চুড়ির কারখানা ভস্মীভূত

প্রাণহানি থেকে রক্ষা পেলেও মানহানির দুশ্চিন্তা

প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০১৯, ১৮:৩৪ | আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৯, ১৮:৩৫

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস

শনিবার রাত আটটায় প্রতিদিনের মতো কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরে গেছেন কারখানার শ্রমিক-মালিকরা। এর ঘণ্টা দুই পর আগুনে ছাই হয়ে গেছে তিল তিল করে গড়ে তোলা কারখানা। চেনা কর্মক্ষেত্রের পুরোটাই এখন ছাইয়ের স্তূপ। তার নিচে চাপা পড়েছে এক বছর ধরে বোনা স্বপ্নগুলো।  এই আগুনে কোনো প্রাণহানি না হলেও মানহানির দুশ্চিন্তাও গ্রাস করছে মালিকদের।   

শনিবার রাত ৯টা ৪০ মিনিটে আগুন লাগে রাজধানীর পুরান ঢাকার লালবাগের শহিদনগর এলাকায়। বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় স্থানীয় একটি চুড়ি তৈরির কারখানায়। বাঁশ-টিনে তৈরি কারখানা, লাগোয়া বাড়ি- খুব অল্প সময়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের কারখানাগুলোতে। পুড়ে যায় সাতটি কারখানা। এর মধ্যে চুড়ি তৈরির কারখানা ৫টি, ব্রাশ তৈরির একটি। আর একটি কাগজের গুদাম।

ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিটের এক ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ১০টা ৪০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ততক্ষণে আর কিছুই বাকি নেই। কারখানা ভর্তি মালামাল আর মেশিনপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

কারখানা বন্ধ ছিল বলে কোনো প্রাণহানি হয়নি। তবে প্রাণহানির ক্ষতি থেকে রক্ষা পেলেও এখন আরও বড় বৈষয়িক দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কারখানার  মালিকরা। ব্যাংকের ঋণ, সমিতির চড়া সুদের ঋণের পাশাপাশি আছে এর-ওর কাছে ধারের বোঝা। বৈশাখ আর ঈদ উৎসব ঘিরে প্রস্তুত মালামাল বিক্রি করে এসব ধারদেনা শোধ করার কথা ছিল তাদের।

কারখানা পুড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুড়েছে কারখানা মালিকদের সর্বস্ব। এখন মানহানির দুশ্চিন্তা তাড়া করছে তাদের। নিজেদের সবটুকু পুঁজি কাজে লাগিয়েছেন উৎসব সামনে রেখে।  সব পুড়ে যাওয়ায় এখন চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন তারা।

কারখানা মালিকরা জানান, চুড়ির বাজার উৎসবকেন্দ্রিক। ব্যবসায়ীরা সারা বছর চুড়ি উৎপাদন করেন ঈদের জন্য। তার আগে কিছু চুড়ি বিক্রি হয় বৈশাখকে কেন্দ্র করে। কিন্তু এবার কোনো উৎসবই ধরতে পারলেন না। আগুনে সবকিছু হারেয় তারা এখন বাকরুদ্ধ।

মো. সেন্টু নামের একজন কারখানা মালিক ঢাকাটাইমসকে বলেন, আগুনে তার তৈরি মালামালের সঙ্গে চুড়ি তৈরির কাঁচামাল এবং সব মেশিনপত্র পুড়েছে। এখন ঋণের টাকা কীভাবে শোধ করবে  সেটাই ভাবছেন। কয়েক দিনের মধ্যে পাওনাদাররা টাকার জন্য চাপ দিতে পারেন এমন শঙ্কাও জানান তিনি।

কোটি টাকা মূল্যের মালামাল ছিল সেন্টুর কারখানায়। প্রায় একই পরিমাণ মালামাল ছিল অন্যান্য কারখানায়। সেন্টু বলেন, ‘সার্কিট ব্রেকার থেকে আগুন লাগছে। কারখানাগুলা বাঁশের ছিল, তাই তাড়াতাড়ি আগুন ধইরা গেছে। কিচ্ছু বাঁচে নাই। সব শেষ!’

মালিকদের পাশাপাশি অথৈ সাগরে পড়েছেন শ্রমিকরাও। তবে তারা যতটা নিজেদের নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন তার চেয়ে বেশি ব্যথিত মমালিকদের কথা ভেবে।

রাসেল নামের একজন শ্রমিক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমগো কাজ নাই। কয়দিন পর কারখানা চালু হইলে কাজ পামু। নাইলে অন্য কোনো জায়গায় কাজ করুম। কিন্তু মালিকদের তো সব শ্যাষ। বৈশাখের আগে কিছু মাল বেচার কথা আছিল, তাও বেচতে পারে নাই।’

আহাদ নামের আরেকজন শ্রমিক বলেন, ‘ঈদের আগে কাজ পাওয়া একটু সমস্যা হইব। নাও পাইতে পারি। আমগো না হয় দিন যাইব। কিন্তু মালিকদের কোটি কোটি টাকার মাল শ্যাষ। হ্যার কী অইব!’

(ঢাকাটাইমস/২৪মার্চ/কারই/মোআ)