এসডিজির জন্য প্রয়োজন এতিম শিশুদের সার্বিক উন্নয়ন

প্রকাশ | ২১ মার্চ ২০১৯, ১৩:০৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে দেশের এতিমদের সার্বিক উন্নয়নে নজর দিতে হবে। সুবিধাবঞ্চিত এতিম শিশুদের সমাজের মূলধারায় আনার জন্য বহুমূখী কর্মসূচি নিতে হবে। আয়বর্ধনমূলক কাজে এতিম পরিবারকে সহায়তা দিতে হবে। জাতীয় বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। রাজধানীর সিরডাপের আর্ন্তজাতিক কনফারেন্স হলে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আর্ন্তজাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘ইসলামিক রিলিফ ওয়ার্ল্ডওয়াইড বাংলাদেশ’-এর সেমিনারে বক্তারা এসব বলেন। ‘এতিম শিশুদের অধিকার নিশ্চিতকরণে পরিবারের উন্নয়ন’ শীর্ষক এক সেমিনার হয়েছে গতকাল বিকেলে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আইনুল কবীর এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুশান্তকুমার প্রামাণিক। সভাপতি ছিলেন ইসলামিক রিলিফ ওয়ার্ল্ডওয়াইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর আকমল শরীফ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্থার প্রকল্প ব্যবস্থাপক এনামুল হক সরকার। এতে আরো বক্তব্য দেন কুড়িগ্রামের ওলিপুর উপজেলার চেয়ারম্যান মো. হায়দার আলী মিয়া, ওলিপুর উপজেলার ওলিপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কুমারী দীপা রানী সরকার এবং অপুয়ারখাতা গ্রামের বিধবা রওশন আরা।

অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ বলেন, শিশুদের ভরণ পোষণে সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সরকার এতিমখানা শব্দটি পরিবর্তন করে বর্তমানে শিশু পরিবার নামে পরিচালিত করছে। বর্তমানে সরকার প্রায় ৩ হাজার ৫০০ বেসরকারি এতিমখানার প্রায় ৬২ হাজার এতিম শিশুকে ক্যাপিটেশন গ্রান্ট প্রদান করা হচ্ছে। দরিদ্র এতিম শিশুদের মানবসম্পদে পরিণত করাই ক্যাপিটেশন গ্রান্টের প্রধান উদ্দেশ্য।

ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ বাস্তবায়িত এতিম পরিবারের উন্নয়নে কার্যক্রমটির কলেবর বৃদ্ধি করে বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকায় বাস্তবায়ন করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সকল বেসরকারি সংস্থাকে আহবান জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি আরো বলেন, ওআইসি ঘোষিত এতিম দিবস (১৫ই রমজান) পালনের জন্য ইসলামিক রিলিফ যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রসংশনীয়। এ ব্যাপারে জাতীয়ভাবে দিবসটি পালনের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি আইনুল কবীর বলেন, মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় প্রায় ৭ হাজার শিশুক্লাব পরিচালনা করছে, যার মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের উন্নয়নে কাজ করছে।

বিশেষ অতিথি সুশান্তকুমার প্রামাণিক বলেন, এতিম শিশু ও তাদের পরিবারের সার্বিক উন্নয়নে দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কার্যকর ভ‚মিকা পালন করতে পারে।

ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর আকমল শরীফ বলেন, কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলায় ৭০০ এতিম শিশু ও তাদের পরিবারের মর্যাদা ও সুরক্ষা বৃদ্ধি এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ৪ বছর মেয়াদী ‘অল্টারনেটিভ অরফান ফ্যামিলি স্পন্সরশীপ প্রোগ্রাম থ্রু সাসটেইনেবল লাইভলিহুডস’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। এই প্রকল্পটি এ বছর ইনোভেশন ক্যাটাগরিতে ব্রিটিশ ওভারসিজ এনজিওজ ফর ডেভেলপমেন্ট (বন্ড) অ্যাওয়ার্ড লাভ করে। তিনি আরো বলেন, কমিউনিটিভিত্তিক পরিচর্যার মাধ্যমে এতিম শিশুদের বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়তা করা সময়ের দাবি।

অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, ইউনিসেফের মতে বর্তমানে পৃথিবীতে ১৫ কোটি ৩০ লক্ষ এতিম শিশু রয়েছে এবং প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজার ৭৬০ শিশু এতিম হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ২০০৬ অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার ৫.৮ শতাংশ ১৮ বছরের নিচে শিশু, যারা বাবা অথবা মা অথবা উভয়কেই হারিয়েছে। এই তথ্য অনুযায়ী বলা যায়, বর্তমানে আমাদের দেশে ৪০ লক্ষাধিক শিশু এতিম।

ঢাকাটাইমস/২১মার্চ/টিএমএইচ