নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত টেকসই উন্নয়ন

প্রকাশ | ২৫ মার্চ ২০১৯, ১২:২৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক পূনর্বাসন পলিসি গ্রহণ করা প্রয়োজন। এর পাশাপাশি স্থানীয় কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সুরক্ষায় বহুমূখী কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। গতকাল ২৪ মার্চ রাজধানী ঢাকার সিরডাপ আর্ন্তজাতিক কনফারেন্স হলে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আর্ন্তজাতিক উন্নয়নসংস্থা ইসলামিক রিলিফ ওয়ার্ল্ড ওয়াইড বাংলাদেশ-এর এক আয়োজনে উঠে আসে এ বিষয়।

‘সমন্বিত টেকসই উন্নয়ন’ শীর্ষক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয় এ অনুষ্ঠানে। এতে বলা হয়, রবি মৌসুমের নতুন ফসলগুলোর জন্য দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় বীজ ও চারা সরবরাহ করা প্রয়োজন।

ইসলামিক রিলিফ ওয়ার্ল্ড ওয়াইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর আকমল শরীফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ্ কামাল এবং বাংলাদেশ এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব কে এম আব্দুস সালাম। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সংস্থার প্রকল্প ব্যবস্থাপক এনামুল হক সরকার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এম. রেজাউল ইসলামের নেতৃত্বে ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, দৌলতখান ও উপজেলায় নদী ভাঙ্গণে ক্ষতিগ্রস্তদের সামাজিক মর্যাদা ও জীবিকায়ন অবস্থা বিষয়ে (ভালনারেবিলিটি, সোশ্যাল ডিগনিটি অ্যান্ড লিভলিহুড চয়েসেস অব দ্য রিভার ব্যাঙ্ক ইরোশন ভিকটিমস ইন ভোলা ডিসট্রিক্ট অব বাংলাদেশ) গবেষণার ফলাফল উপস্থাপনে তিনি জানান, ভোলা জেলার  ৯৪.৬ শতাংশ মানুষ নদী ভাঙ্গণের ফলে স্থানান্তরিত হয়েছে এবং তন্মধ্যে সর্বোচ্চ ১১ বার স্থানান্তরিত হওয়ার বিষয়টিও উঠে আসে। তিনি আরো জানান, নদী ভাঙ্গণের ফলে মধ্যবিত্ত ও সম্ভ্রান্ত পরিবার সর্বস্ব হারিয়ে তাঁদের সামাজিক অবস্থান ও মর্যাদায় আমূল পরিবর্তন হয়। তিনি বলেন, বিকল্প কর্মস্ংসস্থান না থাকায় ৮৪.৬ ভাগ মানুষ নদীতে মাছ ধরাকে নিজেদের জীবিকায়নের উৎস হিসেবে বেছে নিয়েছে।

ড. এম. রেজাউল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মসূচি ও নীতিতে নদী ভাঙ্গণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য বেশকিছু কার্যক্রম থাকলেও বাস্তবে এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নে টেকসই উদ্যোগকে খুব একটা বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় না।

অধ্যাপক ইসলাম বলেন, নদী ভাঙ্গণে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চিন্তা করা প্রযোজন যেমন: নদীভাঙ্গণ ক্ষতিগ্রস্তবান্ধব দারিদ্র দূরীকরণ কর্মসূচি গ্রহণ, কমিউনিটিভিত্তিক কার্যক্রম গ্রহণ, দুর্যোগোত্তর সমষ্টিভিত্তিক অর্ন্তভ‚ক্তিমূলক কর্মসূচি এবং সর্বোপরি নদী ভাঙ্গণ ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সঠিক খাদ্য নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন।

দক্ষিণাঞ্চলের লবনাক্ত এলাকায় জলবায়ু উপযোগী ফসলের উপর (অ্যাকশন রিসার্চ ফর ইন্ট্রোডিউসিং/ প্রমোটিং ক্লাইমেট অ্যাডাপটিভ অ্যান্ড রেসিলিয়েন্ট ক্রপস এট তজুমুদ্দিন, ভোলা) ১ বছরব্যাপী গবেষণা করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল কাদের। তিনি জানান, ভোলা জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার ২টি ভিন্ন অঞ্চলে কৃষকের জমিতে প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে বছরব্যাপী গবেষণায় দেখা যায়, এই এলাকায় কৃষকদের প্রচলিত রবি শস্য যেমন: মুগ ডাল, আলু, মরিচ, বাদাম ইত্যাদির পরিবর্তে টমেটো, সূর্যমূখী, ভুট্টা, বার্লি, সয়াবিন ও গমের ফলন অনেক ভালো হয়। লাভও বেশি হয়। খরিফ-১ মৌসুমে অধিকাংশ কৃষক জমি পতিত রেখে দেয়। কিন্তু উপরোক্ত গবেষণায় দেখা গেছে যে, খরিফ-১ মৌসুমে পাট, খরিফ ভুট্টা, তিল ও ধৈঞ্চা লাভজনকভাবে চাষ করা সম্ভব। তিনি আরো বলেন, জুলাই মাসের তৃতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে আমন ধানের চাষ করা হলে এবং সঠিক জাত নির্বাচন করা হলে অধিক ফলন এবং লাভ পাওয়া সম্ভব। দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের জন্য রবি মৌসুমের নতুন ফসলগুলোর জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক প্রয়োজনীয় বীজ ও চারা সরবরাহের ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

আয়োজকরা জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারনে ভোলা জেলার একটি বিশাল জনগোষ্ঠী জীবনযাত্রায় পরিবর্তন হয়েছে। ফলে ইসলামিক রিলিফ ওয়ার্ল্ড ওয়াইড বাংলাদেশ ভোলা জেলার তজুমদ্দিন উপজেলায় জলবায়ু ঝুকিপূর্ণ হতদরিদ্র সম্প্রদায়ের জন্য সমন্বিত টেকসই উন্নয়ন প্রকল্প (ইন্টিগ্রেটেড সাসটেইন্যাবল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম ফর ক্লাইমেট ভালনারেবল আল্ট্রা পুওর কমিউনিটিজ অব সাউদার্ন বাংলাদেশ-আইএসডি ক্লাইম্ব আপ) শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, যা তিন হাজার পরিবারের উন্নয়নে কাজ করে।

প্রকল্পটির চূড়ান্ত মূল্যায়ন দলের প্রধান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালমা আক্তার জানান, প্রকল্পভূক্ত তিন হাজার পরিবারকে এককালীন ১৬ হাজার টাকা ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের ফলে তারা পছন্দমতো আয়বৃদ্ধিমূলক কাজে সম্পৃক্ত হতে পেরেছে। ফলে তাদের মাসিক আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৬৩%, প্রকল্পের শুরুতে তাদের গড় আয় ৩৫১১ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে তা বর্তমানে ১২ হাজার ৭ শত ৬৩ টাকা হয়েছে। সংস্থার তিন হাজার স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা এবং ৫২টি গভীর নলকূপ স্থাপনের ফলে অতি-দরিদ্র পরিবারের মধ্যে পানিবাহিত সংক্রামক রোগব্যাধি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের জন্য ১২টি টয়লেট,  দুই বছর যাবত শিক্ষাসামগ্রী প্রদান শিক্ষার্থীদের ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ঢাকাটাইমস/২৫মার্চ/টিএমএইচ