জবিতে আবদুল হাই মাশরেকীকে স্মরণ
শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় স্মৃতিচারণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ে গীতিকবি আবদুল হাই মাশরেকীর জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করা হয়েছে।
সোমবার দুপুর ১২টায় গন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
কবি আবদুল হাই মাশরেকীর বিখ্যাত গান ‘আমায় এত রাতে ক্যানে ডাক দিলি’, ‘আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে’ সহ বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় গান পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু হয়।
সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে বাঙালি জাতি অনেক সমৃদ্ধশালী। আর বাংলাদেশের অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবং এর চর্চায় বদ্ধপরিকর। সাহিত্যে বাঙালি জাতির যতগুলো অনুষঙ্গ রয়েছে সবগুলো নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তবেই আমাদের সাহিত্য আরো সমৃদ্ধশালী হবে।’
উপাচার্য বলেন, গীতিকবি আবদুল হাই মাশরেকীর জীবনী ও কর্মের ওপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী উচ্চতর গবেষণা (এম.ফিল) করতে আগ্রহী হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বৃত্তি প্রদান করা হবে। এছাড়াও কবি পরিবারের সদস্যদের সম্মতিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবদুল হাই মাশরেকীর অপ্রকাশিত সাহিত্য কর্ম প্রকাশের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আলোচকের বক্তব্যে ভারতের কবি সৈয়দ হাসমত জালাল বলেন, “আবদুল হাই মাশরেকীকে অনেক ক্ষেত্রে খ-িতভাবে উপস্থাপন করা হয়। তিনি ছিলেন সামগ্রকিভাবে বাঙালি জাতির কবি ও সাহিত্যিক। যুগে যুগে সমাজের চরিত্র বদলায়, সেই সাথে সাহিত্যে বাঁক বা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। আর সময়ের বন্ধনে আবদ্ধ না থেকে সৃজনশীলতায় প্রতিফলন ঘটান যিনি তিনিই আধুনিক কবি। মাশরেকীর রচিত গান, কবিতা সময়ের বন্ধনে আবদ্ধ নয়। তার রচিত গান ও কবিতা আজও লোক মুখে প্রচলিত। তিনি শুধু লোক কবিই ছিলেন না, গ্রাম বাংলার জীবনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তার কর্ম এখনও মানুষের মাঝে জীবন্ত। তাই তিনি আধুনিক কবি।”
শিল্পী শংকর সাওজাল বলেন, “রাষ্ট্রীয়ভাবে কবির স্বীকৃতি তুলে ধরতে হবে। কালের পরিক্রমায় যে সকল বাঙালি কবি-সাহিত্যকদের শিল্পকর্ম হারিয়ে যাচ্ছে এ ধরনের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাদের কর্মকে স্মরণ করতে হবে।”
আলোচনা সভায় বিশেষ কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সেলিম ভূঁইয়া বলেন, আবদুল হাই মাশরেকী মূলত এদেশের সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্খার রূপকার ও কৃষক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী কবি। অনেক বিখ্যাত লোকগীতি, পুঁথি ও অন্যান্য সাহিত্য কর্মে তার পদচারণা ছিল। তার অনেক পা-ুলিপি এখনও অপ্রকাশিত এবং বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, বাংলায় এ ধরনের গুণী কবির সাহিত্য কর্মের প্রকাশ, সংরক্ষণ ও চর্চার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
এছাড়াও কবি আবদুল হাই মাশরেকীর সন্তান শামীম মাশরেকী ও নঈম মাশরেকী এবং কবি আবদুল হাই মাশরেকী পরিষদের সভাপতি কবি মাহবুব আলম বক্তব্য প্রদান করেন।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক ও সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কমিটির সদস্য-সচিব ও সংগীত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান।
উল্লেখ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবি আবদুল হাই মাশরেকীর রচিত ঐতিহ্যবাহী গীতিকবিতা অবলম্বনে গান, নৃত্য ও পুঁথির অবলম্বনে নাটিকা পরিবেশিত হয়। গান, নৃত্য ও নাটিকায় পরিবেশনে অংশগ্রহণ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত ও নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দ। এ সময় বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী নাজমা আক্তার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বিভাগের চেয়ারম্যান, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
(ঢাকাটাইমস/১এপ্রিল/আইএইচ/ইএস)