উপজেলা নির্বাচন

ভোটার-খরায় শেষ হলো তৃতীয় ধাপের ভোট

প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০১৯, ১৬:২৪ | আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৯, ১৯:১৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

প্রথম থেকেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি কম লক্ষ্য গেছে। এ নিয়ে নানা কথাবার্তা শুরু থেকেই ছিল। ধারণা করা হয়েছিল, পরবর্তী ধাপগুলোতে বাড়বে ভোটার উপস্থিতি। তবে রবিবার তৃতীয় ধাপে দেশের ১১৭টি উপজেলার ভোটেও একই চিত্র দেখা গেছে। ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকায় অনেক জায়গায় অলস সময় পার করতে দেখা গেছে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের। ভোটার-খরায় শেষ হয়েছে ভোট গ্রহণ।

ভোট-খরা কাটাতে নির্বাচন কমিশন ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও নির্বাচন আচরণবিধি নিয়ে এবার যথেষ্ট কড়াকড়ি অবস্থানে ছিল। কেন্দ্র ফাঁকা থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সর্বত্র সক্রিয় দেখা গেছে। কিন্তু তাতেও ভোটারদের টানতে পারেনি কেন্দ্র।

এর মধ্যেই আগের রাতে ভোট দিয়ে ব্যালট বক্স ভরার ঘটনাও ঘটেছে। আর তাতে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর সব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ অনেক জায়গায় সংঘর্ষ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ আহত হয়েছেন অনেকে। আবার জাল ভোট দিতে গিয়ে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ কয়েকজন ভোটার আটক হয়েছেন বিভিন্ন স্থানে।

এ ছাড়া মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে ১১৬ উপজেলার ভোট গ্রহণ।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যও চিত্রে দেখা গেছে, বেশির ভাগ উপজেলার ভোটকেন্দ্র সকাল থেকে মোটামুটি ফাঁকা ছিল। কোথাও কোথাও  বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতে গোনা ভোটার উপস্থিতি দেখা গেছে।

বরিশালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রের চিত্র ছিল এমনই। সাত উপজেলায় ভোটগ্রহণ শুরু হয় সকাল আটটায়। চলে বিকাল চারটা পর‌্যন্ত। ভোটকেন্দ্রে ভোটার না থাকলেও নির্বাচনী এলাকায় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে টহল দিয়েছে বিজিবির ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা। 

লক্ষ্মীপুরের পাঁচটি উপজেলায় ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। অনেকগুলো কেন্দ্রে ঘুরে ভোটারদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি।

চারদিকে যখন ভোটারের জন্য হাহাকার তখন আগের রাতেই ব্যালট বক্স ভরার অভিযোগ উঠেছে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে। বিভিন্ন কেন্দ্রে আগের রাতে ব্যালট পেপারে সিল মারার অভিযোগ পেয়ে ভোট স্থগিতের ঘোষণা দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. তাজুল ইসলাম।

ভোটের অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শফিকুল ইসলাম ও কটিয়াদী থানার ওসি মো. শামসুদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে জেলার অন্য ১২টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ হয়েছে।

কেন্দ্র দখলে বাধা দেওয়ায় চট্টগ্রামের চন্দনাইশে পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর অনুসারীদের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। সকাল ৯টার দিকে পূর্ব চন্দনাইশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এতে এক পুলিশ সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আফরুজুল হক টুটুল এ তথ্য জানিয়েছেন।

গুলিবিদ্ধ পুলিশ সদস্যের নাম ফরহাদ। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয় বলে জানা গেছে।

কক্সবাজারের পেকুয়ার মগনামা ইউনিয়নের দক্ষিণ মগনামা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জোর করে ব্যালট পেপারে সিল মারা নিয়ে দেই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ভোট শুরুর পর সকাল ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

গাজীপুরের শ্রীপুর, কাপাসিয়া, কালিয়াকৈর ও সদর উপজেলায় সকাল থেকে কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি একেবারেই কম দেখা গেছে।

সাতক্ষীরার সাত উপজেলায় নির্বাচন হলেও এখানে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল হতাশাজনক। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও প্রার্থীরা আশা করছিলেন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে। কিন্তু সারা দিনই অনেকটা ফাঁকা ছিল কেন্দ্রগুলো।

মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল কাদের ও আমিনুর রহমান ভোট বর্জন করেছেন। ভোট কারচুপির অভিযোগে তারা ভোট বর্জন করেন বলে জানান।

এদিকে, সদর উপজেলার জিয়নপুর ২ নম্বর কেন্দ্রে নৌকায় সিল মারার অভিযোগে কেন্দ্রটির সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার রুহুল আমিনকে আটক করা হয়।

এ ছাড়া চাঁপাইনাবাগঞ্জের ভোলাহাট, গোমস্তাপুর, নাচোল ও শিবগঞ্জ; রংপুরের সদর ও মিঠাপুকুর; চুয়াডাঙ্গার সদর, আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা ও জীবননগর; মাগুরার সদর, শ্রীপুর, শালিখা ও মোহাম্মদপুর; নড়াইলের সদর, কালিয়া ও লোহাগড়া; সাতক্ষীরার সদর, আশাশুনি, শ্যামনগর, কালীগঞ্জ, কলারোয়া, তালা ও দেবহাটা; কুষ্টিয়ার সদর, ভেড়ামারা, কুমারখালী, মিরপুর, খোকসা ও দৌলতপুর; মেহেরপুরের সদর, মুজিবনগর ও গাংনী; ঝিনাইদহের সদর, শৈলকুপা, হরিণাকুন্ডু ও কালীগঞ্জ; বরিশালের সদর, বাকেরগঞ্জ, বাবুগঞ্জ, বানারীপাড়া, উজিরপুর, মুলাদী ও হিজলা; ঝালকাঠির সদর, নলছিটি, রাজাপুর ও কাঠালিয়াসহ দেশের অন্যান্য উপজেলায়ও ভোটারদের উপস্থিতি কম ছিল শেষ পর‌্যন্ত।

(ঢাকাটাইমস/২৪মার্চ/বিইউ/মোআ)