‘মৃত্যু এই দেশে খুব সহজ, অনেক বেশি সহজ’

প্রকাশ | ২০ মার্চ ২০১৯, ১৯:১৩

ফাতেমা তুজ জোহরা

সবাই রক্তাক্ত আইডি কার্ডের ছবি দিচ্ছে। আমি দিলাম ফাল্গুনের খুব সুন্দর হাসি খুশি একটি ছবি। ফাল্গুনের ক্লাসেও বলেছিলো- ‘ম্যাডাম, আমরা আগে কখনো ফাল্গুন উদযাপন করিনি। এবার খুব ভালো লাগছে।’

ছেলেটি আমার ছাত্র। আব্রার নাম। বিইউপিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিলো। বাকিদের মতো ও হয়তো হাসি মুখে বলেছিলো ‘আমি ডিপ্লোম্যাট হবো’। প্রথম বেঞ্চে বসতো। স্নায়ু যুদ্ধ, উপনিবেশবাদ নিয়ে লেকচার এর সময় আমার আগেই অনেক কিছু পটাপট বলে দিতো। এসির রিমোট নিয়ে বসে থাকতো দেখে বকাও দিয়েছিলাম। ক্লাস টেস্টের খাতা পেয়ে বলেছিলো, ‘ম্যাডাম, আমি তো সব পয়েন্ট লিখেছি। আর কি লিখলে আমি দশে দশ পাবো!’

আমার আজকে ৮.৩০ এ ক্লাস ছিলো ওদের সাথে। আমার ক্লাস করার জন্যই ও বাসা থেকে বের হয়েছিলো। রাস্তা পার হবার সময় ও কি ভাবছিলো জানিনা। কয়েক সেকেন্ড আগেও হয়তো ভাবছিলো ক্লাসে যেয়ে প্রথম বেঞ্চে বসবে। বাবা একটু দূরে দাঁড়ানো। নিজের রক্ত পানি করে লালন পালন করা ১৮-১৯ বছরের সন্তানকে বাস চাপা দিয়ে চলে গেলো। ১১টায় গিয়ে দেখলাম জেব্রা ক্রসিং রক্তে ভেজা। সবাই যখন WE WANT JUSTICE বলে স্লোগান দিচ্ছে, ও তখন অন্য জগতে। ও হয়তো জানেও না ওর বন্ধুরা হাউমাউ করে কাঁদছে ওর জন্য।

ওর বন্ধুরা একদিন ব্যাচ ট্যুরে যাবে, পাস করবে, চাকরি করবে, বৃদ্ধ হবে। আব্রারের কথা মনে করলে হয়তো এই সুন্দর বাচ্চা ছেলেটির কথা স্মরণ করবে। ওর বয়স বাড়বে না। ইউক্যামে ওর নাম আর রোল ৫৯ থেকে যাবে। ওর বাবা-মা, ভাই কিভাবে এই শোক নিয়ে বাঁচবে জানিনা।

আল্লাহ ওনাদের ধৈর্য দান করুন আর আব্রারকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব করুক। ছেলেটির মৃত্যু যন্ত্রণা ভাবলে চোখের পানি আটকানো যাচ্ছে না। আমি কিভাবে ওদের ক্লাস নিবো জানি না।

আগামীকাল আমি বেঁচে থাকবো কি না সেটাও অনিশ্চিত। মৃত্যু এই দেশে খুব সহজ, অনেক বেশি সহজ।

লেখক: প্রভাষক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, বিইউপি।