ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারানো নিপা

হাসপাতালের বিছানায় সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারানো মেয়ে নিপার পাশে নীরবে বসেছিলেন বাকরুদ্ধ বাবা-মা। এর মধ্যে বেজে উঠল বাবা রফিকুল ইসলামের ফোনের রিংটোন। কলটি রিসিভ করার পর উচ্চস্বরে কেঁদে উঠলেন তিনি। ফোন কেটে খবরটি মেয়েকে জানাতেই ডুকরে কাঁদল সেও, কাঁদতে শুরু করলেন মা মুসলিমা বেগমও।

না, নতুন কোনো দুঃসংবাদ আসেনি!রবিবার বিকালে প্রকাশিত প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় নিপা ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। যশোরের শার্শা উপজেলার বুরুজবাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম ওই সুসংবাদটিই মোবাইল ফোনে জানান নিপার বাবাকে। তবে খবরটি যেন তাদের পরিবারের বিষাদকে আরও বাড়িয়ে দেয়। হতাশার মাঝে খুশির খবরে তারা আটকে রাখতে পারেননি চোখের পান৷

বুরুজবাগান পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী মেফতাহুল জান্নাত নিপা (১১)। গত ২০ মার্চ সকালে স্কুলে যাওয়ার পথে পল্লীবিদ্যুতের একটি পিকআপভ্যান তাদের বহনকারী স্কুলভ্যানকে চাপা দেয়। এতে গুরুতর আহত হয় নিপাসহ আরও তিন শিক্ষার্থী। হাসপাতালে ভর্তির পর নিপার ডান পা কেটে ফেলতে হয়। জ্ঞান ফেরার পর থেকে গত পাঁচদিন ধরে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেডে শুয়ে নিপা নিজের কেটে ফেলা পায়ের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকছিল। আর দুচোখ থেকে অঝোরে ঝরছিল অশ্রু। মাঝে মাঝেই বাবা-মায়ের কাছে একের পর এক প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছিল। বাকরুদ্ধ বাবা-মা নীরবে চোখের পানি ফেলা ছাড়া প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে পারছিলেন না।

নিপা গত বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পর বুরুজবাগান পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। ষষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায়ও প্রথম হয়েছিল সে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল বুরুজবাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকেই।

দুর্ঘটনার পাঁচদিন পার হলেও ধরা পড়েনি পল্লীবিদ্যুতের ওই পিকআপভ্যানের চালক। পুলিশ অবিলম্বে তাকে আটকের আশ্বাস দিলেও তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।

যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থপেডিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক আ ন ম বজলুর রশীদ জানান, নিপার অবস্থা আগের চেয়ে একটু ভালো৷ তবে তার ডান হাত ভাঙা আছে,পরে অস্ত্রোপচার করতে হবে৷

(ঢাকাটাইমস/২৫মার্চ/প্রতিবেদক/এআর)