দুধ চাওয়ায় শিশুকে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা

মাদারীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০১৯, ১৯:৪০ | প্রকাশিত : ০১ এপ্রিল ২০১৯, ১৯:১৮

এক গ্লাস দুধ খেতে চাওয়ায় ১০ বছরের শিশুর গায়ের বিভিন্ন স্থানে গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দেয় তার সৎমা ও নানি। এ ঘটনায় রবিবার রাতে সৎমা ও সৎভাইকে আটক করেছে পুলিশ।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সেতু আক্তার (১০) নামের শিশুটির সারা শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন। হাত, পা, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষত। শরীরের কয়েকটি স্থানে ঘা হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে তার ওপর চলে আসছে নির্যাতন। কিন্তু আশ্রয় হারানোর ভয়ে বাবাকে কিছুই বলত না সে।

স্থানীয় এক মানবাধিকারকর্মী ও পুলিশের সহযোগিতায় শিশুটি এখন রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কবিরাজপুর ইউনিয়নের পান্থাপাড়া গ্রামের রিয়াজ শিকদারের মেয়ে সেতু কালামৃধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবা রিয়াজ শিকদার ঢাকায় ভাঙ্গারীর ব্যবসা করেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় ৯ বছর আগে মারা যান সেতুর মা রেহানা বেগম। তিনি জীবিত থাকতেই তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বিয়ের পরে সৎমা সাবিনা বেগম কোনোভাবেই সেতুকে মেনে নিতে পারছিলেন না। অনেকবার সেতুকে চলে যেতে বলে এমনকি মারধর করতে থাকে। গত এক বছর ধরে সৎনানির প্ররোচনায় সেতুর ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়।

গত ২৪ মার্চ সেতু এক গ্লাস দুধ খেতে চাওয়ায় সৎমা ও নানি মিলে গরম খুন্তি দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দেয়। যন্ত্রণায় সেতু চিৎকার করলে আরো বেশি কষ্ট দেয় তাকে।

সেতুর ওপর নির্যাতনের বিষয়টি জানতে পারেন স্থানীয় মানবাধিকারকর্মী মমতা খাতুন। তিনি সেতুকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেন এবং বিষয়টি পুলিশকে জানান। পরে পুলিশ সেতুর বাড়িতে গিয়ে তার সৎভাই ছাব্বির (১৪) ও সৎমা সাবিনা বেগমকে (৪০) আটক করে থানা নিয়ে যায়। সেতুকে উদ্ধার করে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

চিকিৎসাধীন সেতু জানায়, সৎনানির প্ররোচনায় সৎমা কারণে-অকারণে গরম খুন্তি দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দিত। বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়ার ভয়ে সে কাউকে কিছু বলত না, সবকিছু মুখ বুঝে সহ্য করত।

মানবাধিকার কর্মী মমতা খাতুন বলেন, ‘আমি লোকজনের মুখে সেতুর কথা শুনে ওর বাড়িতে গিয়ে ওর সৎমাকে বোঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তিনি অবুঝের মতো। পরে আমি শিশুর তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করি ও পুলিশকে বিষয়টি খুলে বলি।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার মন্ডল বলেন, ‘শিশুটির শরীরের ৫টি স্থানে গরম লোহা দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার ঘারে, হাতে ও পায়ে ক্ষত রয়েছে। আমরা শিশুটির যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করেছি। আশা করছি শিশুটি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।’

রাজৈর থানার উপপরিদর্শক খান মো. জোবায়ের বলেন, ‘২৪ মার্চ রাতে শিশুটির সৎমা ও সৎনানী শারীরিক নির্যাতন করে শিশুটিকে। আমরা শনিবার রাতে ওই খবর পাই। পরে রবিবার সকালে শিশুটির বাড়ি গিয়ে তাকে উদ্ধার করি। ওই দিন রাতে শিশুটির সৎমা ও সৎভাইকে আটক করি। তবে শিশুটির নানীকে পাওয়া যায়নি, তিনি পলাতক। এ বিষয় থানায় মামলা করা হয়েছে।’

রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহানা নাসরিন বলেন, ‘মেয়েটিকে এখন চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। মেয়েটি যদি চায় তবে আমরা তার পুনর্বাসনের যাবতীয় ব্যবস্থা নেব।’

(ঢাকাটাইমস/১এপ্রিল/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :