উপজেলা নির্বাচন

১৪ সাংসদকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ

প্রকাশ | ২৩ মার্চ ২০১৯, ২১:২৯ | আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৯, ১৫:৩৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনের ভোট নেওয়া হবে আগামীকাল রবিবার। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে এ ধাপে তিনজন সাংসদকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাচনের তিন ধাপে শনিবার পর‌্যন্ত সংসদের ডেপুটি স্পিকারসহ মোট ১৪ জন সাংসদকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অপরাধে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের ভাষ্য, নির্দেশ পাওয়ার পর সাংসদরা আইনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করেছেন।

সংবিধানে রয়েছে, সরকারি লাভজনক পদে অধিষ্ঠ ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা কারও পক্ষে কোনো ধরনের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। তবে তারা ওই এলাকার ভোটার হলে কেবল ভোট দিতে যেতে পারবেন।

নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ার অভিযোগে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ পাওয়া ১৪ সাংসদের মধ্যে কেবল নড়াইল-১ আসনের কবিরুল হক মুক্তিকে দ্বিতীয়বারের মতো সতর্ক করা হয়। তবে এই সাংসদের দাবি, তিনি প্রথম নির্দেশ পাওয়ার পরই এলাকা ছেড়ে যান।

কিন্তু ভোটের আগের দিন আজ (২৩ মার্চ) কবিরুল হক মুক্তি নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় অবস্থান করছেন বলে জানতে পারে ইসি। ফলে তার নামে আজ আবার কড়া নোটিশ জারি করা হয়। রবিবার তৃতীয় ধাপে নড়াইলের কালিয়াসহ ১১৭ উপজেলায় ভোট রয়েছে।

ইসির যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান জানান, আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে এই সাংসদকে একদফা সতর্ক করা হয়েছিল। এরপরও এলাকায় অবস্থান করার তথ্য পাওয়া গেছে। সেক্ষেত্রে কোনোভাবে শনিবার সাংসদ এলাকায় অবস্থান করছে তথ্য পেলে ভোট বন্ধ করে দেওয়া হবে। পরবর্তীকে ভোটের ব্যয়ভার তাকেই বহন করতে হবে।

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ও দ্বিতীয় দফা হুঁশিয়ারি পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সাংসদ কবিরুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে এটা অপপ্রচার। আমি তো এখন এলাকাছাড়া। কালিয়া ছাড়ার জন্য নোটিশ পাওয়ার পরই আমি রাত ১২টার পরে চলে আসি। এলাকার বাইরে থাকায় ভোট বন্ধ করার তো দরকার পড়ছে না।’

স্থানীয় উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীরা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে অভিযোগ এনেছে বলে দাবি কবিরুলের। বলেন, তিনি  কারও পক্ষে প্রচারণা চালাননি। তার কাছে প্রার্থীরা চলে আসেন। এখন খুলনায় অবস্থান করছেন তিনি।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে এ পর‌্যন্ত নির্বাচন কমিশন অন্তত ১৪ জন সাংসদকে এলাকা ছাড়ার নোটিশ দিয়েছে। এর মধ্যে দুজনকে ভোট বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি ও মন্ত্রীর একজন এপিএসের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের আগে গত ১৭ মার্চ সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও গাইবান্ধা-৫ আসনের সাংসদ ফজলে রাব্বী মিয়া এবং কক্সবাজার-৩ আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমলকে এলাকা ছাড়ার চিঠি দেয় ইসি।

ডেপুটি স্পিকারের কাছে ইসির উপসচিব আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন করে গাইবান্ধার সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে প্রকাশ্যে একজন প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

‘যেহেতু আপনি বিধিবহির্ভূতভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন, তাই আপনাকে গাইবান্ধা-৫ নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করার জন্য ইসি নির্দেশনা দিয়েছেন। আপনার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কারণে নির্বাচন বন্ধ হলে এ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পরিচালনার জন্যে ইসি তথা সরকারের যে আর্থিক ব্যয় হবে পরবর্তীতে তার দায়দায়িত্ব নিরূপণ করা হবে।’

এর আগে প্রথম ধাপের উপজেলা ভোটের সময় নয়জন সাংসদকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে এলাকা ছাড়ার চিঠি দেওয়া হয়েছিল।  এরপর স্পিকারের শরণাপন্ন হয়েছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

কালকের তৃতীয় দফা ভোটের আগে নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশ পেলেন তিনজন সাংসদ।

এলাকা ছাড়লেন যে ১৪ জন

গাইবান্ধা-৫ আসনের সাংসদ ফজলে রাব্বি মিয়া, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মো. আফজাল হোসেন, রাজবাড়ী-২ আসনের মো. জিল্লুল হাকিম, কক্সবাজার-৩ আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, সুনামগঞ্জ-২ আসনের জয়া সেনগুপ্ত, কুড়িগ্রাম-৩ আসনের এম এ মতিন, হবিগঞ্জ-৩ আসনের মো. আবু জাহির, কুড়িগ্রাম-১ আসনের আছলাম হোসেন সওদাগর, সুনামগঞ্জ-১ আসনের মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, লালমনিরহাট-১ আসনের মোতাহার হোসেন, রাজশাহী-১ আসনের ওমর ফারুক চৌধুরী, নাটোর-৪ আসনের আব্দুল কুদ্দুস ও নেত্রকোণা-৫ আসনের ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল।

 

রবিবার তৃতীয় ধাপে ১১৭ উপজেলায় ভোট

ইসির জনসংযোগ শাখা জানায়, তৃতীয় ধাপে ১১৭ উপজেলায় ভোট হবে রবিবার।  সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে।

এবার উপজেলার ভোট হচ্ছে পাঁচ ধাপে। এর মধ্যে প্রথম ধাপ ও দ্বিতীয় ধাপের ভোট শেষ হয়েছে ১০ মার্চ ও ১৮ মার্চ। ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৩১ মার্চ চতুর্থ ধাপের উপজেলাগুলোতে হবে ভোট। পঞ্চম ও শেষ ধাপের ভোট হবে ১৮ জুন।

(ঢাকাটাইমস/২৩মার্চ/মোআ)