পঞ্চগড়ে বারুণী স্নান উৎসব শুরু

পঞ্চগড় প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০২ এপ্রিল ২০১৯, ১৯:১৯

পঞ্চগড়ের করতোয়া নদীর উত্তরমুখী স্রোতে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী বারুণী স্নান উৎসব। মঙ্গলবার সকাল থেকে বোদা উপজেলার করতোয়া নদীতে তিন দিনব্যাপী স্নানোৎসব উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী বারুণী মেলার আয়োজন করা হয়।

স্থানীয় প্রশাসন ও মন্দির কমিটির আয়োজনে স্নান উৎসবে মঙ্গলবার ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ স্নানোৎসবে যোগ দিতে জড়ো হন বোয়ালিমারী বারুণী স্নান ঘাটে। হাজার হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্ত ও সাধু সন্ন্যাসীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে করতোয়া তীর।

আয়োজক সূত্র জানায়, ‘সনাতন ধর্ম মতে বছরের চৈত্রের মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী তিথিতে বরুণ দেবের কন্যা বারুণী দেবী মর্তমানে আগমন করেন। এই তিথি থেকে শুরু করে তিন দিন পর্যন্ত নদীর উত্তরমুখী স্রোতে স্নান করলে পাপ মোচন হয়। তাই ভক্তরা দেহ এবং মনকে পরিশুদ্ধ ও পবিত্র করতে স্নানঘাটে এসে মাথার চুল বিসর্জন দেয়। দিনভার পূজা অর্চনা করে। স্নানমন্ত্র পাঠ করে হাতে বেল পাতা, ফুল, ধান, দূর্বাঘাস, হরিতকি, কাঁচা আম, ডাব, কলা ইত্যাদি অর্পনের মাধ্যমে স্নান সম্পন্ন করে। এছাড়া দেবতাদের সন্তুষ্টি ও পিতা-মাতার স্বর্গবাসে এই স্নান জরুরি বলে মনে করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।

যুগযুগ ধরে বোদা উপজেলার বোয়ালিমারী এলাকার করতোয়া নদীর এই বারুণী স্নানঘাটে স্নানোৎসব পালন করে আসছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। স্নানোৎসব উপলক্ষে প্রশাসন ও স্থানীয় মন্দির কমিটি তিন দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করেছে। মেলায় কারুপণ্য, মৃৎশিল্প ও বাহারি খাবারের দোকানসহ বিভিন্ন জিনিসের পসরা বসে। এসবের পাশাপাশি এবার বিনোদনের জন্য সার্কাস, মোটরসাইকেল খেলা, নাগরদোলাসহ রয়েছে নানা আয়োজন।

দিনাজপুরের বিরামপুর থেকে আসা শরৎ চন্দ্র বলেন, ‘স্নান উৎসবে যোগ দেয়ার ইচ্ছে বহুদিনের। কিন্তু সুযোগ হয়ে ওঠে না। এবার সুযোগ পেলাম তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে স্নান করতে এসেছি। এখানে স্নানের মাধ্যমে আমাদের ধর্মীয় আচার পালন করব। এর মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তা আমাদের পাপ মোচন করে দেবেন বলে আমরা আশা করি।’

ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর এলাকা থেকে আসা নবীন চন্দ্ররায় বলেন, ‘আমার সাথে মা এবং দুই ভাই এসেছে। ধর্মীয় আচার অনুসারে স্নানমন্ত্র পাঠ করে স্নানের পর আমাদের শাস্ত্রীয় দৈব তর্পন, মনুষ্য তর্পন, ঋষী তর্পন ও পিতৃ তর্পন করতে হয়। দৈব্য তর্পনের ফলে দেবতারা প্রসন্ন হয়, মনুষ্য ও ঋষী তর্পনের জন্য আদি মহামানবের শাস্তি হয়।’

বোয়ালমারী বারুণী গঙ্গা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক হরিমোহন রায় বলেন, ‘প্রতি বছর এই স্নান উৎসবে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হয়। এটি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। স্নানোৎসবকে ঘিরে পুলিশ ও আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া মেলায় বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। আশা করি শান্তিপূর্ণ ও সুন্দরভাবে সবাই তাদের স্নান সম্পন্ন করবে।’

কাজলদিঘি কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আলাল বলেন, ‘করতোয়া নদীর বারুণী স্নানঘাট সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র স্থান। সনাতন ধর্মালম্বীরা যাতে নির্বিঘ্নে তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে পারে সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয়রাও সহযোগিতা করছেন।’

(ঢাকাটাইমস/২এপ্রিল/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :