কেমন হলো ডাকসুর প্রথম নির্বাহী সভা?

রাকিবুল হাসান রাকিব
 | প্রকাশিত : ২৫ মার্চ ২০১৯, ১০:২১

সভা মানেই সেখানে বিতর্ক হবে। সে বিতর্ক তর্কেও গড়াতে পারে কখনো কখনো। কিন্তু কেবল তর্কেও খাতিরেই যদি তর্ক হয় তাহলে সভা প্রাসঙ্গিকতা হারায়। তারপরও সবকিছু মিলেই সভা। বিভিন্ন সভায় চেয়ার ছোড়াছুড়ি, হাতাহাতি, মারামারি এমনকি মৃত্যুর নজিরও আমরা দেখি ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে। স্বাভাবিকভাবেই সেসব খবর সংবাদ মাধ্যমে আসে, আমরা পাঠকরা সে খবর লুফে নিই গদগদ হয়ে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হিশেবে আমরা এগুলোকে 'সৌন্দর্য' বলে অভিহিত করি। আমরা সত্যিকার অর্থেই সুন্দরের পূজারি।

কেমন হলো ডাকসুর প্রথম নির্বাহী সভা? এ প্রশ্নের পুঙ্খানুপুঙ্খ উত্তর দিতে গেলে সভার রেজুলেশন ভঙ্গ করা হয়। সভায় যেকোনো বিষয়ে যত রকম আলোচনাই অনুষ্ঠিত হোক না কেন, সভা শেষে যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে সেটিই কেবল বাহিরে প্রকাশ করতে হবে- এটিই নিয়ম। সভার বিবরণী বাহিরে আসতে পারে, তবে সেটি কোনো রেফারেন্স/সোর্স উল্লেখ করে নয়। এবং সভার কোনো সদস্য যদি সরাসরি সভার বিবরণী বাহিরে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে তাহলে তা নীতি ও রীতি পরিপন্থী কাজ বলে বিবেচিত হবে। এসব জেনে-বুঝেও আমি তাগিদ অনুভব করছি দুইটি প্রসঙ্গ তুলে ধরার। কারণ সংশ্লিষ্ট প্রসঙ্গ দুটি সংবাদ মাধ্যমে যেভাবে এসেছে তা সভার কার্যবিবরণির সাথে সাংঘর্ষিক।

১. দেশরত্ন শেখ হাসিনার আজীবন সদস্য পদ প্রসঙ্গ:

ডাকসুর আন্তর্জাতিক সম্পাদক অর্নি গঠনতন্ত্রের ১৮ ধারা অনুযায়ী এই প্রস্তাব উত্থাপন করার সাথে সাথেই তুমুল করতালির মাধ্যমে তা স্বাগত জানানো হয়। ডাকসুর সভাপতি উপাচার্য স্যারও নিজের সম্মতি প্রকাশ করেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এ প্রস্তাব সেক্ষেত্রে অটোমেটিক সিদ্ধান্তে পরিণত হয়ে যায়। তারপরও গণতান্ত্রিক রীতি মেনে ফ্লোর ওপেন করে দেয়া হয় এ প্রস্তাব সম্পর্কে আলোচনার জন্য। ২৭ জনের মধ্যে সভায় উপস্থিত ২৬ সদস্যের ২৪ জনই প্রস্তাবের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করে। ভিপি নুর ও সমাজসেবা সম্পাদক আকতারও এ বিষয়ে একাধিকবার তাদের বক্তব্য প্রদান করে।

তাদের বক্তব্যের সারমর্ম হলো- প্রধানমন্ত্রীকে নিঃসন্দেহে আজীবন সদস্য পদ প্রদান করা যেতে পারে। তবে যেহেতু নির্বাচন নিয়ে কিছু বিতর্ক উঠেছে এবং সেই বিতর্ক নিরসনে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে, সেই কমিটির রিপোর্ট প্রদানের আগেই যদি এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তাহলে সেটি দৃষ্টিকটু দেখাবে। তদন্ত শেষ হবার পর বিতর্কহীন অবস্থায় কিংবা পরবর্তীতে আরও সুন্দর নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত ডাকসু যদি নেত্রী শেখা হাসিনাকে এই সম্মাননা প্রদান করে তাহলে তা প্রধানমন্ত্রীকে আরও গৌরবান্বিত করবে। আরও আলোচনার পরে সভাপতি ঘোষণা দেন, 'প্রাথমিকভাবে এই প্রস্তাব গৃহীত হল এবং রেজুলেশন মেনে লিখিতভাবে প্রস্তাবটি পরবর্তী সভায় চূড়ান্তভাবে গ্রহণ করা হবে'।

তিনি আরও ঘোষণা দেন, একটি বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে এ সম্মাননা প্রদান করা হবে। পুরো সভা তুমুল করতালি দিয়ে সভাপতির ঘোষণাকে স্বাগত জানায় এবং ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদকও তখন এই ঘোষণার কোন বিরুদ্ধাচরণ করে না।

২. রিকশা ভাড়া নির্ধারণ ও পৃথক লেন সম্পর্কিত প্রস্তাব:

ক্যাম্পাসে গণপরিবহন নিয়ন্ত্রণ করতে ডাকসুর জিএস রাব্বানী ভাই সুস্পষ্টভাবে কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ক. বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আদলে ক্যাম্পাসে ইউনিফর্ম পরিহিত নির্দিষ্টসংখ্যক রিকশা অনুমোদন, খ. যৌক্তিক রিকশা ভাড়া নির্ধারণ, গ. ইউনিফর্ম পরিহিত রিকশা এবং শিক্ষার্থীদের পায়ে হেঁটে চলাচলের জন্য পৃথক লেন ব্যবস্থা চালুকরণ, ঘ. সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পুরো ক্যাম্পাসে চক্রাকারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মিনিবাস সার্ভিস চালুকরণ ইত্যাদি। রাব্বানী ভাইয়ের এই প্রস্তাবগুলো প্রশংসিত হয় এবং বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য ছাত্র পরিবহন সম্পাদক নোমান ভাইকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করলাম, সংবাদ মাধ্যমে এই খবর দুইটি ভিন্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে। বলা হয়েছে, ভিপিসহ দুইজন আজীবন সদস্য প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। প্রকৃতপক্ষে তারা বিরোধিতা নয়, ভিন্নভাবে প্রস্তাবটি বাস্তবায়নের কথা বলেছে। সংবাদ মাধ্যমে আরও বলা হয়েছে ভিপি নুর রিকশা ভাড়া নির্ধারণ ও লেন ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব দিয়েছে। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রচারণা। এই প্রস্তাবটি দিয়েছে ডাকসুর জিএস রাব্বানি ভাই। গঠনতন্ত্র মোতাবেক সভার সম্পূর্ণ বিবরণী লিখিতভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তাই আমি বা অন্য যে কেউ কোন প্রকার ভুল তথ্য প্রচারের বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই।

ডাকসুর সভাপতি সম্মানিত উপাচার্য স্যার একাধিকবার আমাদের সভার প্রসিডিউর সম্পর্কে অভিহিত করেছেন। আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন, মিনি সংসদ খ্যাত এই ডাকসুতে আমাদের ভূমিকা, সাংগঠনিক পদক্ষেপ-বক্তব্য কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে। সেসব তোয়াক্কা না করে এবং সভার রীতি-নীতি ভঙ্গ করে ভিপি নুর সংবাদ মাধ্যমে সভার বিবরণী যেভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে তা একইসাথে নিন্দনীয় এবং চরমভাবে নৈতিক স্থলনজনিত অপরাধ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবান্বিত ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ ইতিহাস এমন হিপোক্র্যাট ভিপিকে কখনোই প্রশ্রয় দেয় না, দিবেও না। সংবাদ মাধ্যমের বন্ধুদের প্রতি আহ্বান, আপনারা যাচাই-বাছাই করে সংবাদ পরিবেশন করুন। সংবাদ মাধ্যম বস্তুনিষ্ঠ ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হলে তা জাতির জন্য অফুরন্ত ক্ষতির কারণ হবে কথাটি আমরা আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

রাকিবুল হাসান রাকিব: সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :