হয় উচ্ছেদ।

বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, চারখুটা মোড় থেকে পশ্চিমে বহরমপুর পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তবে কোর্ট স্টেশন এলাকার একটি মার্কেট ভাঙা হয়নি। তাদের দাবি, এই মার্কেটে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল আলম বেন্টুর একটি বিলাসবহুল ব্যক্তিগত কার্যালয় রয়েছে। সে জন্য এই মার্কেটটি ভাঙা হয়নি। তারা বলেছেন, ভাঙলে সবকিছুই ভাঙতে হবে। সে জন্য তারা বিক্ষোভ করেছেন।

তবে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতার ওই ব্যক্তিগত কার্যালয়সহ মার্কেটটির জমিগুলো তাদের ইজারা দেয়া আছে। এর মেয়াদ রয়েছে ২০১৯ সাল পর্যন্ত। তাই সেগুলো এখন উচ্ছেদ করা সম্ভব হলো না। তবে এই ইজারার মেয়াদ শেষ হলে সেটির আর মেয়াদ বৃদ্ধি করা হবে না।

প্রথম দিন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের একটি স্কেভেটর নিয়ে গিয়ে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালায় রেল কর্তৃপক্ষ। তবে দ্বিতীয় দিন আরও একটি স্কেভেটর ভাড়া করে আনা হয়। ফলে দ্রুতই অবৈধ স্থাপনাগুলো মাটির সাথে মিশে যায়। উচ্ছেদ কার্যক্রম আরও চলবে কি না সে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা ইউনুস আলী বলেন, বেদখল সরকারি জমি উদ্ধারের জন্য সরকারের তরফ থেকে কঠোর নির্দেশনা এসেছে। তাই এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, রেলওয়ের জমিতে বসতি এবং দোকানপাট গড়ে ওঠার কারণে নগরীর সৌন্দর্য যেমন নষ্ট হয়েছে তেমনি ট্রেনে কেটে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছিল। এখন উচ্ছেদ শেষে এ এলাকায় রেললাইনের পাশে নিরাপদ দূরত্বে ওয়াকওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

রেলওয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নুরুজ্জামান বলেন, প্রায় তিন দশক ধরে রেললাইনের ধারে এসব অবৈধ স্থাপনা ছিল। সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার এবং রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা নিরাপদ করতে এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। আমরা আগে থেকেই নোটিশ দিয়েছিলাম, মাইকিং করে মালামাল ও স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার জন্য দখলকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। এরপর অভিযান চালানো হয়েছে। দুই দিনে আট শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২০মার্চ/আরআর/জেবি)