ময়মনসিংহে হঠাৎ অসুস্থ ২২ কলেজছাত্র, হাসপাতালে ভর্তি

প্রকাশ | ২৩ মার্চ ২০১৯, ০৮:৫২ | আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৯, ০৮:৫৪

ব্যুরো প্রধান, ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহ শহরের নাসিরাবাদ কলেজ হোস্টেলের ২২ শিক্ষার্থী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, পানিবাহিত রোগে তারা আক্রান্ত। তবে চিকিৎসকরা তাদের রোগের কারণ সম্পর্কে এখনো কিছু জানাননি। 

অসুস্থ ছাত্ররা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে প্রায় তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। হোস্টেলে পানি না থাকায় পাশের মসজিদ থেকে তারা পানি পান করেন। শুক্রবার দুপুর থেকে তারা জ্বর, মাথাব্যথা ও পেট ব্যথায় আক্রান্ত হতে থাকেন। এভাবে একে একে ৩০ জন ছাত্রের একই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। পরে তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই কলেজের ২২ শিক্ষার্থী হাসপাতালের ১৫নং ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া আরও কয়েকজন চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।  

হাসপাতালের ডাক্তাররা জানান, শিক্ষার্থীরা পানিবাহিত কোনো রোগে আক্রান্ত বলে তারা ধারণা করছেন। তবে এ ব্যাপারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে বলে জানান তারা।

এদিকে ময়মনসিংহে পানিবাহিত ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ বাড়ছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে সহস্রাধিক শিশু, নারী ও পুরুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। রোগের কারণ অনুসন্ধানে সরেজমিনে কাজ করছে চারটি মেডিকেল টিম।

১১ মার্চ সিটি করপোরেশনের সরবরাহকৃত পানি পরীক্ষার জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে লিখিত পত্র দেয় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। এরপর ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পানি পরীক্ষাগারের পরীক্ষককরা কাজ শুরু করেন। ওই পরীক্ষায় ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের পানিতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ‘ফিকাল কলিফর্ম’ নামক এক ধরনের ব্যকটেরিয়ার সন্ধান পাওয়া গেছে। তাদের  ধারণা, ক্ষতিকর এই ব্যাকটেরিয়ার কারণেই পানিবাহিত এ রোগের  সৃষ্টি হতে পারে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ময়মনসিংহের অঞ্চলিক পরীক্ষাগারের সিনিয়র ক্যামিস্ট মো. আনিছুর রহমান খান সাংবাদিকদের জানান, সিটি করপোরেশনের চিঠি পেয়ে ওইদিনই নগরীর পুলিশ লাইন, গলগন্ডা, খাগডহর, কাচিঝুলি, কাশর, ঢোলাদিয়াসহ ১০টি স্পট থেকে নমুনা পানি সংগ্রহ করেন তারা। ওই পানি পরীক্ষার পর ঢোলাদিয়া ও কাচিঝুলি এলাকার পানিতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ‘ফিকাল কলিফর্ম’ নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

পরীক্ষাগারের জুনিয়র ক্যামিস্ট শফিকুল ইসলাম জানান, সাধারণত পানিতে এ ধরনের ব্যাকটেয়ার থাকার কথা নয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে পানি সরবরাহ লাইনের লিকেজ থেকে ক্ষতিকর এ ব্যাকটেরিয়া পানিতে মিশে গেছে। এ সংক্রান্ত রিপোর্ট ইতিমধ্যে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

ময়মনসিংহ স্বাস্থ্য বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এ কে এম আবদুর রব বলেন, ‘শুনেছি পানিতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আমি রিপোর্ট দেখি নাই। তাই কিছু বলতে পারছি না।’

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেছেন, কাচিঝুলি ও ঢোলাদিয়া এলাকার পানিতে এ জীবাণু পাওয়া গেছে। এ দুটি এলাকার মানুষ বস্তিবাসী। তাদের টয়লেট ও খাবার পানির চাপকল বা সরবরাহ লাইন খুব কাছাকাছি। এ কারণেও পানি দূষিত হতে পারে।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে পানি এবং স্বাস্থ্য শাখার চারটি টিম সরেজমিনে কাজ করছে। ইতিমধ্যে পানি পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পেয়েছি। যে দুটি এলাকার পানিতে অল্প পরিমাণে ওই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে ওইসব এলাকাবাসীকে সরবরাহকৃত পানি পান না করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৩মার্চ/জেবি)