পল্লীবন্ধুর অনন্য এক জন্মোৎসবের গল্প

প্রকাশ | ২২ মার্চ ২০১৯, ১৮:৩৬ | আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৯, ২২:১৮

খন্দকার দেলোয়ার জালালী

‘আমি তোমাকে অসংখ্যভাবে ভালোবেসেছি, অসংখ্যবার ভালোবেসেছি, এক জীবন থেকে অন্য জীবনেও ভালোবেসেছি, বছরের পর বছর, সর্বদা, সব সময়।’ রবীন্দ্রনাথের এমন অনুরাগের বাণী ছিল পুষ্পস্তবকের বুকে। ফুলে ফুলে সুশোভিত হয়ে ওঠে পুরো পরিবেশ। বাহারি রং আর নানা স্বাদের কেক দখল করে নেয় বিশাল মিলনায়তনের প্রতিটি টেবিল। আর অনুরাগীদের মাঝে ছিল উৎসবের আমেজ। সবার পোশাকেও ছিল উৎসবের স্বাক্ষর।

সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নব্বইতম জন্মদিনের আনন্দঘন পরিবেশটা ছিল এমনই।

২০ মার্চ সকাল থেকেই গুলশানের ইমানুয়েলস মিলনায়তন সজ্জিত যেন শিল্পীর নিপুণ ছোঁয়ায়। মিষ্টি সুরে বেজে চলেছে পল্লীবন্ধুর সেই কালজয়ী গান ‘তোমাদের পাশে এসে বিপদের সাথী হতে, আজকের চেষ্টা অপার...।’ শুধু জাতীয় পার্টি নয়, প্রতিটি অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে কেক নিয়ে হাজির হন নেতাকর্মীরা। কেক নিয়ে আসেন থানা ও ইউনিট কমিটির নেতৃবৃন্দও। আর ফুল ছিল সবারই হাতে। টকটকে লাল গোলাপের সমারোহ আপ্লুত করেছে সবাইকে। বাহারি ফুলের ম-ম সুবাসে, আনন্দঘন পরিবেশে বিমোহিত ছিল সবাই।

বেলা ১২টার কিছু পরে দ্যুতি ছড়িয়ে মিলনায়তনে প্রবেশ করেন বাংলাদেশের ইতিবাচক রাজনীতির জীবন্ত কিংবদন্তি, কল্যাণময় রাজনীতির বরপুত্র পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। মুহূর্তেই পাল্টে যায় পরিবেশ, স্লোগানে-স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে গুলশানের ইমানুয়েলস মিলনায়তন। স্লেøাগানের ঝংকার ছড়িয়ে পড়ে মিলনায়তনের বাইরেও। প্রিয় নেতাকে অনেক দিন পরে দেখতে পেয়ে অনেকেই অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি। চোখের দুই কোণ ভরে ওঠে আনন্দ অশ্রুতে। যেন নতুন করে রচিত হলো ভক্তি, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার অনন্য উপাখ্যান।

পবিত্র কালামের শাশ্বত বাণী উচ্চারণে শুরু হলো জন্মদিনের মূল আয়োজন। নিজের হাতে নব্বই পাউন্ড ওজনের কেক কাটলেন পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। আনন্দ, উল্লাসে উদ্বেলিত হয়ে ওঠেন পল্লীবন্ধুর অনুরাগীরা। এ সময় প্রতিটি টেবিলে নিজ নিজ সংগঠনের পক্ষে কেক কাটেন অঙ্গসংগঠনের নেতারা। একে অপরের মুখে কেক তুলে দেন পরম ভালোবাসায়। দৃশ্যমান হলো ভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্ব আর অকৃত্রিম ভালোবাসার মেলবন্ধন। আলোর ঝলকানি আর ফুলঝুরি উড়ে জানান দেয় এক অনন্য দিনের গল্প।

সুন্দর এই মুহূর্তের ব্যাপ্তি যে খুব বেশি ছিল তা কিন্তু নয়। স্বল্প এই সময়টুকুই উচ্ছল হয়ে সবার হৃদয়ে দোলা দেবে অনেক দিন। পল্লীবন্ধুর প্রিয়তমা স্ত্রী, জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ এমপি দোয়া চাইলেন সবার কাছে। বললেন, সবার মুনাজাতেই সুস্বাস্থ্যে দীর্ঘজীবী হবেন পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। আনন্দমুখর পরিবেশে উদ্দীপ্ত করতে সবাইকে সাথে নিয়ে গাইলেন ‘নতুন বাংলাদেশ গড়বো মোরা, নতুন করে আজ শপথ নিলাম...।’

পল্লীবন্ধুর ¯েœহধন্য ছোট ভাই, পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের এমপি বললেন, আজ শপথ নেবার দিন। বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশ গড়ার দৃপ্ত শপথে এগিয়ে যাব আমরা। বলেন অনুপ্রেরণা শুধু একটি নাম- হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

আর পার্টির মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, দেশ ও জাতির স্বার্থেই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করুন। আমরা তার নেতৃত্বে আবার মানবসেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই।

সবাই যখন আবেগে আর উচ্ছ্বাসে ভাসছে, ঠিক তখন পল্লীবন্ধু মাইক্রোফোন হাতে। সব উচ্ছ্বাস ছাপিয়ে বললেন, নির্যাতন আর নিপীড়নের জানা-অজানা গল্প। বললেন, ইতিহাসের সবচে নির্যাতিত রাজনীতিবিদ তিনিই। দীর্ঘ নয় বছর কল্যাণমুখী নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে উন্নয়নের রূপকার কতটা নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। আবেগে আপ্লুত পল্লীবন্ধু সন্তানসম অনুরাগীদের বললেন দলকে আরো বেশি শক্তিশালী করতে। যাতে আগামী দিনে জাতীয় পার্টি দেশ পরিচালনার ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারে। উপদেশ দেন তার হাতে গড়া ভালোবাসার জাতীয় পার্টিকে তৃণমূলে আরো জনপ্রিয় করতে।

এক জীবনে এত প্রেম, এত অনুরাগ, এত ভালোবাসা কার বরাতে জুটেছে জানি না। তবে, ছোট্ট-ছোট্ট ব্যানার আর ফেস্টুনের সেই আবেগময় লেখাগুলো দাগ কেটেছে সবার অন্তরে। মিলনায়তনের দেয়ালে শোভা পেয়েছে, ‘হে পরোয়ারদেগার, পল্লীবন্ধুকে নিয়ে শততম জন্মদিন আয়োজন করতে চাই।’ ‘পল্লীবন্ধুর নেক হায়াত দান করুন’। ‘মানবকল্যাণে গড়া কীর্তির বদৌলতে সুস্থ্য করে দিন আদর্শিক পিতা পল্লীবন্ধুকে’। আর মুনাজাতে পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা এবং প্রখ্যাত আলেম ক্বারী হাবিবুল্লাহ বেলালী চোখের জলে সবাইকে নিয়ে হাত তুললেন। কান্না জড়ানো কণ্ঠে আল্লার দরবারে মোনাজাত করেন,  ‘জাতীয় পার্টির প্রত্যেকটি কর্মীর জীবন থেকে একটু-একটু আয়ু নিয়ে পল্লীবন্ধুর নেক হায়াত বাড়িয়ে দিন, আমিন।’

মূলত ১৯ মার্চ সকাল থেকেই ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হন কল্যাণময় রাজনীতির মানসপুত্র হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। যারা ২০ মার্চের আয়োজনে রাজধানীতে থাকতে পারবেন না বলে মনে করেছেন, মূলতা তারাই আগাম শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সন্ধ্যার কিছু পরে সাবেক মহাসচিব ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন জাহান রতনা এমপি ফুল, কেক আর উপহার নিয়ে হাজির হন প্রেসিডেন্ট পার্কে। রাজনীতি করেন না, এমন অনেকেই ফুল নিয়ে হাজির হন পল্লীবন্ধুর বাসায়।

বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের নান্দনিক ফ্ল্যাট ভরে ওঠে ফুলে ফুলে। বিদেশি কূটনীতিক, ব্যবসায়ী, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকেও ফুল পৌঁছে যায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ঘরে। কবি ও পল্লীবন্ধুর ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাও যোগ দেন জন্ম উৎসবে। ধর্ম, বর্ণনির্বিশেষে সবাই ¯্রষ্টার কাছে ফরিয়াদ করেন বাংলাদেশের কল্যাণকর রাজনীতির কীর্তিমান পুরুষ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবন কামনায়। এমন উৎসব আর দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায়।

লেখক: সাংবাদিক। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি।