রক্ত দিয়ে লিখে ববি ভিসির পদত্যাগ চাইলেন শিক্ষার্থীরা

ব্যুরো প্রধান, বরিশাল
 | প্রকাশিত : ০৩ এপ্রিল ২০১৯, ১৯:৫৮

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের নবম দিন আজ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা তাদের রক্ত দিয়ে দেয়ালে ভিসির প্রত্যাহারের দাবি লিখে প্রতিবাদ করেছেন। এসময় আন্দোলনরতরা ভিসিবিরোধী নানা স্লোগান দেন।

অপরদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের জিএস গোলাম রাব্বানী। তিনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগের দাবির আন্দোলনের পক্ষে একমত প্রকাশ করে শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক বলে উল্লেখ করেন।

গোলাম রাব্বানী তার ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমর্থন জানিয়ে মঙ্গলবার রাতে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লিখেছেন- ‘শিক্ষার্থীদের সকল নৈতিক ও যৌক্তিক দাবি প্রতি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির প্রতিও একাত্মতা প্রকাশ করছি।’

এদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিলেও পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্তে অনড় থেকে উপাচার্য প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হক বলেন, ‘একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কারোর কথায় পদত্যাগ করব না।’

ভিসি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আল্টিমেটাম দিতেই পারে। তাতে আমার কিছু আসে যায় না। আমাকে প্রধানমন্ত্রী এই দায়িত্ব দিয়েছেন, তাই যদি প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করতে বলেন- তবেই আমি পদত্যাগ করব। আর নয়তো কোন আন্দোলনই আমাকে আমার দায়িত্ব থেকে সরাতে পারবে না।’

উপাচার্য অভিযোগ করেন, ‘আমি শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি। তারপরেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কোন কারণ দেখছি না। তাদের দিয়ে একটি গোষ্ঠী বা চক্র আন্দোলন করাচ্ছে। তাদের আন্দোলনে অর্থের যোগান দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের দিয়ে আন্দোলন করিয়ে ওই গোষ্ঠী ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। তাই ওই চক্রটিকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে লেখার জন্যও সাংবাদিকদের কাছে আহবান করেন।’

ভিসির পদত্যাগের দাবিতে ববি শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের অষ্টম দিনে মঙ্গলবার রাতে ভিসি বরিশালবাসীর প্রতি উদাত্ত আহবান রেখে ববির চলমান পরিস্থিতি নিরসনে সার্বিক সহযোগিতা কামনা করে বিবৃতি দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে উপাচার্য ড. ইমামুল হক নতুন করে দ্বিতীয়বারের মতো এ বিবৃতি দিয়েছেন। যেখানে তিনি বলেছেন, ‘গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির অনুষ্ঠানে আমার বক্তব্যের মধ্যে অনুক্ত একটি শব্দ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। এটির সুযোগ নিয়ে একটি স্বার্থান্বেসী মহল বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করে তোলার প্রয়াস নিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতার শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ বিশ্ববিদ্যালয় সার্বিক নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়। উদ্ভুত পরিস্থিতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিশেষ করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হই। এ সিদ্ধান্তটি নিতে আমার অনেক মানসিক কষ্ট হয়েছে। কারণ আমি নিজেও একজন শিক্ষক, শিক্ষাকার্যক্রম চালু রাখাই আমার কাজ। একই কারণে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছিল।’

ভিসি আরও উল্লেখ করেন, ‘পরবর্তীতে গত ২৯ মার্চ প্রেস রিলিজের মাধ্যমে আমার বক্তব্যের কারণে কেউ আহত হয়ে থাকলে তার জন্য আমি দুঃখপ্রকাশও করেছি। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী এখন পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার নামে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে রেখে শিক্ষাকার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করছে। এ অবস্থায় একাডেমিক কার্যক্রম চালু করাও সম্ভব হবে না। আমি আমার শিক্ষার্থীদের নিশ্চিত করতে চাই, অতিদ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম চালু হবে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষিণবাংলার গর্ব। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সার্বিক সহযোগিতা কাম্য।’

প্রসঙ্গত, শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের আনুষ্ঠানের আয়োজন করায় প্রতিবাদ করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উপাচার্য ড. এসএম ইমামুল হক এক আলোচনা সভায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বলে গালি দিয়েছেন বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন।

ভিসির এ মন্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ২৬ মার্চ বিকাল থেকেই আন্দোলন শুরু করেন। এরপর ২৮ মার্চ রাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেন। তবে হল ত্যাগের ঘোষণা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যান। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে উপাচার্য দুঃখ প্রকাশ করে বক্তব্য দেন। তার ওই বক্তব্যকে মিথ্যাচার বলে দাবি করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তাই গত ৩১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সকল হলের ডাইনিং বন্ধ করে দেন। সর্বশেষ ভিসির পদত্যাগ দাবি করে গত ১ এপ্রিল জেলা প্রশাসক কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন শিক্ষার্থীরা।

পরে উপস্থিত সাংবাদিকদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ভিসির পদত্যাগ চেয়ে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

(ঢাকাটাইমস/৩এপ্রিল/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :