মোদিকে চ্যালেঞ্জ দলিত যুবকের
একশো কোটি মানুষের দেশে নিজের কথা বহুলোকের কাছে পৌঁছে দেয়া বেশ কঠিন কাজ। কিন্তু সেই কঠিন কাজটাই করার জন্য নির্বাচনের সময়টা বেছে নিয়েছেন ভারতের এক দলিত যুবক। চ্যালেঞ্জ হিসেবে নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে ভোটে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলিত সমাজের যুব নেতা চন্দ্রশেখর আজাদ। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোদির বিরুদ্ধে তার জিতে আসা কেন্দ্র বারানসী থেকে ভোটে দাঁড়াচ্ছেন আজাদ।
২০১৪ সালের নির্বাচনে বারানসী কেন্দ্র থেকে তিন লক্ষেরও বেশি ভোটে জিতেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। এবারে সেই কেন্দ্র থেকেই তিনি লড়বেন কি-না, তা এখনও চূড়ান্ত নয়। আর চন্দ্রশেখর আজাদ হয়ত প্রধানমন্ত্রীকে সত্যিকারের কোনও চ্যালেঞ্জ করতে পারবেনও না।
কিন্তু বারানসী থেকে ভোটে জেতাটা তো তার লক্ষ্য নয়। তিনি চান এই হাই-প্রোফাইল নির্বাচনে লড়াই করে নিজের বক্তব্য এবং নিজের সমাজের বক্তব্য তুলে ধরতে। চন্দ্রশেখর আজাদের ‘ভীম সেনা’ নামের একটি সংগঠন রয়েছে। সেই সংগঠনের হয়েই তিনি বারানসীতে ভোটে লড়তে চলেছেন। গত বছর তিনেকে আজাদ হয়ে উঠেছেন দলিতদের একজন আইকন।
দলিতদের নিচুজাতের মানুষ বলে এখনও অনেকেই মনে করেন। তাদের নানা অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন। ভারতীয় সমাজের কড়া অনুশাসনের কারণে অসম্মানও করা হয় দলিতশ্রেণীর মানুষদের।
গত সপ্তাহে উকিল থেকে রাজনৈতিক নেতা হয়ে ওঠা এই যুবক রাজধানী দিল্লিতে তার কয়েক হাজার সমর্থকের সামনে ঘোষণা করেন যে তিনি সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানাতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে- তারই নিজের এলাকা বারানসীতে।
পার্লামেন্ট স্ট্রিটের ওই সভায় তার গাড়িটা পৌঁছাতেই হাজার হাজার যুবক নীল পতাকা উড়িয়ে স্লোগান দিয়ে উঠেছিল ‘জয় ভীম, ভীম জিন্দাবাদ’ বলে। ‘ভীম’ বলতে ভারতের সংবিধানের রূপকার ভীমরাও আম্বেদকরকে বোঝানো হয়। আম্বেদকরকেও ভারতের দলিতশ্রেণীর মানুষ আইকন হিসেবে মনে করে।
সমর্থকদের স্লোগানের মধ্যেই তিনি প্রধানমন্ত্রী আর তার দল বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ভারতের বিশ কোটি দলিতদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি বারানসী যাচ্ছি। আপনাদের সকলের সহযোগিতা দরকার উনাকে পরাস্ত করার জন্য। আমি বারানসী থেকে লড়ব, কারণ উনি দলিত বিরোধী আর এটা উনাকে বুঝিয়ে দেওয়া দরকার যে এই অবস্থানের জন্য উনাকে ফল ভোগ করতে হবে। আমরা সবাই মিলে ভারতের ভবিষ্যত রচনা করব।’
এর আগেও আজাদ বলেছিলেন, ‘২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দলিতদের ওপরে অত্যাচার বেড়ে গেছে। তাই আমরা যদি আবার তাকে ভোট দিই, সেটা হবে চূড়ান্ত বোকামি।’
চন্দ্রশেখর আজাদের রাজনীতির মূল ভিত্তিই হল, ‘দৈনন্দিন জাতিগত বৈষম্যে’র বিরুদ্ধে লড়াই করা। যে বৈষম্যের শিকার তিনি নিজে এবং তার পরিবার। আর তার সমাজের মানুষকে নিত্যদিন সহ্য করতে হয়।
একটি কলেজে দলিত ছাত্রদের মাঝে মাঝেই মারা হত, তাদের দোষ ছিল যে কলেজের কল থেকে তারা পানি খায়, বসার বেঞ্চগুলো পরিষ্কার করতে চায় না। ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতেই তিনি ২০১৫ সালে ভীম সেনা তৈরি করেন।
দু’বছর পরে, ভীম সেনা আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে। তথাকথিত উচ্চবর্ণের ঠাকুর সম্প্রদায়ের সঙ্গে দলিতদের সংঘর্ষ হয় উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরে। সেখানেই আজাদের আদি বাসস্থান। ওই সংঘর্ষের ঘটনায় আজাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। জাতীয় নিরাপত্তা আইনে ধরা পড়ে ১৬ মাস তিনি জেলে বন্দী ছিলেন। জেলে থাকার কারণে তার প্রতি জনসমর্থন বেড়ে যায়।
আজাদ মনে করেন ‘যে অঘোষিত জরুরী অবস্থা চলছে ভারতে, তার বিরুদ্ধে লড়াই করতেই হবে। আমরা শান্তির স্বপক্ষে, কিন্তু আমরা কাপুরুষ নই। আমরা জুতো তৈরি করতে যেমন পারি, তেমনই ওই জুতো দিয়ে কী করে কাউকে পেটাতে হয়, সেটাও জানি।’
নিজের সমাজের কাছে তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতার আরেকটা কারণ হল যে চিরাচরিতভাবে যেসব পেশার কারণে দলিতদের নিচু চোখে দেখা হয়, সেগুলোকে আজাদ নিয়মিতভাবে চ্যালেঞ্জ জানাতে থাকেন।
তিনি প্রথম জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যখন একটি গ্রামের বাইরে একটা সাইনবোর্ডের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন। ওই সাইনবোর্ডে লেখা ছিল, ‘দা গ্রেট চামার’- পশুদের চামড়া ছাড়িয়ে নেন যারা, তাদেরকে অপমানসূচক অর্থে চামার বলে সম্বোধন করে অনেকে।
তার অন্যান্য বেশিরভাগ ছবিতেই দেখা যায় পাকানো গোঁফে মোচর দিচ্ছেন তিনি। চোখে সানগ্লাস আর রয়্যাল এনফিল্ড মোটরসাইকেলে চেপে ঘুরছেন তিনি। তার এই ছবিগুলো দলিতদের মধ্যে, বিশেষ করে তরুণ আর যুবক এবং যাদের মধ্যে উচ্চাকাঙ্খা রয়েছে, তাদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
ঢাকা টাইমস/২১মার্চ/একে