ডাকসুর প্রথম বৈঠকের প্রস্তাব এবং কে কী বললেন

প্রকাশ | ২৩ মার্চ ২০১৯, ২২:৩০ | আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৯, ২২:৪৬

ঢাবি প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

দীর্ঘ প্রায় তিন দশকের অচলায়তন ভেঙে প্রথম বৈঠক করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। নির্বাচনের ১২ দিন পর অনুষ্ঠিত প্রথম বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় এবং বেশ কয়েকটি প্রস্তাবও উত্থাপিত হয়। বড় পরিসরে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়, যেখানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে থাকবেন।

ডাকসুর সভাপতি উপাচার‌্য ড. আখতারুজ্জামান ও নবনির্বাচিত সব নেতার উপস্থিতিতে সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ডাকসুর আজীবন সদস্য করার একটি প্রস্তাব ওঠে। হলগুলোতে গণরুম-গেস্টরুম ও রাজনৈতিক বিবেচনায় সিট নিয়ে আলোচনা হয় সভায়। এ ছাড়া আলোচনা হয় সিনেটে ছাত্রপ্রতিনিধি ঠিক করা এবং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নির্দিষ্ট রিকশা ও ভাড়া নির্ধারণ করা নিয়েও।

বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামান, ভিপি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী।

অভিষেক অনুষ্ঠানে থাকবেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী

ঢাবি উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আজকের সভার মধ্য দিয়ে ডাকসুর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলো। বৈঠকে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’

‘বৈঠকে নেতৃবৃন্দকে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে যে, বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে যারা আছে তারা সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে সমন্বয় করে নিজেদের কাজের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করবে। কোন কোন ক্ষেত্রে তারা কাজ করতে পারবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তা চিহ্নিত করবেন তারা।

নির্বাচিতরা এখন শুধু ছাত্র নন শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিও উল্লেখ করে ভিসি বলেন, ‘ফলশ্রুতিতে তারা সবাই দায়িত্বশীলভাবে তাদের কর্মপরিকল্পনা করবেন, বাজেট করবেন এবং সকল কর্মপ্রয়াস গ্রহণ করবেন।’

‘একই সঙ্গে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে বড় আকারের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তারা করবেন, যেখানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে থাকবেন। এর দায়িত্ব দিয়েছি আমাদের কার্যকরী পরিষদকে।’

ভিসি আরো বলেন, ‘ভিপি, জিএস, এজিএসকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন কোরাম-কমিটি করে সে বিষয়গুলো আয়োজনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এটিই হলো আমাদের আজকের বড় দাগের সিদ্ধান্ত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আজীবন সদস্যপদ প্রদানের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্বাচনের জন্য সদয় সহযোগিতা করেছেন। তিনি যে আশ্বাস আমাদের দিয়েছেন তার সব বাস্তবায়ন তিনি করেছেন। সে কারণে আমাদের কার্যকরী পরিষদের সব সদস্য তাকে (প্রধানমন্ত্রী) ডাকসুর আজীবন সদস্য করার বিষয়ে সহমত পোষণ করেছেন।’

‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হলো। এটি একেবারেই আনুষ্ঠানিকভাবে পরবর্তী সভায় গঠনতন্ত্র দেখে আমরা এই কাজটি করব। এটি আমাদের আজকের কার্যকরী পরিষদের সিদ্ধান্ত।’

ছাত্রদলসহ বাম সংগঠনগুলো পুনরায় ডাকসু নির্বাচন এবং শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ডাকসুর সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ করার দাবিতে যে কর্মসূচি পালন করছে সে বিষয়ে উপাচার্য সরাসরি কোনো মন্তব্য না করে বলেন, ‘মত প্রকাশের অধিকার সবার আছে। এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য।’

নবনির্বাচিত সব সদস্য সভায় যোগদান করেন জানিয়ে ভিসি আশা প্রকাশ করেন বাকি সময়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক চরিত্র বজায় রাখতে তারা ভূমিকা রাখবে।

‘গণরুম ও রাজনৈতিক বিবেচনায় সিট থাকবে না’

ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা শাহাদাত বরণ করেছেন তাদের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে আমাদের বৈঠক শুরু হয়।’

‘আপনারা জানেন যে, সিনেটে পাঁচজন ছাত্রপ্রতিনিধি থাকে, সেটা নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। ভিসি স্যার আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন এ পাঁচজনকে বাছাই করার জন্য।’

‘রিকশা এবং সাইকেলের জন্য আলাদা লেন করা, রিকশা ভাড়া নির্ধারণ এবং বিভিন্ন আবাসিক এলাকার ন্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০০-৩৫০ রিকশার রেজিস্ট্রেশন দেয়া, তাদের নির্দিষ্ট ড্রেসকোড এবং গণপরিবহন নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে সভায় প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। আগামী বৈঠকে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

ভিপি বলেন, ‘আমাদের সব প্যানেলের দাবি ছিল হল থেকে গণরুম, গেস্টরুম এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় সিট দেওয়া বন্ধ করা। সেটা নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এটা নিয়ে বিভিন্ন হলে নোটিশ দিয়ে অছাত্র এবং বহিরাগতদের হল ত্যাগ করতে বলা হয়েছে।’

‘প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীকে সদস্যপদ দিতে চাইনি’

প্রধানমন্ত্রীকে ডাকসুর আজীবন সদস্য করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে কোটা আন্দোলনের মাধ্যমে উঠে আসা এ নেতা বলেন, ‘তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমরা সমাধানে পৌঁছাতে পারিনি।’

‘আমি নিজে বলেছি, আপনারাও দেখেছেন, শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বলেছে এ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ। তাই আমি চাইনি এ প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীকে সদস্যপদ দিতে। আমিসহ কয়েকজন এ বিষয়ে অপোজ করেছি। প্রধানমন্ত্রী একজন সম্মানিত ব্যক্তি। ডাকসুর আজীবন সদস্য হওয়া তেমন বড় কিছু নয়।’

‘আমরা যখন দায়িত্ব নিয়েছি, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ নির্বাচন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছে। আমিও তাদেরকে সমর্থন জানিয়েছি এবং সভায় উপাচার্য স্যারকে বলেছি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি বেরিয়ে আসবে। আমরা রোকেয়া হল ও কুয়েত মৈত্রী হলের ঘটনা দিয়ে আলোচনা শুরু করেছি।’

প্রধানমন্ত্রীকে ডাকসুর সদস্যপদ দিতে আপত্তি কোথায় সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ভিপি বলেন, ‘যেহেতু নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং নিরপেক্ষ ৮ জন শিক্ষক পর্যবেক্ষণ করে এ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ বলেছে। সেরকম একটি জায়গায় থেকে আমি মনে করি না যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সদস্য পদ প্রদান করা উচিত। সে জায়গা থেকে আমিসহ কয়েকজন বিরোধিতা করেছেন।

গোলাম রব্বানীর বক্তব্য

এ বিষয়ে জিএস গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সদস্য পদ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। ইতোপূর্বে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আজীবন সদস্য পদ দেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নামটি এসেছে। ডাকসুর সভাপতি বলেছেন, এটি আনুষ্ঠানিকভাবে পরবর্তী মিটিংয়ে সেভাবে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।’

ভিপির বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাব্বানী বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্রীয় ডাকসুর ২৫ সদস্যের যে বডি রয়েছে সেখানে ২৩ জন সরাসরি সমর্থন করেছেন। একমাত্র ভিপি নুর দ্বিমত পোষণ করেছেন। সুতরাং ডেমোক্র্যাটিক ওয়েতে তার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হয়নি।’

(ঢাকাটাইমস/২৩মার্চ/এনএইচএস/বিইউ/ডিএম/মোআ)