বই সংগ্রহ করে পুরস্কৃত

শেখ সাইফ, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ৩১ মার্চ ২০১৯, ১৫:৫৬

বই মানুষের পরম বন্ধু। সময়ের অনেক সম্পর্কের বদল ঘটলেও বই রয়ে যায় আপনজনের মতোই। বইকে ভালোবেসে, বই পড়াকে ভালোবেসে আজীবন সঙ্গে করে জীবনটা পার করে দেয় কেউ কেউ। আমাদের মাঝে এমনই নিভৃতচারী কয়েকজন বইয়ের আলোই আলোকিত হয়েছেন। আমাদের আলোকিত করে রেখেছেন বইয়ের জ্ঞান বিলিয়ে। যারা জীবনে সঞ্চয়ের অধিকাংশ অর্থই ব্যয় করেছেন বই কিনে, বই সংগ্রহ করে। এমনই কয়েকজন গ্রন্থসংগ্রাহককে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করেছে ‘ঢাকা কেন্দ্র’।

৩০ মার্চ ঢাকা কেন্দ্রের বিলকিস বানু স্মৃতি মিলনায়তনে ১০ জন আপন আলোয় আলোকিত গ্রন্থসংগ্রাহককে সম্মানিত করা হয়। তাদেরকে ‘ঢাকা কেন্দ্র’ গ্রন্থসংগ্রাহক আজীবন সম্মাননা পুরস্কার ২০১৯ প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক মাহফুজা খানম ও ঢাকা কেন্দ্রের পরিচালক মোহাম্মদ আজিম বখশ সম্মানিত গ্রন্থসংগ্রাহকদের ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন।

আজীবন সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেনÑ প্রকৌশলী মো. শাহজাহান গাজী, মোহাম্মদ ইসাহাক, মনোয়ার রফিকুল আলম, অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা মিয়া, অধ্যাপক মো. শাহজাহান মিয়া, লায়ন মো. মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া, অতিতাভ চক্রবর্তী, আপেল মাহমুদ, এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া ও আসমা জাহান।

অনুষ্ঠানে গ্রন্থসংগ্রাহকরা তাদের বই সংগ্রহের স্মৃতিচারণ করেন। কেউ স্কুলে পড়ার সময় খাবারের টাকা বাঁচিয়ে বই কিনেছেন। কেউবা আবার একবেলা না খেয়ে সেই টাকা দিয়ে নিজের পছন্দের বইটি কিনেছেন। পোশাক কেনার টাকা, উপহারের টাকা খরচ না করে সেই টাকায় কেউ কেউ বই কিনেছেন ছোটবেলায়।

এভাবেই একটু একটু করে গড়ে তুলেছেন বিশাল বইয়ের সংগ্রহ। কারো কারো সংগ্রহে ৪ থেকে ৬ হাজারের মতো বই আছে।

সংগ্রাহকদের অনেকের এই বিশাল বইয়ের ভান্ডার নিয়ে আছে শঙ্কাও। তাদের যোগ্য উত্তরসূরি করে যেতে পারেননি। তাদের মৃত্যুর পর এই বইয়ের যথাযথ ব্যবস্থাপনা, রক্ষণাবেক্ষণ হবে কি না সেটা নিয়ে তাদের ভেতর উদ্বেগ কাজ করছে।

অনেকে তাদের জীবনের সংগ্রহে থাকা বই দিয়ে জাদুঘর গ্রন্থাগার, পাঠাগার ও লাইব্রেরি গড়ে তুলেছেন। সেখানে লেখক, কবি-সাহিত্যিকের প্রথম প্রকাশিত বই যেমন আছে তেমনি আছে সব সমালোচনা সমগ্র, রচনা সমগ্রসহ দুর্লভ ও দুষ্প্রাপ্য বই।

কোনো সংগ্রাহক আবার লাইব্রেরির তত্ত্বাবধানে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বাংলাদেশের যত লাইব্রেরি আছে সেখানে দুই ব্যক্তিকে এমপিওর আওতাভুক্ত করার কথা বলেন। তাহলে লাইব্রেরিগুলোর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব হবে।

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক মাহফুজা খানম বলেন, ‘এখন সবাই অর্থের পেছনে ছুটছে। আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে যে মূল্যবোধ নিয়ে অংশগ্রহণ করেছিলাম তা থেকে বিচ্যুতি হয়েছি। আমাদের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ধরে রাখার, সংগ্রহ করার কাজ করে যাচ্ছেন ঢাকা কেন্দ্র ও আজিম বখশ। গ্রন্থসংগ্রাহকের সম্মাননা দেওয়া বাংলাদেশে এটিই প্রথম, যা ঢাকা কেন্দ্র করলো। এটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

স্মৃতিচারণে মাহফুজা খানম বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমাদের বাড়িতে বিশাল বইয়ের সংগ্রহ পুড়িয়ে ফেলতে হয়। তখন দুই ভাইকে ধরে নিয়ে যায়। সেসব স্মৃতি কখনো ভোলার নয়। আজকের ছেলেমেয়েরা লাইব্রেরি ওয়ার্ক করে না। তাদের সেই সুযোগ দেওয়া হয় না। গাদাখানেক পাঠ্যবই ও টিচারদের পেছনে সময় ব্যয় করতে করতেই সময় চলে যায়। আমাদের লাইব্রেরি ওয়ার্কের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। স্কুলে লাইব্রেরি ওয়ার্ক বাধ্যতামূলক করতে হবে।’

ঢাকা কেন্দ্রের পরিচালক মোহাম্মদ আজিম বখ্শ বলেন, ‘আমার বাবা আজীবন মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। আমার মা সেই কাজের হাল ধরছেন। এখন আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা খুব কমমূল্যে, বলতে গেলে বিনামূল্যে চক্ষুসেবা দান করার জন্য চক্ষু হাসপাতাল গড়ে তুলেছি। এখানে উন্নত চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।’

পরিচালক আরো বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা পুরোনো সংস্কৃতি ধরে রাখা। ঢাকার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিÑ এই তিনটি বিষয় ধরে রাখতে চাই। নতুন প্রজন্মের কাছে আমরা দায়বদ্ধ। এছাড়া আমরা মুনতাসির মামুনের গ্রন্থ নিয়ে একটি কর্ণার করার কাজ করছি।’

বই সংগ্রাহক মনোয়ার রফিকুল আলম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় প্রতি মাসে আমাকে ১১০ টাকা দেওয়া হতো। সেসময় চার আনায় ডিম-ভাজি পাওয়া যেত, আমি সেটি না খেয়ে সেই টাকা দিয়ে বই কিনতাম।’

অনুষ্ঠানে ঢাকা কেন্দ্র গ্রন্থসংগ্রাহক আজীবন সম্মাননা স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এছাড়া সংগ্রাহকদের কেউ কেউ মূল্যবান শত বছরের পুরোনো খাবার পাত্রসহ বই ও মূল্যবান তথ্যের নথিপত্র ঢাকা কেন্দ্রে প্রদান করেন।

(ঢাকাটাইমস/৩১মার্চ/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :