সংকটে আলোর মুখ দেখছে না সুকুমার বড়ুয়ার স্বপ্নের পাঠাগার

প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০১৯, ১১:০৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো, ঢাকা টাইমস

একুশে পদকপ্রাপ্ত দেশবরেণ্য ছড়াকার সুকুমার বড়ুয়ার বাস্তুভিটায় প্রতিষ্ঠিত পাঠাগার আলোর মুখ দেখছে না পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে। তার নিজের লেখাসহ হাতেগোনা কিছু বই নিয়ে গড়া পাঠাগারটির কার্যক্রম চালু করা যায়নি দীর্ঘ দুই বছরেও।

অভাবের তাড়নায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বঞ্চিত ছড়ার যাদুকর সুকুমার বড়ুয়ার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ছিল পাঠাগার প্রতিষ্ঠা। দারিদ্র্যের কারণে যেন আর কোনো শিশুর শিক্ষাজীবন থমকে না পড়ে, সেই স্বপ্ন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন তিনি। অবশেষে ২০১৬ সালের ১৬ জানুয়ারি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার বিনাজুরি ইউনিয়নের মধ্যম বিনাজুরিতে নিজ বাড়িতে ‘সুকুমার শিশু পাঠাগার’ গড়ে তোলেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দুই কক্ষের টিনসেডের সেমিপাকা পাঠাগারটিতে একটি বুক সেলফে সুকুমার বড়ুয়ার নিজের লেখা বই ছাড়াও হাতেগোনা কিছু বই রয়েছে। পাঠাগার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সুকুমার তরুন সংঘের সভাপতি ঝুলন বড়ুয়া আক্ষেপ করে বলেন, `পাঠাগারটি নিয়ে এলাকার মানুষেরও অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আলোর মুখ দেখছে না পাঠাগারটি। তবুও আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের বিশ্বাস, এটি একদিন ক্ষুদ্র পরিসর থেকে বটবৃক্ষের মতো সম্প্রসারিত হয়ে এলাকায় আলো ছড়াবে।`

সুকুমার বড়ুয়ার ছেলে অরুপ রতন বড়ুয়া বলেন, `দারিদ্র্যের নিষ্ঠুর কষাঘাতে বাবা মাত্র দুই তিন শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে দেন। কষ্টমাখা শৈশবের কথা মনে করে এলাকার ছেলে-মেয়েদের মেধা, মননের বিকাশে বাবার স্বপ্ন ছিল, বাস্তুভিটায় পাঠাগার গড়বেন। বাবার সেই স্বপ্নের পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হলেও নানাবিধ সমস্যায় কার্যক্রম পুরোপুরি চালু করা যায়নি। আশা করি, সবাই যার যার অবস্থান থেকে সার্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে বাবার দীর্ঘদিনের স্বপ্নের পাঠাগারটির কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে এগিয়ে আসবেন।` 

বিনাজুরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুকুমার বড়ুয়া বলেন, `একুশে পদকপ্রাপ্ত সুকুমার বড়ুয়া শুধু আমাদের ইউনিয়নের নয়, সারা দেশের গর্ব। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আমরা এই পাঠাগার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসি। সেখানে থাকা শিশুতোষ বইগুলো গ্রামের ছেলে-মেয়েরা গিয়ে পড়ে। তবে এই পাঠাগারকে সম্প্রসারিত করার পাশাপাশি বইয়ের সংগ্রহ আরো বাড়ানো গেলে এলাকার উঠতি প্রজন্ম উপকৃত হতো। সুকুমার বড়–য়ার জন্য বড় কিছু করার স্বপ্ন আমরাও দেখি। সবার সহযোগিতা পেলে একদিন এই পাঠাগার এলাকাকে প্রজ্বলিত করবে বলে আমার বিশ্বাস।`

ছড়ার যাদুকর খ্যাত সুকুমার বড়ুয়া বলেন, `পাঠাগারটি নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন, এলাকার ছেলে-মেয়েরা পড়তে আসবে, জ্ঞানের চর্চা করবে। টাকা-পয়সার অভাবে যাদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সমস্যা হয়, তাদের এই পাঠাগার থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। কিন্তু আর্থিক সীমাবদ্ধতা সেই স্বপ্নের পথে বাধার দেওয়াল হয়ে আছে।`

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, `সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি দানশীল ব্যক্তিদের সহযোগিতা পেলে আমার স্বপ্নের পাঠাগার একদিন স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে এলাকায় দীপ্তি ছড়াবে।`

এলাকার লোকজন জানান, সুকুমার বড়ুয়ার শৈশব কেটেছে দু:খ-কষ্টের নিষ্ঠুর বেড়াজালে। দুবেলা দুমুঠো ভাতের নিশ্চয়তা ছিল না। প্রাথমিক শিক্ষার স্তর পার হওয়ার আগেই তাই লেখাপড়া ছেড়ে পেটের ক্ষুধা নিবাড়নে বেছে নিতে হয়েছিল শ্রম বিকি-কিনির মতো কঠিন কাজ। যেই বয়সে সমবয়সী ছেলে-মেয়েরা বইখাতা নিয়ে ছুটে গেছে বিদ্যালয়ে, সেই বয়সে সুকুমার মাঠে ছুটে যেতেন গরু নিয়ে।

সেইদিনের সেই সুকুমার বড়ুয়ার খ্যাতি আজ জগৎজোড়া। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোতে না পারা সেই ছেলেটির ছড়া আজ পড়ানো হয় পাঠ্যবইয়ে। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তার অনন্য অর্জন প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে একুশে পদক গ্রহণ ।

শৈশবের দুঃস্বপ্নের সেই দৃশ্যপট এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় ছড়ার যাদুকরকে। সেই কষ্টকে অনুধাবন করেই তিনি পাঠাগারটি গড়েছিলেন যেন, এলাকার ছেলে-মেয়েরা শিক্ষার আলো ধারণ করে বেড়ে উঠতে পারে। পাঠাগারের পৃষ্ঠপোষকতায় নিন্মবিত্ত পরিবারগুলোর ওই সন্তানেরা বই-খাতা নিয়ে ছুটতে পারে জ্ঞানের ভুবনে।

(ঢাকাটাইমস/২৪মার্চ/ব্যুরো/এআর)