স্বাধীনতার পরিপূর্ণতা আওয়ামী লীগই দিতে পারে

ড. কাজী এরতেজা হাসান
 | প্রকাশিত : ২৫ মার্চ ২০১৯, ১৯:৫৫

নৈসর্গিক রূপ, কল্পচিত্র আর মানুষের বিচিত্র চিন্তা-চেতনা লিপিবদ্ধ করার কাজটি বেশ কঠিন। আর গণিতশাস্ত্র, ব্যাকরণ, রাজনীতি এবং রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভবত কঠিনতর কাজ। কিন্তু মানুষের হূদয় যে এক বিশাল ক্যানভাস। এই হূদয়, মা-মাটি-মানুষ নিয়েই আমার জন্মভূমি বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারি যেমন ভাষার মাস, তেমনি মার্চ স্বাধীনতার মাস। আমরা প্রতিবছর মার্চের ছাব্বিশ তারিখে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন করে থাকি। মার্চ মাস এলেই স্বাধীনতা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় গণমাধ্যমে আলোচনায় উঠে আসতে থাকে। এসব বিষয়ের মধ্যে যেমন থাকে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস প্রসঙ্গ, তেমনি থাকে স্বাধীনতার সীমারেখা প্রভৃতি তাত্ত্বিক বিষয় সম্পর্কে, তেমনি আবার এর সঙ্গে আরও থাকে আমাদের অর্জিত স্বাধীনতার পূর্ণাঙ্গতা বা অপূর্ণাঙ্গতা সম্পর্কে।

স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই আসে সে সংগ্রাম শুরুর পটভূমির কথা। কিন্তু তারও আগে অনিবার্যভাবে এসে পড়ে স্বাধীনতা হারানোর কথা। ইতিহাসের কোন্ পটভূমিতে কীভাবে কী কী কারণে আমরা স্বাধীনতা হারিয়েছিলাম তা না জানতে পারলে স্বাধীনতা বা স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস অধ্যয়ন অর্থবহ ও সার্থক হয়ে উঠতে পারবে না। পলাশী বিপর্যয়ের মাধ্যমেই যে আমরা আমাদের স্বাধীনতা নামক জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হারিয়েছি এ কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু কাদের কারণে সেদিন আমাদের জাতীয় জীবনের এ মহাবিপর্যয় নেমে আসে তার সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস হয়তো আমাদের অনেকেরই জানা নেই। আমরা শুধু এটুকুই জানি যে, পলাশীর যুদ্ধে ১৭৫৭ সালে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদৌলার প্রধান সেনাপতি মীরজাফর আলী খান এবং অন্য কতিপয় আমত্যের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়বরণের মধ্য দিয়ে এদেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তথা ইংরেজদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়, আর আমরা জাতি হিসেবে হয়ে পড়ি পরাধীন। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হওয়ায় আমরা ইংরেজদের কাছে সেদিন স্বাধীনতা হারিয়েছিলাম, এটা আমরা জানি। কিন্তু এর পেছনে মীরজাফরের সহযোগী হিসেবে আর কার কার কী ভূমিকা ছিল, তার কতটা আমরা জানি? এতদিন যাই প্রচার করা হোক এখন তো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, ক্রুসেডের ঐতিহ্যবাহী ইংরেজদের ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাণিজ্যের নামে এদেশে এসে প্রথমেই যোগাযোগ স্থাপন করে মুসলিমবিদ্বেষী মারাঠা এবং বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার দরবারের রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, রায়দুর্লভ ও উমিচাঁদ প্রমুখ অমুসলিম অমাত্যদের সঙ্গে।

আমরা একটু আগে যে ‘ক্রুসেড’ শব্দ ব্যবহার করেছি তার একটা ব্যাখ্যা দরকার। ক্রুসেড কি? এক কথায়, ক্রুসেড অর্থ ধর্মযুদ্ধ। তবে ইতিহাসে ১০৯৫ সাল থেকে ১২৭১ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিন থেকে মুসলমানদের বহিষ্কৃত করতে খ্রিস্টানরা বারবার যে যুদ্ধ চালায়, তা-ই ক্রুসেড নামে খ্যাত হয়ে আছে। প্রধানত ইউরোপ থেকেই এই যুদ্ধ চালনা করা হয় এবং এতে ইংরেজদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ক্রুসেডাররা তখন তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে না পারলেও পরবর্তীকালে ইউরোপীয় তথা পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ অন্যতম প্রধান লক্ষ্যই হয়ে দাঁড়ায় ছলে-বলে-কৌশলে মুসলিম বিশ্বের স্বাধীনতাকে দুর্বল ও ধ্বংস করে দেয়া। শুধু পলাশীর বিপর্যয়ের মাধ্যমেই সাম্রাজ্যবাদ তাদের মুসলিমবিরোধী ক্রুসেডীয় ঐতিহ্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়নি, সারা বিশ্বব্যাপী তাদের সে লক্ষ্য আজও সক্রিয় রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের কথা লিখতে হলে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের সত্য-সঠিক কথা লিখতে হবে, কিন্তু আমাদের দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দৃষ্টিভঙ্গি মুক্তিযুদ্ধের জয়যাত্রার পক্ষে নয়। আমরা বাঙালিরা অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধ করেছি একটি স্বাধীন-সার্বভৌম অসাম্প্রদায়িক শোষণহীন সমাজব্যবস্থার জন্য। বাংলার ও বাঙালি জাতির স্বাধীনতার এবং জাতির মুক্তির এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য দুরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন নির্ভীক ও প্রকৃত দেশপ্রেমিক নেতার দরকার এবং অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে, যার দায়িত্ব নিয়েছিলেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই। পৃথিবীর যতগুলো দেশ স্বাধীন হয়েছে সেগুলোর প্রতিটিরই নেতৃত্বে ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক অবিসংবাদিত নেতা।

তেমনি বাঙালি জাতির একমাত্র অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ৭ই মার্চের ভাষণে বলেছিলেন: "আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি, তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়েই শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। তিনি এমনও বললেন- আজ থেকে এই বাংলাদেশে কোর্ট, কাচারি, আদালত, ফৌজদারী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সেক্রেটারিয়েট সবকিছু অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।" ঠিক তাই হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :