১০ টাকায় এক কোটি ব্যাংক হিসাব কৃষকের

প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০১৯, ২০:৩৬ | আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৯, ২২:১৩

রহমান আজিজ, ঢাকাটাইমস

নিম্ন আয়ের মানুষের দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে সরকারের উদ্যোগের সুফল পাচ্ছেন কৃষকেরা। দশ টাকা দিয়ে খোলা হিসাবে দুস্থ ও নিম্ন আয়ের মানুষের টাকা জমছে ব্যাংকে। রাষ্ট্রায়ত্ত আটটিসহ বিভিন্ন ব্যাংকে এমন ১ কোটি ৯০ লাখ ২৩ হাজার ৭৪৮টি হিসাব খোলা হয়েছে, যার মধ্যে কৃষকের হিসাব ৯৮ লাখ ৮৬ হাজার ৮৪৭টি।

বিভিন্ন ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সহজে হিসাব খোলা এবং পরিচালনায় কোনো ধরনের চার্জ না থাকায় ব্যাংকিং সেবা পেতে আগ্রহ বাড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষের। ফলে ব্যাংক সুবিধার আওতায় এসেছে অগণিত নিম্ন আয়ের মানুষ।

আগে ব্যাংক খাতের বড় ভোক্তা ছিল দেশের সচ্ছল বা মধ্যবিত্ত লোকেরা। দুস্থ বা নিম্ন আয়ের বড় অংশই ছিল আর্থিক সেবা খাতের বাইরে। তাদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে সরকার নানা সার্কুলার জারি করে। নেওয়া হয় বিশেষ ব্যবস্থায় হিসাব খোলার কার্যক্রম। ন্যূনতম ১০ টাকা, ৫০ টাকা এবং ১০০ টাকা জমা দিয়ে এসব হিসাব খোলার সুযোগ রাখা হয়। সর্বনিম্ন জমার বাধ্যবাধকতাও তুলে দেওয়া হয়। এসব হিসাবে জমা অর্থের ওপর মুনাফার হার অন্য হিসাবের চেয়ে বেশি দিতে বলা হয়। ফলে এসব হিসাব খোলার প্রবণতাও বেড়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, দেশের মোট জনসংখ্যার ১২ দশমিক ৯০ শতাংশ অতিদরিদ্র। গ্রামাঞ্চলে অতিদরিদ্র মানুষের জীবনযাপনে সহায়তা ও আপৎকালীন কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এসব হিসাবের সুবিধাভোগীদের মধ্যে কৃষক, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতাভোগী, মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষুদ্র জীবনবীমা পলিসি গ্রহীতা, অতিদরিদ্র উপকারভোগী, অতি-দরিদ্র মহিলা উপকারভোগী, ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির সুবিধাভোগী, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দুস্থ পুনর্বাসনের অনুদানপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ, ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মরত শ্রমিক, চামড়া ও পাদুকাশিল্প-কারখানায় কর্মরত শ্রমিক, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দুস্থ’ পুনর্বাসনের অনুদানপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ, স্কুলের শিক্ষার্থী, কর্মজীবী পথশিশু-কিশোর, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে অনুদানপ্রাপ্ত দুস্থ’ ব্যক্তি, আইলাদুর্গত ব্যক্তি, সব ধরনের প্রতিবন্ধীরা রয়েছে।

উল্লিখিত মানুষের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে কাজ করছে সরকারি ৮ ব্যাংক। এগুলো হচ্ছে সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত কৃষকের হিসাব খোলা হয়েছে ৯৮ লাখ ৮৬ হাজার ৮৪৭টি। এ ছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি খাতে ৫০ লাখ ৯২ হাজার ৪৫৩টি, অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি খাতে ২৬ লাখ ৮ হাজার ৪৮৪টি, মুক্তিযোদ্ধা খাতে ২ লাখ ৮হাজার ৭৩১টি, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন শ্রমিকের ১০ হাজার ৫২টি, তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মরত শ্রমিকের হিসাব ২ লাখ ৮৩ হাজার ৪৭৪টি, ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির সুবিধাভোগীর ৪৭ হাজার ৫৫০টি, এলএসবিপিসি প্রকল্পভুক্ত কারিগরের ৪ হাজার ২৯৩টি, ক্ষুদ্র জীবনবীমা পলিসি গ্রহীতার ১ লাখ ১৬ হাজার ৮১৭টি, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের ১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৬৩টি, দুস্থ পুনর্বাসনের অনুদানভোগীদের ১ হাজার ৪২৩টি, ফুড ও লাইভলিহুড সিকিউরিটি প্রকল্পের ৬২ হাজার ৯৩৭টি এবং অন্যান্য খাতে ৫ লাখ ৬ হাজার ৮২২টি হিসাব খোলা হয়েছে। এসব হিসাবের মধ্যে বেশির ভাগ হিসাবই খোলা হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ৮ ব্যাংকে।

১০ টাকার অ্যাকাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া শুরু হয় কৃষকদের মাধ্যমে। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯৮ লাখ ৮৬ হাজার ৮৪৭ জন কৃষক এই হিসাবে জমা রেখেছেন ৩০৩ কোটি টাকা। মুক্তিযোদ্ধাদের অ্যাকাউন্টে জমা রয়েছে ২৫৪ কোটি টাকা।

তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকরা জমা রেখেছেন ১৩৪ কোটি টাকা। প্রতিবন্ধীরা ২৫ কোটি জমা করেছেন। এ ছাড়া ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের জমা ১১২ কোটি টাকা, ক্ষুদ্র জীবনবীমা কর্মসূচি গ্রহীতারা ১৭ কোটি  ৬৩ লাখ টাকা, এলএসবিপিসি কারিগররা ২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ৬৮ লাখ টাকা জমা রেখেছেন।

এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দারিদ্র্য কমানো, টেকসই ও স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির জন্য সোনালী ব্যাংক দরিদ্র ও স্বল্প শিক্ষিতদের আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এর জন্য প্রধান কার্যালয়ে পৃথক একটি সেল গঠন করা হয়। গত বছর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কর্মসূচির আওতায় সোনালী ব্যাংকে ৬০ লাখ মানুষ অ্যাকাউন্ট খোলেন।’

ঢাকাটাইমস/২৪মার্চ/ডিএম