সাবেক আইজির বাসায় ডিআইজি, তাই...

প্রকাশ | ২১ মার্চ ২০১৯, ১৩:৪০ | আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৯, ১২:১২

আলম রায়হান

অমর একুশের কালজয়ী সঙ্গীতের স্রষ্টা আবদুল গাফফার চৌধুরী লেখক-সাংবাদিক-নির্মাতা। কী নন তিনি- সেটিই হচ্ছে প্রশ্ন। এক কথায়, তিনি বাংলাদেশের অহংকার। আবদুল গাফফার চৌধুরী বরিশালের এবং তার সাংবাদিকতা ও লেখক জীবন শুরু হয়েছে বরিশালেরই পত্রিকা দিয়ে।

আবদুল গাফফার চৌধুরী ছাড়াও বরিশালের পত্রিকা দিয়ে অনেকেই লেখক-সাংবাদিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। এদের মধ্যে যাদের সঙ্গে আমার বিশেষ ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তাদের মধ্যে দৈনিক কালের কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা কামাল একজন। তিনি এক আলাদা মানুষ। এ পর্যন্ত তার শতাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে, সাংবাদিকতার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন, নিয়মিত কলাম লেখেন। মোস্তফা কামালের লেখার আমি ভক্ত-পাঠক। তার প্রতিটি কলাম অন্তত একবার পড়ি। কিন্তু ১৯ মার্চ প্রকাশিত ‘পুলিশ কেন জনগণের বন্ধু নয়’ শিরোনামে তার লেখাটি তিনবার পড়েছি। আর ভেবেছি মোস্তফা কামালের মতো চিরকাল উচ্চ মাত্রায় সহনশীল একজন মানুষকে বিরক্ত করতে পুলিশকে কতটাই না ঘাম ঝরানো পরিশ্রম করতে হয়েছে! আরও ভেবেছি, মোস্তফা কামালের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যদি এ ধরনের আচরণ করে তা হলে আমজনতার সঙ্গে কোন তিক্ত আচরণ করে আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের পুলিশ?

এ বিষয়টি ভাবনায় থাকতে থাকতেই ২০ মার্চ সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে মৃদু এক তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে আমারও। এ নিয়েই লেখা ‘সাবেক আইজির বাসায় ডিআইজি, তাই...।’  এই লেখা নিয়ে ভাবনার সময় শুনলাম, বরিশাল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাইদুল ইসলামের বিষয়ে লেখার অভিযোগের মামলায় বরিশালে দৈনিক সময়ের বার্তা অফিসে হানা দিয়েছে পুলিশ, সাংবাদিক আল আমীন গাজীকে আটকও করা হয়েছে। তার জন্য আমার বেশ চিন্তা হচ্ছে। কারণ প্রকট সুবিধাবাদের গড্ডলিকা প্রবাহে চলা সমাজে সাংবাদিকসহ মননশীল কাজের মানুষরা আসলে খুবই অসহায়। আর আল আমীন গাজী আটক হওয়া কেবল ব্যক্তির জন্য নয়, বরিশালের সাংবাদিকতার জন্যও এক ধরনের চূড়ান্ত অশনিসংকেত বলে মনে হচ্ছে আমার। সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এ মামলা-গ্রেপ্তার শুভ কোনো আলামত নয়।

কে জানে, ‘সাবেক আইজির বাসার ডিআইজি, তাই...’ লেখার জন্য আমার বিরুদ্ধেও মামলা হবে কি না! অবশ্য লেখার জন্য অনেক মামলার পড়ার অভিজ্ঞতা আছে আমার। একবার কারাবাসও করেছি ১৮ দিন। আমার মুক্তির দাবিতে বক্তৃতা-বিবৃতি হয়েছে, পোস্টারিং হয়েছে। সংসদ গরম করেছেন তৎকালীন সাংসদ মেজর আকতারুজ্জামান। দেশি সকল গণমাধ্যম এবং বিবিসি বাংলায় খবর প্রচারিত হয়েছে। আমার সেই কারাভোগের নেপথ্যে ছিলেন পুলিশের তৎকালীন বদমেজাজি ও দাপটের ডিসি (ডিবি) সৈয়দ বজলুর করিম। আর বিষয়টি সহজ করেছিলেন সে সময়ের ক্ষমতাধর আমলা মোক্তাদির চৌধুরী রবিউল। পেছনে সক্রিয় ইন্ধন ছিল সে সময়ের দুই মন্ত্রণালয়ের দাপটের মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের। এরপরও তোফায়েল আহমেদকে আমি সবসময়ই শ্রদ্ধার চোখে দেখি। স্মরণ করা যেতে পারে, দিনের পর দিন একই সাথে জিল্লুর রহমান, আবদুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করেও বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কোনো বিবৃতি দেয়াতে পারেনি ৭৫-এর খুনি চক্র। উল্লিখিত  তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নির্যাতন হয়েছে তোফায়েল আহমেদের ওপর।

তা যাই হোক, মন ও শরীরের শক্তি কমে যাবার কারণে বেশ কয়েক বছর ধরে মামলা এড়িয়ে যাবার বিষয়ে খুবই সতর্ক রয়েছি। এ হচ্ছে পেশার সঙ্গে অসহায় আপস। কিন্তু আর কাহাতক আপস করা যায়! অবশ্য এক সময় কবিতা লেখা হয়েছে, ‘মোরা শহীদের জানাজা করিব না পাঠ, জীবনের দাবি আজ এতোই বিরাট।’  কাব্যকথা থাক!

এবার মূল প্রসঙ্গে আসি। পেশাগত কারণে ১৯৭৯ সাল থেকে বিভিন্ন পেশা এবং শ্রেণির অনেককে চিনি। যাদের মধ্যে অনেকের প্রতি শ্রদ্ধায় দেহ-মন অবনত হয়। আবার কেউ ঘৃণার উদ্রেক করেন। রাষ্ট্রের দায়িত্বে নিয়োজিতদের মধ্যে এক সময় সবচেয়ে বেশি চিনতাম পুলিশকে। সম্ভবত শুরুর দিকে ক্রাইম রিপোর্টার হিসেবে কাজ করার কারণে এই সুযোগ হয়েছে। আমি এমন অনেক পুলিশ সদস্য-কর্মকর্তা চিনি যারা দক্ষতা ও মানবিকতায় এক একজন অনুকরণীয় মডেল। এর বিপরীতে এমন পুলিশ সদস্য-কর্মকর্তাকেও চিনি যাদের ব্যাপারে জেনারেল পারসেপশন হুবহু সঠিক না হলেও, একেবারে ফেলনা নয়। এধারায় সাবেক একজন আইজিপিকে চিনি, যার ব্যাপারে অনেক রটনা আছে। তবে সেসব রটনা নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই। কারণ উচ্চ মহলের রটনা অনুসন্ধান করার মতো সাংবাদিকতা এখনো আমাদের দেশে তৈরি হয়নি। অবশ্য গভীরে না গিয়েও বলা যায়, সাবেক এই আইজিপি মোটামুটি ধনকুবের। সহদোরকে স্থানীয় নির্বাচনে বিজয়ী করেছেন চেয়ারের প্রভাব খাটিয়ে। অবশ্য ভাইদের ব্যাপারে তিনি বেশ কেয়ারিং। যে কারণে তার এক প্রতিবন্ধী ভাইও তার মমতা থেকে বঞ্চিত হননি। হয়তো তিনি এক সময় রাজনীতিতে আসবে, হয়তো সংসদেও প্রবেশ করবেন জনপ্রতিনিধি হিসেবে।

সাবেক এই পুলিশপ্রধানের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই, বিরক্তিও নেই। কারণ এরচেয়ে অনেক বড় ঘটনা আছে আমাদের দেশে। তবে সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তার প্রতি আমার এক ধরনের অশ্রদ্ধা ছিল আগে থেকেই। কিন্তু সরকার নিশ্চয়ই তাকে উপযুক্ত মনে করেছেন। যে কারণে তিনি পুরো মেয়াদ শেষে পুলিশের সর্বোচ্চ চেয়ার থেকে অবসরে যাবার সৌভাগ্যের অধিকারী হতে পেরেছেন। একবার তাকে বদলির আদেশ দেয়া হলেও তা বাতিল করা হয়েছে। এসব বিষয় নিয়েও আমার আগ্রহ বা বিরক্তি নেই। কিন্তু তার ওপরে বেশ বিরক্ত হলাম কয়েকদিন আগে একটি প্রথম শ্রেণির দৈনিকে তার কলাম পড়ে।

দেশে চলমান নানান উপদ্রবের মধ্যে এ এক মহাউপদ্রব। সরকারি চাকরি শেষে প্রায় সকলেই বুদ্ধিজীবী হয়ে যাচ্ছেন; অনেকটা নাপিতের ডাক্তার হবার মতো! এদের মধ্যে অনেকে টেলিভিশনের টক শোতে জ্ঞানগর্ভ কথা বলেন। কেউ আবার পত্রিকায় কলামও লেখেন। এ ধারায় সরাকারে সাবেক কর্মকর্তাদের অনেক অপাঠ্য লেখাও সংবাদপত্রে ছাপা হয়।

উল্লিখিত সাবেক আইজিপির এমনই একটি লেখা পড়ে আমার বেশ বিরক্তি সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু এ নিয়ে আমি তেমন মাথা ঘামাইনি। অন্যের মতো আমারও সাধারণ বিবেচনা আছে, এ সব অখাদ্য লেখা ছাপার ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে ব্যক্তিটির পূর্বপরিচিতি ও প্রভাব বিবেচনায় আনা হয়। তা না হলে এসব লেখা পত্রিকায় ছাপার কথা নয়। মাইটিভিতে থাকাকালে পরিচিতির সূত্র ধরে উল্লিখিত সাবেক পুলিশপ্রধানকে ফোন দিই ১৯ মার্চ সকালে। আলাপচারিতার শুরুর দিকে পুলিশ নিয়ে আমার একটি লেখার ব্যাপারে তিনি খানিকটা উষ্মা প্রকাশ করলেন। তবে তা সৌজন্যতার সীমা অতিক্রম করেনি। তার মূল আপত্তি ছিল, জেলা পর্যায়ে পুলিশ প্রশাসনের ওপর সিভিল প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ থাকার বিষয় নিয়ে। আগের এ বিধানের পক্ষে ছিল আমার মন্তব্য। পুলিশের ওপর যে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান তুলে দিয়েছেন সামরিক বুদ্ধিতে। টেলিফোনে আলাপে সাবেক আইজিপি পুলিশ বাহিনীর বেশ কিছু সাফল্যের কথা উল্লেখ করলেন। কিন্তু আমার লেখা পড়ার সময় একটু মনযোগী থাকলে অথবা পুরোটা পড়লে তিনি বুঝতেন, পুলিশ নিয়ে যেসব ইতিবাচক কথা বলেছেন তার পুরোটাই আছে আমার লেখায়। একটু বেশিও আছে যা হয়তো পুলিশের প্রতি আমার পক্ষপাতিত্ব হিসেবেও দাঁড় করানো যাবে।

এসব প্রসঙ্গের ধারকাছ দিয়ে না গিয়ে জেলায় পুলিশের ওপর সিভিল প্রশানের নিয়ন্ত্রণের থাকার বিষয়ে আমার পক্ষপাতিত্বে তিনি উষ্মা প্রকাশ করতে থাকলেন। এরপরও তার একটি উদাহরণ আমাকে চমকে দিয়েছে। তা হচ্ছে, হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পাঁচ মিনিটের মধ্যে পুলিশের অ্যাকশনের অবস্থানে পৌঁছানোর বিষয়টি। যা সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড পুলিশ করতে নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

পেশাগত প্রবণতায় আমার কথা বলার বিশেষ এক ধরনের আগ্রহ আছে। এ প্রবণতায়ই তার সঙ্গে দেখা করতে চাইলাম। তিনিও আন্তরিকভাবে সায় দিলেন। এবং পরদিন, মানে ২০ মার্চ সময় দিলেন তার বাসায় সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে। আমি কাঁটায় কাঁটায় ১১টা ২৫ মিনিটে তার বাসায় পৌঁছালাম। তার ভবনের উল্টো দিকে ফুটপাথে একজনের সঙ্গে দেখা হলো। তিনি আমার মুখ চেনা। তিনি কোনো সংস্থায় আছেন বলে আমার ধারণা। মুখ চেনা মাত্রায় সৌজন্য বিনিময় হলো তার সঙ্গে। সম্ভবত তিনি সাবেক পুলিশ প্রধানের উপর নজর রাখার দায়িত্ব পালন করছেন। তা না হলে সাবেক আইজিপির বাসায় যে একজন সিটিং ডিআইজি প্রবেশ করেছেন তা তার চোখে পড়বে কেন?

যাই হোক, ভবনে অভ্যাগত রেজিস্টারভুক্ত হবার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে সাবেক আইজিপির ফ্ল্যাটের দরজার সামনে গিয়ে বেল টিপলাম। দরজা খুলে একজন পরিচয় জেনে ভেতরে আমন্ত্রণ জানালেন। কিন্তু আমি বললাম, যেহেতু ভেতরে অন্য মেহমান আছে সেহেতু সরাসরি যাওয়া ঠিক হবে না; বরং আপনি আমার নেমকার্ড সাহেবকে দেন। কার্ড নিয়ে লোকটি ভেতরে গেল। আমি দরজার বাইরে অপেক্ষায়। মিনিটি পনেরো পর উল্লিখিত লোকটি এসে বললো, ‘স্যার অসুস্থ, ডাক্তারের কাছে যাবেন; আজ দেখা হবে না।’

এমনটি হতেই পারে। মানুষ হতে পারে যেকোনো সময় অসুস্থ। আর সময় দিয়ে দেখা না দেবার ঘটনা- এটিই প্রথম নয়। এমন অভিজ্ঞতা আমার একাধিক আছে। এ ব্যাপারে সবচেয়ে মজার অভিজ্ঞতা হয়েছে বিএনপি নেতা আলতাফ হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে। বিমান বাহিনীর সাবেক এই প্রধান অবসরে এসেই রাজনীতিতে নেমে পড়লেন। তার রাজনীতির সূচনা পর্বে একদিন আমাকে ও সন্তোষ শর্মাকে লাঞ্চের দাওয়াত দিলেন তিনি। কিন্তু নির্ধারিত দিন, যা ছিল পরদিনই, তিনি বাসায় ছিলেন না। এমনকি দাওয়াতের বিষয়টি বাসায় কাউকে জানিয়েও জাননি। এই আলতাফ চৌধুরী পরে বিএনপি সরকারের স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে তিনি ‘আল্লাহর মাল’হিসেবে অন্যরকম পরিচিতিও পেয়েছেন। হয়তো এইসব ‘মালদের’সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করার কারণেই বেগম খালেদা জিয়া আজকের নিদারুণ অবস্থানে পৌঁছেছেন।

পেশাগত কারণে বিভিন্ন সেক্টরের এমন অনেক ‘মাল’চিনি আমি। এ কারণে ফ্ল্যাটের দরজায় সামনে গরমে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে সাবেক আইজিপির দেখা না পেয়ে ফিরে আসার ঘটনায় আমার তেমন প্রতিক্রিয়া বা ভাবনার উদ্রেক করেনি। বরং আমাকে ভাবনায় পেয়ে বসলো, পুলিশ বাহিনীর সাবেক একজন প্রধান কীভাবে তার কর্মচারীর কাছে স্পষ্ট মিথ্যা কথা বললেন? তাও আবার একজন ডিআইজির সামনে, যিনি সার্ভিসে তার অনেক জুনিয়র!

বাসায় ফিরেও এ ভাবনা থেকে মুক্ত হতে পারছিলাম না। ভাবনার বিষয় পাল্টানোর জন্য ফেসবুকে ঢুকলাম। সেখানেও পুলিশ! দেখলাম সাবেক ডিআইজি তৌফিক আহমেদ একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। তিনি মাদকদ্রব নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) থাকাকালে তার সঙ্গে আমার পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। তিনি বরিশাল ও সিলেটের পুলিশ কমিশনার ছিলেন। পুলিশ বিভাগে তার সততার ইমেজ হিমালয়সম বলে শুনেছি। উল্লেখ্য, পদোন্নতি বঞ্চিত হয়ে তাকে ডিআইজি হিসেবেই অবসরে যেতে হয়েছে একাধিকবার সুপারসিটেট হয়ে। এর পেছনে অন্য কারণ আছে কি না জানি না। তবে তার সততাই তারজন্য নানান ধরনের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল বলে ধারণা কারো কারো। তিনি একজন পুলিশ কর্মকর্তা জনাব ফাহাদের পোস্ট শেয়ার কয়েছেন।

এই পুলিশ কর্মকর্তা ফাহাদ বলেছেন, ‘চাকরিজীবনে  ট্রেনিংয়ের যে কয়জন শিক্ষক পেয়েছি তাদের অনেকেই সৎ এবং খুব দক্ষ ছিলেন। তারা নিয়মিত পুলিশিংয়ে ঠিকতে পারেন না। তাই দেশের মানুষ সৎ এবং ন্যায়পরায়ণ পুলিশ চোখে দেখে না।’ এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক এক পুলিশ কর্মকতা ডি. এ. নাসির মন্তব্য করেছেন, ‘ফাহাদ, আমি তোমার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী অগ্রজ। ১৯৭৬ সনে পুলিশ সার্জেন্ট হিসাবে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশে চাকরি করেছি। তোমার মতো নৈতিকতা রক্ষা করতে গিয়ে শত ঘাত প্রতিঘাতে মাথা নুয়াইনি। শেষ পর্যন্ত ৩০ বৎসরে পর্যাক্রমে ঢাকা মহানগর পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মনোভাব না পাল্টানোর কারনে চাপে পড়ে আট বছর চাকরি থাকা সত্ত্বেও ২০০৬ সনে ঐচ্ছিক অবসরে গিয়েছি। তোমাকে স্যালুট তুমি পুলিশ বাহিনীতে অনুকরণীয় হয়ে এগিয়ে চলো এই দোয়া।’

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ডি. এ. নাসিরের দোয়ায় চাকরিরত পুলিশ কর্মকর্তা জনাব ফাহাদ অপ্রচলিত পথে হাটার ঝুঁকি নেবেন কি না, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই। তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত, এইসব দোয়া বা ব্যক্তির সততায় জনগণকে তৃপ্ত করার মতো সুফল পাওয়া আশা করাটা সোনার পাথর বাটির মতোই। জনপ্রত্যাশা পূরণের সুফল পেতে হলে সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর আমি মনে করি, জনপ্রত্যাশা পূরণে কঠিন সিদ্ধান্ত নেবার শক্তি পুরো মাত্রায় রাখেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাজেই নদী উদ্ধারের কঠিন সিদ্ধান্তের মতো পুলিশের ভাবমূর্তি উদ্ধারেও সিদ্ধান্ত নিতে হবে বর্তমান সরকারকেই। এটা না করা হলে আর যাই হোক, সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে না। বরং মামলার পাহাড় জমতে থাকবে।

আর একটি কথা বিনয়ের সঙ্গে আবার বলতে চাই, সুশাসন হচ্ছে এখন সময়ের দাবি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ৭৫-এর থিংকট্যাংকের চূড়ান্ত পরাজয়ের পর দেশের রাজনীতিতে বড় কোনো থ্রেট নেই। এদিকে উন্নয়ন চলছে অকল্পনীয় গতিতে। বিরাজমান এই বাস্তবতায় সুশাসন নিশ্চিত করা খুবই জরুরি এবং সহজ। আর এ ক্ষেত্রে প্রধান অবলম্বন হচ্ছে পুলিশ!

আলম রায়হান : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক