এসএম হলে সেমন্তী ইস্যু
ছাত্রলীগের ‘প্রশ্ন’, দোষ দেখছেন না প্রাধ্যক্ষরা
এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের প্রাধ্যক্ষের কাছে অভিযোগপত্র দিতে যান ডাকসু ভিপি নুরুল হক নূর। তার সঙ্গে থাকা অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর মধ্যে ছিল ডাকসুতে পরাজিত ভিপি প্রার্থী অরণি সেমন্তী খান। তিনি ছাত্রী হয়ে কেন ছাত্রদের হলে গেলেন সেই প্রশ্ন তুলেছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তবে এতে সেমন্তীর কোনও দোষ দেখছেন না একাধিক হল প্রাধ্যক্ষ। আর সাধারণ শিক্ষার্থীরা এটা নিয়ে কথা বলাই বাড়াবাড়ি মনে করছেন।
এসএম হলের আবাসিক ও উর্দু বিভাগের স্নাতত্তোরের শিক্ষার্থী ফরিদ হাসানের ওপর ‘হামলার’ ঘটনায় অভিযোগপত্র জমা দিতে মঙ্গলবার বিকালে হলের প্রাধ্যক্ষ অফিসে যান ডাকসুর ভিপি নুর। তার সঙ্গে ছিলেন স্নাতত্তোরের শিক্ষার্থী অরনি সেমন্তী খান। আর এজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে সেমন্তির সমালোচনা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ছাত্রলীগ নেতারা ফেসবুক লিখেন, ‘একজন ছাত্রী (তাও কোনও ছাত্র প্রতিনিধি না হয়ে) হল প্রশাসন কিংবা হল সংসদের অনুমতি না নিয়ে কি কারনে বা কেন ছেলেদের হলে ঢুকবে? তাদের উদ্দেশ্য ছিলো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়ে বরাবরের মতো নাটক মঞ্চস্থ করা।’
যদিও খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ডাকসু ভিপি নূর ও অন্যা শিক্ষার্থীরা এসএম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহাবুবুল আলম জোর্য়াদারের অফিসে গিয়েছিলেন পূর্বানূমতি নিয়েই।
ঢাকাটাইমসের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী (ছেলে-মেয়ে উভয়েই) তার যে কোনও প্রয়োজনে যে কোনও সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনও হল প্রাধ্যক্ষ অফিস পর্যন্ত যেতে পারবেন। তার জন্য কোনও পূর্বানুমতির প্রয়োজন নেই। তাছাড়া এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্পষ্ট কোনও নিয়মনীতি নেই।
তবে শিক্ষার্থী যদি নিদিষ্ট কোনও কাজে হল প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করতে চান, সেক্ষেত্রে প্রাধ্যক্ষের পূর্বানুমতির প্রয়োজন পড়ে। বুধবার এ প্রতিবেদকের কাছে বিষয়টি সুস্পষ্ট করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক হল প্রাধ্যক্ষ।
বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ শফিউল আলম ভূইয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘অবশ্যই পারবে। সাধারণরত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের হলগুলোতে মেয়েদের প্রবেশ আর মেয়েদের হলে ছেলেদের প্রবেশের ক্ষেত্রে এক ধরনের অনুমতি নেওয়ার বিষয় আছে। অনুমতিটা নিলে ভাল। তবে চাইলেই একজন শিক্ষার্থী প্রাধ্যক্ষের কাছে যেতে পারেন।’
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ জানানোর জন্য যেতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যা । অবশ্যই। সেটা তো পারবেই’।
একজন মেয়ে শিক্ষার্থী হলের প্রাধ্যক্ষ অফিস পর্যন্ত যেতে পারেন কিনা জানতে চাইলে স্যার এএফ রহমান হলের সাবেক প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আফতাব বলেন, ‘হলের প্রাধ্যক্ষ অফিস পযন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনও শিক্ষার্থী যে কোনও সময় যেতে পারেন।’
এই বিষয়ে কোনও ধরাবাঁধা নিয়ম আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যে কোনও সময় যে কোনও শিক্ষকের কাছে রিচ (পৌঁছাতে) করতে পারে। সেটা বিভিন্ন প্রয়োজনে হতে পারে যেমন লেখাপড়ার প্রয়োজনে বা অন্য প্রয়োজনে। এটা তার অধিকার। আর এই বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনও নিয়মনীতি নেই’।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘এমনিতেই ছেলেদের হলের গেস্টরুম পর্যন্ত সহপাঠীদের সঙ্গে ছাত্রীদের দেখা যায়। সেক্ষেত্রে কখনো কেউ প্রশ্ন তোলে না। আর এখন একটা মেয়ে কেন হলে ঢুকল- সে প্রশ্ন তোলাটাই বাড়াবাড়ি।’
সেমন্তীর এসএম হলে যাওয়াতে সমস্যা দেখছেন না জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অসীম কুমার সরকার। এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘অনুমতি নিয়ে যে কোনও শিক্ষার্থী হলের প্রাধ্যক্ষের কাছে যেতে পারেন। এতে কোনও সমস্যা নেই।’
একজন ছাত্রী ছেলেদের হলে আসতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আসতে পারে। কাজ থাকলে অনুমতি নিয়ে আমার কাছে আসতেই পারে।’
ঢাকাটাইমস/০৩এপ্রিল/ডিএম