বিশ্ব নেতৃত্বের আদর্শ এখন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ | ২১ মার্চ ২০১৯, ১১:২৪ | আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৯, ১৩:১০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস

জেসিন্ডা কেট লরেল আর্ডার্ন৷ নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী থেকে তিনি এখন পরিণত হয়েছেন বিশ্বকে শান্তির পথে নেতৃত্ব দেয়ার দূত হিসেবে৷ গত শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে খ্রিষ্টান সন্ত্রাসীর হামলায় ৫০ জন মুসল্লি নিহতের পর তার অভূতপূর্ব পদক্ষেপ ও সহানুভূতি নজর কেড়েছে গোটি বিশ্বের।

জেসিন্দাকে নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে। সেখানে তার জন্ম থেকে বেড়ে ওঠার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

১৯৮০ সালে জন্ম নেয়া আর্ডার্নের বেড়ে ওঠা মুরুপাড়া নামে নিউজিল্যান্ডের মাউরি আদিবাসী অধ্যুষিত একটি ছোট্ট শহরে৷ যেখানে শিশুদের পায়ে দেয়ার মতো জুতা ছিল না, এমনকি দুপুরে তারা খাবারও পেত না৷ এই ঘটনাই তাকে রাজনীতিতে উদ্বুদ্ধ করে৷ উচ্চ মাধ্যমিক শেষে আর্ডার্ন পড়াশোনা করেন যোগাযোগ বিদ্যায়৷ তার আগে ১৭ বছর বয়সেই যুক্ত হন নিউজিল্যান্ডের লেবার পার্টির রাজনীতিতে৷

স্নাতক শেষ করে আর্ডার্ন নিউজিল্যান্ডের লেবার পার্টির একজন সংসদ সদস্যের অধীনে গবেষক হিসেবে কাজ করেন৷ ২০০৫ সালে পাড়ি জমান ব্রিটেনে৷ আড়াই বছর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের মন্ত্রীসভার দপ্তরে চাকরি করেন৷ ২০০৭ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব সোশ্যালিস্ট ওয়েলথের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘুরে বেড়িয়েছেন আলজেরিয়া, চীন, ভারত, ইসরায়েল, জর্ডান ও লেবাননে৷

২০০৮ সালে আর্ডার্ন লেবার পার্টির সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ১৩ হাজার ভোটে হেরে যান৷ কিন্তু দেশটির সংবিধানিক নিয়মে তিনি সংসদে যাওয়ার সুযোগ পান৷ ২৮ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ রাজনীতিবিদ হিসেবে জায়গা করে নেন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভে৷

২০১৭ সালে লেবার পার্টির উপ প্রধান নির্বাচিত হন আর্ডার্ন৷ নির্বাচনের দু’মাস আগে দলটির প্রধান পদত্যাগ করলে সেই ভারও চাপে তার কাঁধে৷ নির্বাচনি প্রচারে তরুণদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হন আর্ডার্ন৷ তাকে নিয়ে এসময় দেশটিতে জনপ্রিয়তার যে ঢেউ উঠে, তা পরিচিত ‘জেসিডামেনিয়া’ নামে৷

মাত্র দু’মাসের নেতৃত্বে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাই দলকে নির্বাচনে বিজয়ী করেন আর্ডার্ন৷ ২০১৭ সালে ৩৮ বছর বয়সে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন৷ নিউজিল্যান্ডের ১৫০ বছরের ইতিহাসেও তিনি সবচেয়ে কম বয়সি সরকার প্রধান৷

আর্ডার্ন সমকামী বিবাহের সমর্থক৷ জলবায়ু পরিবর্তন, শিশু দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চকিত৷ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নিউজিল্যান্ডের সরকার হবে সহানুভূতিশীল৷ ২০১৮ সালে ‘ফোর্বসের পাওয়ার উইমেনের’ তালিকায় জায়গা করে নেন তিনি৷ আছেন টাইম ম্যাগাজিনে সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকাতেও৷

টিভি উপস্থাপক ক্লার্ক গেফোর্ডকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি৷ ২০১৮ সালের ২২ জুন বেনজির ভুট্টোর পর বিশ্বের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বকালে সন্তানের জন্ম দেন আর্ডার্ন৷ এজন্য মাত্র ছয় সপ্তাহের মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়েছিলেন তিনি৷

বিশ্বে প্রথমবার কোনো প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের কক্ষে সন্তান নিয়ে বক্তৃতা দিতে যান৷ তিনি জেসিন্ডা আর্ডার্ন৷ গত বছর নেলসন ম্যান্ডেলা পিস সামিটে অংশ নিয়ে আর্ডার্ন বিশ্ব গণমাধ্যমে খবরের শিরোনাম হয়েছেন৷ বক্তৃতা দেয়ার সময় সন্তান ছিল সঙ্গী ক্লার্ক গেফোর্ডের কোলে৷

ক্রাইস্টচার্চে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৫০ জনকে হত্যার পর জেসিন্ডা আর্ডার্নকে নতুন করে চেনে বিশ্ব৷ এই ঘটনার অভিযুক্তকে কোনো কার্পণ্য না করেই সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হিসেবে অভিহিত করেন তিনি৷ দ্রুত অস্ত্র আইন পরিবর্তনের ঘোষণা দেন৷ মুসলমানদের উদ্দেশ্যে জানান, নিউজিল্যান্ড মোটেও এমনটা নয়৷ এই দেশে তারা স্বাধীনভাবেই থাকতে পারবে৷

জেসিন্ডা আর্ডার্ন ক্রাইস্টচার্চের ঘটনার পর প্রতিদিনই ছুটে যাচ্ছেন নিহতদের স্বজনদের কাছে৷ তাদের জড়িয়ে ধরছেন, সমব্যাথী হচ্ছেন৷ শুধু তাই নয়, মুসলমানদের সাথে একত্মতার প্রকাশ হিসেবে তিনি একাধিক দিন হিজাব পরে বেরিয়েছেন৷

১৯ মার্চ সংসদে বক্তব্য দেন আর্ডার্ন৷ শুরুতেই সবাইকে ‘আস সালামু আলাইকুম’ বলে সম্বোন্ধন করেন তিনি৷ জানান ক্রাইস্টচার্চের ঘটনায় অভিযুক্তের নামও তিনি কখনও মুখে আনবেন না৷ এরই মধ্যে অস্ত্র আইন পরিবর্তন করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। এছাড়া দুই ধরনের অস্ত্র নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ঢাকা টাইমস/২১মার্চ/একে