প্রচারণার নতুন পাটাতনে...

প্রকাশ | ২২ মার্চ ২০১৯, ১৮:১১

তায়েব মিল্লাত হোসেন

ছোটরাও আছে ইন্টারনেটে। তারা দেখে কার্টুন। খেলে গেমস। শেখে ছড়া। আরও কত কী! হালে তাদের এসব কর্মের মাঝে চলে আসে বিজ্ঞাপন। চাইলে তা না দেখার ব্যবস্থাও আছে। এই হচ্ছে প্রচার-প্রচারণার অধুনা কায়দা। মূল লক্ষ্য কিন্তু ভোক্তা, বিপণন।

সময়ের সঙ্গে বদলে যেতে হয়। মানিয়ে নিতে হয় সময়কে। এই ভাষা বোঝে বিজ্ঞাপন। তাই বিষয়ের সঙ্গে মাধ্যমও পাল্টায় বিজ্ঞাপন। এখন সৃজনশীল এই খাতের বড় এক পাটাতন সমাজমাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়া। শুধু এই পাটাতনের জন্যই নির্মিত হচ্ছে বিজ্ঞাপনচিত্র। আর আগের সব মাধ্যম পত্র-পত্রিকা, বিলবোর্ড, টেলিভিশন, বেতারও বহাল। পণ্যের প্রচারে প্রসারে সবাই এগুলোর ওপর নির্ভর করে আছে।

কিন্তু উৎপাদন, বিপণন ব্যস্ততায় নিজেরা প্রচারের কাজে জড়িয়ে থাকতে চান না কেউ। এই কাজটি করে দেয় আরেক পক্ষ। তারাই বিজ্ঞাপনী সংস্থা। পণ্যের প্রসারে, খবর প্রচারে আপনার হয়ে মাঠে থাকবে এমন সংস্থা। সৃজনশীল সব ধারণায় ভোক্তাদের চমক দিবে, আকৃষ্ট করবে।

বিজ্ঞাপনের আধিক্য বলুন, আধিপত্য বলুন- তা এখনো ধরে রেখেছে ছোটপর্দা। তবে ইউটিউব ও ফেসবুকের মতো অনলাইনভিত্তিক মাধ্যম তার জায়গা ক্রমশ নিয়েছে, এখনই তার আলামত আছে। ২৫ শতাংশই চলে যাচ্ছে অনলাইনভিত্তিক মাধ্যমে। আর চলচ্ছবির দাপটে কাগজে প্রকাশিত স্থির-বিজ্ঞাপন কতদিন জায়গা ধরে রাখতে পারবে, সেটাও কোটি টাকার প্রশ্ন।

তা বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনের বাজার কত কোটি টাকার? এর সঠিক উত্তর কারও কাছে নেই। তবে বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর ধারণা, বাজারের দাম তিন হাজার কোটি টাকার বেশি। এই টাকার অংশীজন কারা? শুধুই উদ্যোক্তা? না। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে পিয়ন থেকে পরিচালক- সব ধরনের মানুষ। তরুণ থেকে বয়োবৃদ্ধ- নানা বয়সী মানুষ সৃজনশীলতা দিয়ে, অভিজ্ঞতা দিয়ে সমৃদ্ধ করে চলেছে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন ভুবন।

দুই.

মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে। শঙ্খ ঘোষের বিখ্যাত কবিতা। কিন্তু প্রচার-প্রসার ছাড়া এই কবিতাখানি কী জনে জনে পৌঁছুতে পারতো? এক মুখ থেকে আরেক মুখে তথ্য যখন যায়, তখনি তা ছড়িয়ে যায়। আর প্রচারে যদি নামেন পরিচিত কেউ- তবে তো কথাই নেই! বিজ্ঞাপনে তাই প্রিয় মুখদেরই জয়-জয়কার। এখানেই কথা শেষ হয়ে যায় না। পণ্যের প্রচারে কৌশলী হতে হয়। থাকতে হয় সৃজনশীলতাও। সব কিছুর আদর্শ সমাবেশেই সার্থক হয় প্রচারণা। বিজ্ঞাপনী সংস্থার সুধীজনদের প্রায় সবাই এর সঙ্গে একমত। দেশ উন্নতির পথে হাঁটছে। ভোক্তা হিসেবে আমাদের চাহিদাও বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পণ্য। এর প্রচারও তাই পাচ্ছে আলাদা গুরুত্ব। স্বভাবতই বিজ্ঞাপনের বাজার বিকশিত হচ্ছে। তবে প্রযুক্তির হাওয়ায় নিত্যনতুন মাধ্যমের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হচ্ছে বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোকে। মুখ ও মুখোশের মিশেল থাকুক আর না-ই থাকুক, একটি সৃজনশীল বিজ্ঞাপন আমাদের বিনোদন দিতে পারে। দিতে পারে ভাবনার খোরাক। আবেগি করে তুলতে পারে আমাদের। বিজ্ঞাপনের এই বিজ্ঞাপন তো সুখ জাগানিয়াই।

তিন.

শুরুতে যা বলেছি, আবার তাতে ফিরে আসি। এই দেশের ছোটপর্দার বড় দুর্নাম হলো গিয়ে বেশি মাত্রায় বিজ্ঞাপন প্রচারের। এখন ছোট শিশু ইন্টারনেট বিনোদন নিতে গিয়ে যদি বিজ্ঞাপনে নজর রাখতে বাধ্য হয়, তখন তার জন্য তা বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। বিজ্ঞাপনের নতুন পাটাতনের রথি-মহারথিরা বিষয়টি মাথায় রাখবেন বলে আশা রাখছি। অন্তর্জালের জগৎ যাতে বিজ্ঞাপনের ভিড়ে জটলায় না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আবার যাতে লিখতে না হয়, ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’। সুন্দর কিছু বেশি বেশি দেখলেও তো চোখ ফিরিয়ে নিতে ইচ্ছে করে। সুস্বাদু কিছু বেশি মাত্রায় খেলেও তো অরুচি ধরে যায়। আশা রাখছি, আপনারা বিষয়টি আমলে নিবেন, হিসেবে রাখবেন। নইলে কিন্তু হিতে বিপরীত হয়ে যাবে।

তায়েব মিল্লাত হোসেন: সাংবাদিক