শিক্ষকদের অযোগ্যতা জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা

আফতাব উদ্দিন
| আপডেট : ২২ মার্চ ২০১৯, ১৪:১৪ | প্রকাশিত : ২২ মার্চ ২০১৯, ১৪:১২

শিক্ষকদের অযোগ্যতা জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। আমরা যোগ্য শিক্ষক চাই, এর কোনো বিকল্প নেই। অযোগ্যতার দু'টো প্রাসঙ্গিক উদাহরণ দিচ্ছি: ১. নোয়াখালী সাইন্স অ্যান্ড কমার্স কলেজে শিক্ষক হওয়ার জন্য এক ভদ্রমহিলা দু'বছর ধরে চেষ্টা করেছেন। শেষ পর্যন্ত আমি তাকে বলতে বাধ্য হয়েছিলাম যে, কলেজ কেন কখনো কোনো পর্যায়ে শিক্ষকতা করা আপনার ঠিক হবে না। ছয় মাস পরে উনি ফোনে জানালেন যে, উনি পার্শ্ববর্তী উপজেলার একটি এমপিওভুক্ত কলেজে বিজ্ঞানের শিক্ষক হয়েছেন। আমি সবিনয়ে উনাকে বললাম, 'গত বছর ওই কলেজে এইচএসসি বিজ্ঞানে ১০০% ফেল করেছে, আর আমাদের কলেজে ১০০% পাস করেছে। আপনি ঠিক জায়গাতেই ফিট হয়েছেন।' সম্প্রতি ওই কলেজটি সরকারি হয়েছে। একদিন হয়তো দেখা যাবে যে, উনি নোয়াখালী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের পদে আসীন হয়েছেন।

২. একইভাবে, অন্য একজন ভদ্রমহিলা বাংলা'র শিক্ষক হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করায় উনাকে বলেছিলাম, এ কলেজটির প্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়ে বাংলায় এক পাতা লিখুন। উনি লেখার পরে লাল কালির দাগ দেখে উনার মা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা, খুবই লজ্জা পেয়েছিলেন। উনাকে অনুরোধ করেছিলাম কখনো যেন শিক্ষকতা না করেন। বছরখানেক পরে উনি উনার ছেলেকে আমাদের প্রাইমারি শাখায় তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করাতে এসে প্রথম যে বাক্যটি উচ্চারণ করেছিলেন, সেটি হলো 'স্যার আমি এখন সেনবাগ উপজেলা'র .....এমপিওভুক্ত কলেজের বাংলার প্রভাষক।' আসল চিত্রটি জানি বলেই নির্বাক হয়েছিলাম, বিস্মিত হইনি।

শেষকথা, একটি কনফারেন্স শেষে গত রবিবার বিকালে সোনার বাংলা ট্রেনে চড়ে চট্রগ্রাম থেকে ঢাকা ফিরছিলাম। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) এবং প্রাথমিক শিক্ষার উপবৃত্তি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মহোদয়গণের সাথে শিক্ষা নিয়ে কথা হচ্ছিল। অতিরিক্ত সচিব স্যার আমাকে শিক্ষা নিয়ে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে যাচ্ছিলেন।

প্রাসঙ্গিক দু'টো প্রশ্নের জবাব তুলে ধরছি। ১. এত টাকা পয়সা খরচ করার পরেও প্রাইমারির বাচ্চাদের লেখাপড়ার মান এত খারাপ কেন?' আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমি অনেকগুলো কারণ বললাম, যার একটি হলো শিক্ষকদের একটি বড় অংশের অযোগ্যতা। ২. 'সৃজনশীল প্রশ্নে শিক্ষার মান বাড়ছে কি?' সবিনয়ে জবাব দিলাম, 'না, স্যার।' আমি আবারো অনেকগুলো কারণের সাথে যোগ করলাম, শিক্ষকদের একটি বড় অংশ সৃজনশীল প্রশ্ন করার মতো যোগ্য নন, প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার মতো যোগ্যতাও তাঁদের অনেকের নেই।'

প্রায় ছয় ঘণ্টায় অনেক কথা হয়েছে যা লিখলে কমপক্ষে দশ হাজার শব্দ হয়ে যাবে। শুধু এটুকুই বলতে চাই, আমাদের সন্তানদের পড়ানোর জন্য ক্লাসরুমে যোগ্য শিক্ষকের বিকল্প নেই, যেকোনো মূল্যেই হোক না কেন এটি নিশ্চিত করতে হবে। নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হবে কি না, আর এমপিওভুক্তগুলো সরকারি হবে কি না এগুলো সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তবে, আমাদের দাবি হলো শিক্ষকদের যোগ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা ধ্বংস করে এমন কোন সিদ্ধান্ত আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করবে।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল নোয়াখালী সাইন্স অ্যান্ড কমার্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :