পূর্তমন্ত্রীর দুই কিসিমের বয়ান!

আলম রায়হান
 | প্রকাশিত : ৩০ মার্চ ২০১৯, ১১:৩০

জীবনের প্রথম এমপি ও মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম দুই কিসিমের বক্তব্য দিয়েছেন। গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী রাজধানীর এফ আর টাওয়ারে ২৮ মার্চ আগুনের ঘটনাকে দুর্ঘটনা না বলে হত্যাকাণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সঙ্গত কারণেই তার এ বক্তব্য খুবই গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করা হয়েছে সকল গণমাধ্যমে। এ সময় মন্ত্রী আইনজীবী হিসেবে তার মূল পরিচয়ও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন অনেকটা উত্তপ্তভাবে।

তার বক্তব্য এখানেই শেষ হয়নি। একইদিন একাত্তর টিভিতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের দায়দায়িত্ব স্পষ্টভাবে নাকচ করে দিয়েছেন গৃহায়ণমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। মন্ত্রীর দুই রকম বক্তব্য দেশের মানুষের সঙ্গে আমিও শুনেছি। এবং অবাক হয়ে ভেবেছি, এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়াধীন গণপূর্ত অধিদপ্তরের দায়িত্ব এড়িয়ে যাবার জন্য দুই রকম বক্তব্য দেয়ার অনুশীলনে নেমে পড়লেন শ ম রেজাউল করিম! নাকি তিনি এখনো টেলিভিশন টকশো মুডে আছেন!

রাজধানীর এফ আর টাওয়ার ভবনের আগুনের ঘটনায় হত্যাকাণ্ড হিসেবেই দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা হবে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘ভবন নির্মাণে ত্রুটি ও অনুমোদনহীন নকশার জন্য দায়ী যেই হোন না কেন তাকে তদন্তের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা হবে।’ এ সময় তিনি অন্য মন্ত্রীদের ধারা অনুসরণ করে বলেছেন, ‘‘এটা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ।’ সম্প্রতিক সময় মন্ত্রী এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি প্রবণতা চরমে পৌঁছে। তা হচ্ছে, প্রতিটি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রসঙ্গ টেনে আনা। তা বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা হোক বা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাই হোক। সাম্প্রতিক এই প্রবণতার ফলে প্রধানমন্ত্রী খুশি হন কি না, তা বলা কঠিন। তবে জনমনে প্রশ্ন ক্রমশ বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে, সব কিছুই প্রধানমন্ত্রীকে করতে হলে এতো মন্ত্রী-সচিব-কর্মকর্তা থাকার দরকারটা কি?

গৃহায়ণমন্ত্রী বলেন, ‘যেসব অবৈধ ভবন রয়েছে সেগুলো ভেঙে ফেলা হবে। এসব ভবন নির্মাণের সঙ্গে রাজউকের যেসব কর্মকর্তা জড়িত আছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভবন অনুমোদনের সময় রাজউকের সেই সময়ের চেয়ারম্যানসহ সংস্থার সংশ্লিষ্টদের খোঁজা হচ্ছে। তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে। আগুনের ঘটনায় ফৌজদারিসহ তদন্তের আলোকে যে ধরনের মামলা দেওয়া যায় সেই ধরনে মামলা হবে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শ ম রেজাউল করিমের এ বক্তব্যে অনেক আশার আলো আছে। তিনি জনপ্রত্যাশর সমান্তরালেই কথা বলেছেন। এজন্য তিনি ধন্যবাদ পেতেই পারেন। মূলত একজন আইনজীবী হয়েও এখনই তিনি কিভাবে বললেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ড? তার এ বক্তব্যে চলমান তদন্ত এবং আগামী বিচার প্রভাবিত হবার আশঙ্কা থাকে না? আর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগকে মননীয় মন্ত্রী কি এক ধরণের দায়মুক্তি দেবার চেষ্টা করেছেন? কিন্তু তার বিবেচনায় রাখা উচিত, নিজ মন্ত্রণালয়ের অধীন কাউকে দায়মুক্তি দেবার চেষ্টা করে অখেরে মন্ত্রী সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ ছাড়া মন্ত্রী হিসেবে নিজের অবস্থান অনুধাবন করার জন্য শ ম রেজাউল করিমের উচিত সাবেক মন্ত্রী মো. নাসিমের একটি বক্তব্য বিবেচনায় নেয়া। মো. নাসিম বলেছেন, ‘রাজউকের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তারা বিএনপি-জামায়াতের চেয়েও ভয়ংকর।’

পাখির দুই পাখার মতো শ ম রেজাউল করিমের মন্ত্রণালয়ের প্রধানত দুই সংস্থা হচ্ছে রাজউক এবং গণপূর্ত অধিদপ্তর। এ দুই সংস্থার অবস্থা খুবই প্রশ্নবিদ্ধ। পাখির ডানার এ অবস্থা হলে বনে তো দূরের কথা, খাঁচায়ও স্থান হতো না। এমনকি কেউ জবাই করে খেয়ে ফেলার কথাও ভাবতেন হয়তো। কিন্তু সরকারি সংস্থাতো আসলে পাখি নয়, বরং অনেকের কাছে সোনার ডিমপাড়া রাজহংস! তা না হলে হয়তো এতোদিন রাজউক ও গণপূর্ত অধিদপ্তর টিকে থাকতো না। এ বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে মন্ত্রী রেজাউল করিমের কম কথা বলা বেহেতের। বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন, এখন পর্যন্ত তার কোনো উল্লেখযোগ্য কাজ দেশবাসীর কাছে দৃশ্যমান নয়। কাজেই টেলিভিশনের টকশোর টেবিলের আবেশে না থেকে নতুন মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের উচিত সঠিকভাবে কাজে মনোনিবেশ করা।

আলম রায়হান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :