মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ দেখি ফিরে ফিরে

প্রকাশ | ২৫ মার্চ ২০১৯, ১৮:১৯ | আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৯, ২৩:০০

আরিফুর রহমান

আগামীকাল ২৬ মার্চ বাংলাদেশের ৪৯তম স্বাধীনতা দিবস। এই মহান দিনে জাতি সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করবে একাত্তরের শহীদদের। তাদের অকাতরে বিলিয়ে দেওয়া জীবনের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ আজ বিশ্বদরবারে সমীহ পাওয়া নাম।

স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে আমরা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জানাই লাল সালাম। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের হাতে সম্ভ্রম হারানো লাখো মা-বোনের প্রতি সমবেদনা ও শ্রদ্ধা।  

বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে হামলে পড়ে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সেই অতর্কিত আক্রমণ প্রতিহত করে বাঙালি দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য হাতে তুলে নেয় অস্ত্র। দীর্ঘ ৯ মাস মরণপণ লড়াইয়ের মাধ্যমে এক সাগর রক্ত পেরিয়ে বাংলার দামাল সন্তানরা ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতার লাল সূর্য।

আমরা একটু পিছিয়ে স্মরণ করি ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের কথা। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের বদলে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা নির্বিচারে হত্যা করতে থাকে বাঙালিদের। ২৫ মার্চের আক্রমণের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যেকোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

শুরু হয় বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ। গঠিত হয় প্রবাসী সরকার। তাদের নেতৃত্বে সংগঠিত রূপ নেয় মুক্তিযুদ্ধ। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের আত্মদান, তিন লাখ নারীর সম্ভ্রম আর বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় বাংলার বিজয়। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। উড্ডীন হয় লাল-সবুজ পতাকা।

মুক্তিযুদ্ধের সময় এ দেশেরই কিছু লোক বিশ্বাসঘাতকতা করে হাত মিলিয়েছিল পাকিস্তানি ঘাতকদের সঙ্গে। তারা অংশ নেয় গণহত্যা, নারী নির্যাতন, লুটতরাজ আর অগ্নিকাণ্ডের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে। সেই চিহ্নিত শত্রুদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে তিন যুগের বেশি সময়। স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতায় এসে গত এক দশকে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়। আরও যারা যুদ্ধাপরাধী রয়েছে তাদের বিচারকাজ চলছে। আশা করি এভাবে একদিন রাজাকারমুক্ত হবে দেশ।

কিন্তু একটি কাঁটা এখনোর মনের ভেতর খচখচ করছে। স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনিদের কয়েকজন এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিদেশে কয়েকজনের অবস্থান চিহ্নিত হলেও তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা যায়নি। সরকার এ ব্যাপারে জোরালো উদ্যোগ নেবে বলে আমরা আশা করি।

মুক্তিযুদ্ধ একটি স্বাধীন দেশের আকাঙ্ক্ষার পাশাপাশি একটি আদর্শের লড়াইও ছিল। স্বাধীনতা দিবস আবার এসেছে আমাদের সামনে, অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সেসব আদর্শের দিকে ফিরে তাকানোর দাবি নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ নানা ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে মধ্যম আয়ের দেশ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু এখনো সুশাসন পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি সব ক্ষেত্রে। সরকার এদিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে বলে আমরা জানি। এই মহান দিনে আমাদের শপথ হোক ন্যায়ভিত্তিক সাম্য, সুশাসন প্রতিষ্ঠা আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের প্রত্যয় উজ্জীবিত করা।

আমাদের পাঠক, লেখক. বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাই স্বাধীনতা দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা।