আস্তানা’র নতুন নাম ‘নুর সুলতান’

প্রকাশ | ২৩ মার্চ ২০১৯, ০৮:৪৫ | আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৯, ০৯:০৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস

মধ্য এশিয়ার দেশ কাজাখাস্তানের রাজধানীর নাম আস্তানার বদলে রাখা হয়েছে নুর সুলতান। সম্প্রতি প্রায় তিন দশক ধরে শাসনের পর দেশটির প্রেসিডেন্ট নুর সুলতান নাজারবায়েভ ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর তার নামেই রাজধানীর নামকরণ করা হয়েছে।

নুর সুলতান নাজারবায়েভ ছিলেন সোভিয়েত যুগের সর্বশেষ নেতা। তিনি ক্ষমতায় ছিলেন তিরিশ বছর। মঙ্গলবার তিনি হঠাৎ করে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তার পরদিনই বিদায়ী প্রেসিডেন্টকে শ্রদ্ধা জানাতে কাজাখাস্তানের পার্লামেন্টে ভোটাভুটিতে রাজধানীর নাম পাল্টে ‘নুর সুলতান’ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর কাজাখাস্তান যখন স্বাধীন রাষ্ট্র হলো, তখন থেকেই ক্ষমতায় ছিলেন ৭৮ বছর বয়সী নুর সুলতান নাজারবায়েভ।

কাজাখাস্তানের রাজধানীর নাম বদলানোর পর এখন আগের নামের জায়গায় নতুন নাম যোগ করতে গিয়ে বিরাট কর্মযজ্ঞ চালাতে হবে দেশটিকে। কিন্তু এরকম নাম পরিবর্তনের ঘটনা একেবারে নতুন কিছু নয়, আগেও বিশ্বের আরও অনেক রাজধানী শহরের নাম বদলানো হয়েছে।

মানুষের নামে রাজধানী শহরের নাম

বিশ্বের আরও অনেক দেশে জাতীয় নেতাদের নামে রাজধানীর নামকরণ করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় উদাহারণ যুক্তরাষ্ট্র। ১৭৯১ সালে দেশটির রাজধানীর নাম রাখা হয় প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের নামে।

শুধু রাজধানী নয়, যুক্তরাষ্ট্রের একটি পুরো রাজ্যের নামও রাখা হয়েছে তার নামে। আর ছোট বড় আরও কত শহর, দূর্গ আর পর্বতচূড়ার নাম যে ওয়াশিংটনের নামে রাখা হয়েছে, তার তালিকা অনেক দীর্ঘ। আমেরিকা নামটাও রাখা হয়েছে অভিযাত্রী আমেরিগো ভেসপুচির নামে।

আফ্রিকার একটি দেশও তাদের রাজধানীর নাম রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রেসিডেন্টের নামে। এটি হচ্ছে লাইবেরিয়ার রাজধানী মনরোভিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জেমস মনরোর নামে ১৮২৪ সালে এই নামকরণ করা হয়। কারণ প্রেসিডেন্ট মনরো মুক্তি পাওয়া ক্রীতদাসদের আফ্রিকায় ফেরত পাঠানোর পক্ষে বেশ জোরালো অবস্থান নিয়েছিলেন।

আমেরিকা থেকে ফিরে আসা কালো মানুষেরা যে বসতি গড়ে তোলেন সেটাই পরে লাইবেরিয়া নামে পরিচিতি পায়, যা ছিল আফ্রিকার প্রথম প্রজাতন্ত্র।

বিশ্বের একেবারে অন্য প্রান্তে নিউজিল্যান্ডের রাজধানীও কিন্তু একজন রাষ্ট্রনায়কের নামে। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী ওয়েলিংটনের নাম রাখা হয় বৃটেনের ডিউক অব ওয়েলিংটনের নামে ১৮৪০ সালে। এই দ্বীপে উপনিবেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে।

ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটির নাম আগে ছিল সায়গন। ১৯৭৫ সালে যখন ভিয়েতনাম যুদ্ধ শেষ হয়, তখন উত্তর ভিয়েতনামের কমিউনিষ্ট গেরিলাদের হাতে পতন ঘটে সায়গনের। এর এক বছর পর বিপ্লবী নেতা হো চি মিনকে সন্মান জানাতে সায়গনের নতুন নাম রাখা হয় হো চি মিন সিটি। তবে এখনো অনেকে ভিয়েতনামের এই নগরীকে পুরোনো নামেই ডেকে থাকে।

ব্যয়বহুল কাজ

কোন নগরীর নাম বদলানো বেশ ব্যয়বহুল কাজ। যারা ম্যাপ তৈরি করেন, তাদের পরবর্তী প্রকাশনাতেই নতুন নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। আর যে শহরের নাম বদলানো হলো, সেই শহরের সব সাইনবোর্ড, পথনির্দেশিকা থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি নথিতেও নাম বদল করতে হয়। আন্তর্জাতিকভাবে নতুন নামকে পরিচিত করে তুলতে হয়। এটার খরচ কম নয়।

সোয়াজিল্যান্ড হচ্ছে আফ্রিকার ছোট্ট একটি দেশ। ২০১৮ সালের এপ্রিলে সোয়াজিল্যান্ডের রাজা তৃতীয় এমসোয়াটি তার দেশের নাম বদলে রাখেন ইসোয়াটিনি। তিনি এই কাজ করেছিলেন তার দেশের ঔপনিবেশিক আমলের নামটি বাদ দেয়ার জন্য। অনুমান করা হয় এই নাম বদলের পেছনে তাদের খরচ হয়েছে প্রায় ষাট লাখ ডলার।

পুরোনো নামে ফেরত যাওয়া

১৯২৪ সালে রুশ বিপ্লবের নেতা ভ্লাদিমির লেনিনের মৃত্যুর ৫ দিন পর পেট্রোগ্রাড শহরের নাম বদলে রাখা হয় লেনিনগ্রাড। কিন্তু ১৯৯১ সালে যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে গেল, এই নগরীর নাম বদলে গেল আবার। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে এটি পরিচিত ছিল সেন্ট পিটার্সবার্গ নামে। সেই নাম ফিরে এলো।

ভলগোগ্রাডের ক্ষেত্রে নাম অদলবদল হয়েছে বেশ কয়েকবার। সোভিয়েত আমলে ১৯২৫ সালে এটির নাম রাখা হয় স্ট্যালিনগ্রাড, জোসেফ স্ট্যালিনের নামে। কিন্তু স্ট্যালিনের মৃত্যুর পর সোভিয়েত নেতা ক্রুশ্চেভ ক্ষমতায় এসেই এটির নাম বদল করে আবার ভলগোগ্রাড রাখেন।

সোভিয়েত আমলের নেতাদের নাম বিশ্বমানচিত্রে ছিল ৭০ বছরেরও কম সময়। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর তাদের নামে নামকরণ করা শহরগুলোর নাম বদলে যেতে শুরু করে।

তবে কোন কোন ক্ষেত্রে একটি জায়গার নাম নিয়ে এই টানাহেঁচড়া চলে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। যেমন ধরা যাক তুরস্কের ইস্তাম্বুলের কথা। কিংবদন্তী আছে, খ্রীষ্টপূর্ব সপ্তম শতকে বোসফরাস প্রণালীর তীরে গ্রীক নগরী বাইজান্টিয়াম গড়ে উঠেছিল।

বাইজাস নামে এক রাজার নামে নাকি ওই নগরীর নামকরণ করা হয়েছিল। কিন্তু এরপর চতুর্থ শতকে রাজা কনস্ট্যান্টিনের আমলে এটি কনস্ট্যান্টিনোপল নামে পরিচিতি পায়। এটি যখন অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে আসে, তখন তুর্কিরা এর নামকরণ করে ইস্তাম্বুল।

তবে আন্তর্জাতিকভাবে বিশ শতকের একেবারে গোড়া পর্যন্ত এটিকে কনস্ট্যান্টিনোপল বলেই ডাকা হতো। এরপর তুর্কি ডাক বিভাগ সিদ্ধান্ত নেয়, কোন চিঠির খামে ঠিকানার জায়গায় যদি কনস্ট্যান্টিনোপল লেখা হয়, সেই চিঠি তারা বিলি করবে না।

তারপরই আসলে এই নামটি ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়। বিশ্বের রাজনৈতিক নেতাদের জন্য হয়তো এটি একটি শিক্ষা। তারা যত ক্ষমতাশালী বা প্রভাবশালীই হোন না কেন, এমন নিশ্চয়তা নেই যে তাদের নামে নগরীর নাম রাখা হলে তা টিকে থাকবে। ১ হাজার ৬০০ বছর পরও এই নাম মুছে যেতে পারে। সূত্র: বিবিসি

ঢাকা টাইমস/২৩মার্চ/একে