গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলেনি কেন?

প্রকাশ | ২৫ মার্চ ২০১৯, ১১:২১ | আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৯, ১১:২৩

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
ফাইল ছবি

২০১৭ সাল থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। তবে স্বাধীনতার পর গত ৪৮ বছরে এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ বিভিন্ন সময় চেষ্টা করলেও তাতে সফল হয়নি।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর 'অপারেশন সার্চ লাইট' নামে পরিচালিত অভিযানে প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশিকে হত্যা করা হয়েছিল বলে দাবি করে বাংলাদেশ। কিন্তু ৪৮ বছর পরও কেন এখনো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি বাংলাদেশের ২৫ মার্চের গণহত্যা?

ব্রাসেলসে আন্তর্জাতিক আইনে বিশেষজ্ঞ আহমেদ জিয়াউদ্দিন জানান, যেদেশে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে তারা ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশ যখন ওই গণহত্যার ঘটনাকে 'গণহত্যা' বলে স্বীকার করে নেয় তখনই কেবল ওই ঘটনা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য বিবেচনায় আসে।

‘একটা গণহত্যাকে তারা (আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়) যখন স্বীকার করে নেয়, সেটা সংসদের মাধ্যমেই হোক বা নির্বাহী সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই হোক, তখন বলা যায় সেটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত’ বলেন জিয়াউদ্দিন।

‘আবার কোনো গণহত্যার ঘটনাকে যদি জাতিসংঘ গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয় তাহলেও সেটিকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বলা হবে।’

জিয়াউদ্দিন বলেন, গণহত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনা মনে করা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানি ও পূর্ব ইউরোপে ইহুদি নিধনের ঘটনাকে। সেসময়ের গণহত্যার ঘটনাটিকে বোঝানোর জন্য 'হলোকস্ট' নামে নতুন একটি শব্দও তৈরি হয়েছে।

এছাড়া গত শতাব্দীর প্রথমদিকে আর্মেনিয়ার গণহত্যাসহ রুয়ান্ডা ও যুগোস্লাভিয়ার গণহত্যা জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আদালত স্বীকৃতি দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন জিয়াউদ্দিন।

বাংলাদেশের ২৫ মার্চের গণহত্যা দিবসকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না পাওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে জিয়াউদ্দিন বলেন, ‘এই গণহত্যাটিকে সেভাবে স্বীকৃতি পাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়নি।’

জিয়াউদ্দিন বলেন, ‘আর্মেনিয়ার গণহত্যাকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ানোর জন্য আর্মেনিয়ানরা ১০০ বছর ধরে চেষ্টা করেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আর্মেনিয়ান গোষ্ঠীগুলো নিয়মিতভাবে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।’

‘বাংলাদেশের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেয়ার ব্যাপারে পৃথিবীর কোনো দেশে কোনো কার্যক্রম পালন করা হয়েছে বলে মনে করি না আমি।’ সরকারের একক প্রচেষ্টায় এই স্বীকৃতি পাওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন জিয়াউদ্দিন।

‘যতক্ষণ পর্যন্ত দেশের মানুষ ও প্রবাসী জনগোষ্ঠী এর সাথে যুক্ত না হচ্ছে, এ বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য গবেষণা না হচ্ছে, প্রামাণ্য দলিল তৈরি না হচ্ছে এবং এ বিষয়ে ক্রমাগত প্রচারণা না হচ্ছে ততক্ষণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া সম্ভব না।’

রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন জাতিসংঘের উপ-মহাসচিব এবং গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা আডামা ডিয়েং। তখন তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত হওয়া গণহত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে তুলে ধরবেন তিনি।

ডিয়েং বলেন, ‘কিছু দেশ এর বিরোধিতা করতে পারে, কিন্তু আমরা পাকিস্তানিদের দ্বারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় চালানো গণহত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতের সামনে উপস্থাপন করবো।’ –বিবিসি বাংলা

(ঢাকাটাইমস/২৫মার্চ/জেবি)