চুরির অভিযোগে বৃদ্ধাকে গাছে বেঁধে নির্যাতন

প্রকাশ | ২০ মার্চ ২০১৯, ২৩:২৭

চাঁদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে এক বৃদ্ধাকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করেছে একটি প্রভাবশালী পরিবার। বিষয়টি প্রথমে গোপন থাকলেও ২০ মার্চ ভিডিও’র মাধ্যমে ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ে। এতে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। ঘটনার পর থেকে নির্যাতনকারীরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন।

গত ১৮ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার টামটা দক্ষিণ ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের মোল্লা বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

এলাকাবাসী জানায়, ‘ওই গ্রামের দক্ষিণ পাড়া মোল্লা বাড়ির মিজানুর রহমান ও সুমন তাদের বাড়ির জায়গায় বেড়া দিতে গেলে একই বাড়ির শহিদুল্লার স্ত্রী বেলুয়া খাতুন বাধা দেন। এতে মিজান ও সুমন বেলুয়া খাতুনের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। ওই সময় মিজানের স্ত্রী কাজল বেগম ও সুমনের স্ত্রী রোজিনা বেগম ঘটনাস্থলে এসে বেলুয়া খাতুনকে আক্রমণ করে। এক পর্যায়ে তারা বেলুয়া খাতুনকে তার মাথার চুল ধরে মাটিতে হেঁচড়ে নিজ বাড়ির উঠোনে নিয়ে গাছের সাথে বেঁধে মোবাইল ও টাকা চুরির অপরাধে বেদম মারধর করতে থাকেন। বিষয়টি পাশের বাড়ি থেকে জনৈক ছাত্র ভিডিও করে সংবাদকর্মীদের সরবরাহ করে।’

পরে পুলিশ এসে বেলুয়া খাতুনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দেন।

এ ব্যাপারে বেলুয়া খাতুনের স্বামী শহিদুল্লাহ বুধবার আদালতে একটি মামলা করেন।

শহিদুল্লাহ্ বলেন, ‘আমি আমার পিতার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছি। দুই দলিলে সাড়ে ২৮ শতক জায়গা ক্রয় করে বসবাস করছি। আমার নিজ নামে বিবাদীদের পিতা আবু তাহেরের কাছ থেকে সাড়ে ১৩ শতক জায়গা ক্রয় করেছি, অথচ ওই জায়গা বিবাদীরা দখল দিয়ে আমাকে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করেছে। ঘটনার দিন সকালে বিবাদী আবু তাহের গং আমার খরিদা জায়গায় বেড়া দিতে এলে বেলুয়া খাতুন তাদের বাধা দেয়। বাধা দেয়ার কারণে তারা আমার স্ত্রীকে তাদের বাড়িতে নিয়ে মোবাইল ও টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে নির্মম নির্যাতন করে। আমি অসহায় বলে বিচার পাই না। অপারগ হয়ে আজ  আদালতের মামলা করেছি।’

আহত বেলুয়া খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামীর জায়গায় প্রতিপক্ষের মিজান ও সুমন বেড়া দিতে এলে তাদের বাধা দেই। তারা আমার বাধা উপেক্ষা করে বেড়া দেয়ার জন্য চেষ্টা করে। আমার শত বাধাও তাদের টলাতে পারেনি। তারা আমাকে তাদের বাড়িতে ধরে নিয়ে মোবাইল ও টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রেখে নির্মম নির্যাতন করে। আমি শত চেষ্টার পরেও তাদের দমাতে পারেনি। পরে গাছ থেকে বাড়ির উঠোনে মোটা দড়ি দিয়ে বেঁধে শুয়ে রাখে।’

অভিযুক্তদের বাড়ি গেলে সুমনের স্ত্রী রোজিনা বেগম ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে রোজিনা বেগম বলেন, ‘চুরির ঘটনায় নয়, সম্পত্তিগত বিরোধের জের ধরে আমার ভাসুর শহিদুল্লার স্ত্রী বেলুয়া বেগমকে ধরে এনে গাছের সাথে বেঁধে রাখে। আমাদের সাথে জায়গা জমি নিয়ে অনেক দিন ধরেই তাদের বিরোধ চলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী সুমন মাঠে কাজ করে, আর ভাসুর প্রবাসে থাকেন। তারা সাধারণ মানুষ। উত্তেজিত হয়েই তারা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।’

শাহরাস্তি থানার ওসি শাহআলম জানান, ‘ঘটনাস্থল থেকে নির্যাতিত মহিলাকে পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। পরবর্তীতে তারা থানায় মামলা না করে আদালতে মামলা করেছে। আদালতের কাগজ থানায় এলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

(ঢাকাটাইমস/২০মার্চ/এলএ)